স্তন ক্যানসার হলো কোষের অপরিণত বৃদ্ধি। এই কোষের অনিয়মিত বিভাজনের ফলে এটি টিউমার বা পি-ে পরিণত হয়। রক্তনালির লাসিকার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তা ছড়িয়ে পড়ে।
যে কারণে হয় : কারণ অনেক। অতিরিক্ত ওজন, দেরিতে সন্তান গ্রহণ, সন্তান না থাকা, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চেয়ে চর্বি ও প্রাণীজ আমিষ বেশি থাকা, প্রসেসড ফুড বেশি খাওয়া ইত্যাদি কারণে স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে। দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বা হরমোনের ইনজেকশন নেওয়াও স্তন ক্যানসারের কারণ। বয়স ৫০ বছর পর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
লক্ষণ : ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছেন না অথচ স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প দুধের মতো জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হচ্ছে, অনেক সময় স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত পড়া স্তন ক্যানসারের লক্ষণ। কোনো র্যাশ ছাড়াই চুলকানির অনুভূতিও স্তন ক্যানসারের লক্ষণ। স্তনে টিউমার থাকলে তা আশপাশের টিস্যুগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে স্তনে ফোলা ভাব দেখা যায়। কাঁধ ও ঘাড়ের ব্যথাও ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ। স্তনবৃন্ত চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের আকার অসমান হয়ে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ। স্তনে ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো লাম্প হওয়া। এই ব্রেস্ট লাম্পগুলো অনেক সময় আন্ডারআর্ম বা কলার বোনের তলায় দেখা যায়। যেগুলো টিপলে শক্ত অনুভূত হয়। অন্তর্বাস পরে থাকার সময় যদি ঘর্ষণ অনুভব করেন, ব্যথা লাগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। স্তনবৃন্ত খুব সংবেদনশীল অংশ। যদি দেখেন স্তনবৃন্ত স্পর্শ করার পরও তেমন কোনো অনুভূতি হচ্ছে না, তবে তা ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ। স্তনের ত্বকে লালচে আভা এবং অমসৃণতা দেখা দেওয়াও এডভান্সড ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ।
পরীক্ষা করবেন যেভাবে : বয়স বিশ বছরের পর থেকে প্রত্যেক নারীর উচিত প্রতিমাসের নির্দিষ্ট সময় নিজের স্তন পরীক্ষা করা। মাসিক শুরুর ৫ থেকে ৭ দিন পর এ পরীক্ষার উপযুক্ত সময়। কারণ তখন স্তন নরম ও ব্যথা কম থাকে।
নিজে যেভাবে পরীক্ষা করবেন : আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের স্তন ৪ ভাগে ভাগ করে প্রতিটি অংশের অভ্যন্তরে কোনো চাকা বা দলার মতো আছে কিনা, তা অনুভব করুন। হাত দুটো পাশে রাখুন। ভালো করে লক্ষ্য করুন স্তনের চামড়ায় কোনো পরিবর্তন কিংবা আকারে তারতম্য এসেছে কিনা। এবার দুহাত কোমরে রেখে বুক সামনের দিকে চিতিয়ে দেখুন স্তনে কোনো ধরনের দাগ, ঘা কিংবা গর্ত আছে কিনা। দুহাত এবার উঁচু করে আরও একবার পরীক্ষা করুন। নিপল থেকে শুরু করে বৃত্তাকারভাবে বাইরের দিকে উপর-নিচ করে সম্পূর্ণ স্তন পরীক্ষা করতে পারেন। বাম হাত দিয়ে ডান পাশের ও ডান হাত দিয়ে বাম পাশের স্তন পরীক্ষা করুন।
গোসলের আগে এক হাত মাথায় রাখুন। আরেক হাতের আঙুল দিয়ে কলার বোনের কয়েক ইঞ্চি নিচ থেকে একদম বগল পর্যন্ত চেপে দেখুন। পুরো স্তনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চক্রাকারে পরীক্ষা করুন। প্রথমে হালকাভাবে, পরে একটু চাপ দিয়ে স্তনের টিস্যুগুলো পরীক্ষা করুন।
বিছানায় শুয়ে ডান দিকের কাঁধের ওপর একটি বালিশ রাখুন। ডান হাত মাথার পেছনে দিন। এবার বাম হাতের আঙুল দিয়ে চক্রাকারে ডান পাশের স্তন পুরোটা পরীক্ষা করুন। স্তনবৃন্ত চেপে ধরে নিশ্চিত হোন, কোনো তরল নিঃসৃত হচ্ছে কিনা। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ব্যাপারে আছে কিনা। একইভাবে বাম স্তনও পরীক্ষা করুন।
রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা : যাদের পরিবারে কারো স্তন ক্যানসারের রোগী আগে, তাদের হাসপাতালে গিয়ে ম্যামোগ্রাম করতে হবে।
চিকিৎসা : স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা আছে। ভয়ের কিছু নেই। সময়মতো চিকিৎসা নিন।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার
২৬ গ্রিনরোড, ধানমন্ডি, ঢাকা
০৯৬৬৬৭১০০০১, ১০৬৬৬