ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে

Slider জাতীয়


ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে শনিবার (৫ নভেম্বর) ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।

এ নির্বাচনে সদ্য প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর সামনে বাধা হয়ে রয়েছে বটগাছ। শাহদাব আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। তার দলীয় প্রতীক নৌকা। এ নির্বাচনে তার (শাহদাব) একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মো. জয়নুল আবেদীন ওরফে বকুল মিয়া। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী, তার দলীয় প্রতীক বটগাছ।

ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা এবং সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসন।সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে ১১ সেপ্টেম্বর ওই আসনটি শূন্য হয়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীসহ ৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বাছাইকালে দু’জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে গত ১৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া ও জাতীয় পার্টির আলমগীর হোসেন মিয়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।

ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহদাবকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জয়নুল আবেদীনকে। নৌকা ও বটগাছের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নৌকার কাছে বটগাছ কোনো বাধা হবে না বলে মনে করে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টরা। পক্ষান্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী দুর্বল হলেও কোনো চমকের আশংকাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না ওই অঞ্চলের রাজনীতি সচেতন মানুষজন। তবে ওই এলাকায় তেমন নির্বাচনী উত্তাপ নেই।

এ ব্যাপারে কথা বলতেও আগ্রহী নন ভোটাররা। এমনকি ভোট কেন্দ্রে যাবেন না বলেও জানিয়েছেন অনেকে।

মো. জয়নুল আবেদীন (৪৭) ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের রঘুয়ারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদের ছেলে। পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি বড়। তিনি আরবি শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি এলএলবি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা।

সালথা এলাকার বিভিন্ন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া জয়নুলের কাছে অনেকটা নেশার মতো। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের হয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে বিজয়ী প্রার্থীর ধারে কাছেও যেতে পারেননি তিনি।

২০০১ সালে জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে ফরিদপুর-২ আসনে প্রথম নির্বাচন করেন। ২০০৮ সালে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও প্রত্যাহার করে নেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টি (জেপি) দলের হয়ে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে ওই বছর সাজেদা চৌধুরী ছাড়া জয়নুলসহ অপর সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে সাজেদা চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এ উপনির্বাচনে জয়নুলকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে সাজেদা পুত্রকে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মো. জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৬৫৭ ভোট পান।

‘গাইবান্ধার অভিজ্ঞতার পর নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যা যা করার প্রয়োজন করবে’-অভিমত ব্যক্ত করে জয়নুল আবেদীন বলেন, জনগণের ভোটের অধিকারের দাবিতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন।

তিনি বলেন, এই প্রথম এ এলাকায় ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচনে ভোট দেয়ার প্রতি জনগণের আগ্রহ রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করবেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহদাব আকবর ওরফে লাবু চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আমি মনে করি ফলাফল আমার অনুকূলে আসবে। বিগত দিনগুলিতে এ সংসদীয় আসনভুক্ত ১৮টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ করেছি। সর্বস্তরের লোকদের সাথে কথা বলেছি।

তিনি বলেন, উপনির্বাচনে ভোট দেয়ার ব্যাপারে জনগণের একটা অনীহা আছে। অনেকেই ভোটকেন্দ্রে আসতে চান না। তবে আমার বিশ্বাস ভোটারদের উপস্থিতি ধারণার চেয়ে বেশি হবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ১৮ হাজার ৪৭২ জন। ১২৩টি কেন্দ্রের ৮০৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি তিন কেন্দ্রের বিপরীতে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন মনোনীত একজন ব্যক্তি নিয়োজিত রয়েছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *