আজ রুনা লায়লার ৭০তম জন্মদিন

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

মাত্র ১৪ বছর বয়সে যার সঙ্গীতে পদার্পন। ৬ বছর আগেই যিনি গানে গানে তার প্রিয় ভুবনে ৫০ বছর পার করে ফেলেছেন। যিনি তার সঙ্গীত জীবনে ১৮টি ভাষায় গান করে রীতিমত রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। উপমহাদেশের কিংবদন্তি সেই সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লার ৭০তম জন্মদিন বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর)। দিনটি উপলক্ষ্যে পরিবার ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

শৈশব থেকেই সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি। চার বছর বয়সেই নাচের পাঠ নেওয়া শুরু করেন রুনা লায়লা। সেসময় গানের প্রতি কিন্তু তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। বড়বোন দীনা লায়লা গান শিখতেন। ওইসময় খেলার ফাঁকে বড়বোনের সঙ্গে তিনিও ওই বয়সে বসে যেতেন রেওয়াজে, তবে সেটা নিয়মত নয়। সেসময় গানের ওস্তাদ তার স্মৃতিশক্তি ও তাল লয় আর সুরের জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হন। সেই ওস্তাদই রুনার মাকে একদিন অনুরোধ করেছিলেন যেন তাকে গান শেখাতে দেওয়া হয়। মাও দ্বিধা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যান। সেই ওস্তাদ ওইটুকু বয়সে রুনার মধ্যে গানের যে প্রতিভা দেখেছিলেন তা নিতান্তই ভুল ছিল না, যার প্রমাণ আজকের বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করা কণ্ঠসম্রাজ্ঞীর অবস্থান। নাচের প্রতি যে মেয়েটা এত পাগল ছিল, সে হয়ে উঠল উপমহাদেশের প্রখ্যাত গানের মানুষ।

বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ও মা আমেনা লায়লার দ্বিতীয় সন্তান রুনা লায়লা ক্রমেই হয়ে ওঠেন উপমহাদেশীয় সঙ্গীত জগতের এক বিষ্ময়কর নাম। তার বয়স সত্তর হলেও সঙ্গীত জীবন ৫৬ বছরেরও বেশি। দীর্ঘ এ সঙ্গীত ক্যারিয়ারে মোট ১৮টি ভাষায় দশ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি। রুনা লায়লাই বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পী যিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই তিন দেশেই সমানভাবে জনপ্রিয়।

আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নারী কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে এ ছাড়া পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক সহ বিভিন্ন পুরস্কার। এই কিংবদন্তি শিল্পী শুধু বাংলাদেশেই পুরস্কার পাননি, তিনি পাকিস্তান থেকে ৩টি ও ভারত থেকে দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননাসহ ২টি সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শুধু গানই নয়, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ নামক চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। এতে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। মূলত এ ছবিতে তার ক্যারিয়ারকে ফোকাস করা হয়েছিল।

স্বামী চিত্রনায়ক আলমগীর ও মেয়ে আঁখি আলমগীরের সঙ্গে রুনা লায়লা

বর্ণাঢ্য সঙ্গীত জীবনের ৭০ বছরের পদার্পনকে তিনি বিশেষ কিছু মনে করছেন। জন্মদিনের অনুভূতি জানাতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, কেন যেন এবারের জন্মদিনটিকে মনে হচ্ছে একটু বেশিই বিশেষ। অনেক আগে থেকেই এই দিনটিকে ঘিরে চলছে নানান আয়োজন। পারিবারিকভাবেও দিনটিকে উদযাপনের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমরা পরিবারের সদস্যরাই থাকছি। এছাড়া চ্যানেল আইতে থাকছে বিশেষ আয়োজন।

জন্মদিনে বৃহস্পতিবার চ্যানেল আইতে ১২.৩০ মিনিটে তিনি অনন্যা রুমা প্রযোজিত বর্ণাঢ্য ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। একই অনুষ্ঠানে কোনাল, ঝিলিক, তরিক মৃধা ও মেজবাহ বাপ্পীর রুনা লায়লাকে নিয়ে গাওয়া একটি বিশেষ গানও প্রচার করা হবে। গানটি লিখেছেন হাসনাত করিম পিন্টু ও সুর করেছেন মনোয়োর হোসেন টুটুল।

এবারের জন্মদিনে তিনি একটু বেশিই আবেগতাড়িত। জন্মদিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি মা-বাবার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জীবনের এই বিশেষ দিনে বাবা মায়ের কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। দীনা আপার কথা মনে পড়ছে। হয়তো সবাই থাকলে জীবনের এই দিনটি আরো বিশেষায়িত হতো। তারপরও যারা আছেন সবসময় পাশে তাদের নিয়েই ভালো থাকাটাও জরুরি।

নিজের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে ও দোয়া চেয়ে রুনা লায়লা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ্, আমি ভালো আছি সুস্থ আছি। সবাই দোয়া করবেন যেন আগামী দিনেও আল্লাহ ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।

বাড়িতে জন্মদিনের আয়োজন নিয়ে রুনা লায়লা বলেন, আমার জন্মদিনের সব আয়োজন আলমগীরই (চিত্রনায়ক আলমগীর) করেন। আমাদের বাড়িতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান হবে। এখানে আমার কোনো কাজ নেই। তবে প্রতি জন্মদিনেই একটা না একটা সারপ্রাইজ থাকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *