৭০ বছরে পা রাখলেন রুনা লায়লা

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

বোন দীনা লায়লা ওস্তাদ আবদুল কাদের পিয়ারঙ ও ওস্তাদ হাবিব উদ্দিন আহমেদের কাছে গান শেখেন। অন্যদিকে ছোট বোন ঘুঙুর পায়ে সারা দিন নেচে বেড়ান। বড় বোন ওস্তাদজির কাছে যা যা শিখতেন, সেটা দূর থেকে শুনেই ছোট বোন শিখে ফেলতেন! একদিন ওস্তাদজি তার গান দূর থেকে শোনেন। শোনার পর মা আমিনা লায়লাকে ডেকে বললেন, তোমরা ওকে নাচ শেখাচ্ছ ঠিক আছে, কিন্তু ওর গানের গলাও চমৎকার। ওকে গান শেখাতেও পার। যার কথা বলছি তিনি হলেন সেদিনের ছোট্ট রুনা। কে জানত, সেই রুনাই আজ উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা। এরপর ওস্তাদজিরা বাড়িতে এলে বোনের পাশে গিয়ে রুনাও বসতেন। এভাবেই দিন যায়, মাস যায়। রুনার বয়স তখন ছয় আর দীনা লায়লার বয়স দশ বছর। এক অনুষ্ঠানে দীনা লায়লার গাওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ করে সেই মুহূর্তে ঠাণ্ডা লেগে জ্বর আসে বোনের। অনুষ্ঠানে দীনা আর গান গাইতে পারেননি। বিপাকে পড়ে যান আয়োজকরা। শেষ মুহূর্তে তারা শিল্পী পাবেন কোথায়? বাবা-মা আয়োজকদের বললেন, রুনাকে দিয়ে গান গাওয়াতে। তারা বলেন এইটুকু মেয়ে কী গাইবে? ও তো এখনো ঠিকমতো কথাই বলতে পারে না! মা নাছোড়বান্দা। তিনি বললেন, ‘না, না, ও ভালো গান করে। ওর ওস্তাদজিকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।’

অবশেষে সেই অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ হয়। মঞ্চে উঠে পরিবেশন করেন উচ্চাঙ্গ রাগ বাহার। ছোট্ট রুনার পরিবেশনায় বিস্মিত হয়ে যায় উপস্থিত সব দর্শকশ্রোতা। নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল। শুরু হলো কণ্ঠশিল্পী হয়ে ওঠার গল্প।

মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে যে শুরু হলো পথচলা। সেই পথচলা আর থামেনি। শিল্পী জীবনের ৬৪ বছরের অবিরাম পথচলা তার। আজ সত্তরে পা দিলেন রুনা লায়লা।

দিনটি তিনি তার পরিবারের সঙ্গেই উদযাপন করবেন বলে জানিয়েছেন। রুনা লায়লা জানান, আজ দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে অনন্যা রুমা প্রযোজিত বর্ণাঢ্য ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। এবারের অনুষ্ঠানটি বিশেষায়িত করে তোলার জন্য চ্যানেল আইও বেশ আয়োজন করেই দর্শকের সামনে তারকা কথন তুলে ধরার চেষ্টা করছে। একই অনুষ্ঠানে কোনাল, ঝিলিক, তরিক মৃধা ও মেজবাহ বাপ্পীর রুনা লায়লাকে নিয়ে গাওয়া একটি বিশেষ গান প্রচার হবে। হাসনাত করিম পিন্টুর কথায় গানটির সুর করেছেন মনোয়ার হোসেন টুটুল। এবারের জন্মদিন প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, ‘সত্যি বলতে কী এবারের জন্মদিনটি কেন যেন মনে হচ্ছে একটু বেশিই বিশেষ। অনেক আগে থেকেই এই দিনটিকে ঘিরে চলছে নানা আয়োজন। পারিবারিকভাবেও দিনটিকে উদযাপনের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমরা পরিবারের সদস্যরাই থাকছি। এছাড়া চ্যানেল আইতে থাকছে বিশেষ আয়োজন। তবে জীবনের এই বিশেষ দিনে বাবা মায়ের কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। বড় বোন দীনা আপার কথা মনে পড়ছে। হয়তো সবাই থাকলে জীবনের এই দিনটি আরও বিশেষ হতো। তারপরও যারা আছেন সবসময় পাশে তাদের নিয়েই ভালো থাকাটাও জরুরি। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি সুস্থ আছি। সবাই দোয়া করবেন যেন আগামীদিনেও আল্লাহ ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।’

রুনা লায়লার স্বামী আলমগীর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে নায়ক, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক। রুনা লায়লা প্রথমবারের মতো সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে। আর প্রথম গান সুর করেই তিনি সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন আঁখি আলমগীর। গানের কথা হচ্ছে ‘গল্পকথার ঐ কল্পলোকে জানি, একদিন চলে যাবো’। ২০১৫ সালে রুনা লায়লা তার সংগীত জীবনের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করেছেন। ১৯৭৭ সালে আব্দুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘জাদুর বাঁশি’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি একই সম্মাননায় ভূষিত হন ‘এক্সিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘তুমি আসবে বলে’, ‘দেবদাস’ ও ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করে। কয়েক বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রুনা লায়লা ‘ডিস্টিনগুইস সেলিব্রিটি লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। সংগীতে অসাধারণ অবদান এবং নিজের দেশের পাশাপাশি এশিয়া ও বিশ্বব্যাপী নারীদের সৃজনশীলতা উন্নয়নে দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য রুনা লায়লাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। রুনা লায়লার একমাত্র মেয়ে তানি লায়লা লন্ডনে থাকেন।

আগামী ১৯ নভেম্বর বিকালে রুনা লায়লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্টারপ্লাস কমিউনিকেশন আয়োজিত অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রদান করবেন।

রুনা লায়লার অভিনয় জীবনের কথা বিশেষভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে তিনি চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন। এতে তার বিপরীতে ছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর। এরপর তাকে আর কখনো অভিনয়ে দেখা যায়নি। আর কখনো কি অভিনয়ে দেখা যাবে আপনাকে? এমন প্রশ্নের জবাবে রুনা লায়লা বলেন, ‘না, না, আর না। একবারই নিজের ভালোলাগা থেকে অভিনয় করেছি। সত্যি বলতে কী অভিনয় অনেক কঠিন বিষয়। যেহেতু নিজের জীবনের ওপর ছিল ‘শিল্পী’ সিনেমার বিষয়বস্তু। তাই শ্রদ্ধেয় চাষী নজরুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় সিনেমাটিতে অভিনয় করেছিলাম। আর এই দুঃসাহস করতে চাই না। আমি সংগীতশিল্পী, এটাই আমার বড় পরিচয়, ভীষণ ভালোলাগার।’ রুনা লায়লা ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহর উদ্যোগে পাঁচটি গানের সুর করেছিলেন। গানগুলো লিখেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কবির বকুল। সংগীতায়োজন করেছিলেন রাজা কাশেফ। এর পর তিনি সর্বশেষ ‘লেজেন্ড ফর এভার’ অ্যালবাম প্রকাশ করেন তারই সুরে। এতে গান গেয়েছিলেন আশা ভোসলে, হরিহরণ, আদনান সামী, রাহাত ফতেহ আলী খান ও রুনা লায়লা নিজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *