৯ বছর আগের রেকর্ড ভাঙতে চায় বিএনপি

Slider রাজনীতি


রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯ অক্টোবর। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় সমাবেশ করতে গিয়ে নানা ধরনের বাধা পাওয়ার পর রংপুরেও একই আশঙ্কা কাজ করছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ অবস্থায় মরিয়া মনোভাব নিয়ে রংপুরের সমাবেশ সফল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নেতারা। এবার নয় বছর আগের সমাবেশের রেকর্ড ভাঙতে চায় দলটি। রংপুর মহানগরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে এ সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।

গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায়ও রংপুর সমাবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ সময় সর্বশেষ খুলনা সমাবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সমাবেশটি সফল করায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, তাদের বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে বাধা দেওয়ার ধরন ও কৌশল যেভাবে চরম আকার ধারণ করছে, তাতে পরবর্তী সমাবেশগুলো সফল করা নিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে সমাবেশের পর যেভাবে মামলা দেওয়া হচ্ছে, তাতে পরবর্তী সময়ে পুলিশি হয়রানির আশঙ্কা রয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচিগুলোতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কিনা, সেটাও ভাবতে হচ্ছে নেতাদের।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির সমাবেশে লোকসমাগম যত বেশি হচ্ছে, ততই আওয়ামী লীগ আতঙ্কিত হচ্ছে। সে কারণে তারা জনগণকে দমন করার চেষ্টা করছে। সামনেও সে চেষ্টা তারা করবে। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস- মানুষ যেভাবে জেগে উঠছে, ক্ষমতাসীনরা ব্যর্থ হবে। দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘খুলনা বিভাগের নেতাকর্মীদের মাঝে যে মনোবল দেখেছি, তা আগামী দিনের যে কোনো কর্মসূচি সফল করা সম্ভব। আমি মনে করি, রংপুরের সমাবেশেও নেতাকর্মীদের সেই প্রত্যয় দেখা যাবে।’

রংপুর সমাবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেন, তাদের রংপুর বিভাগে ১০টি সাংগঠনিক জেলা। এর মধ্যে দিনাজপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মস্থান, ঠাকুরগাঁওয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, পঞ্চগড়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, কুড়িগ্রামে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, রংপুর জেলা ও মহানগরের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং লালমনিরহাটে আসাদুল হাবিব দুলুর জন্মস্থান। এসব জেলায় বিএনপির বড় সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। এ ছাড়াও সাংগঠনিক জেলা নীলফামারী, গাইবান্ধা, সৈয়দপুরে সাংগঠনিক অবস্থা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। এ অবস্থায় রংপুর বিভাগের এই গণসমাবেশ রাজনীতিতে বড় তাৎপর্য বহন করে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।

নেতারা বলেন, এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি অধ্যুষিত রংপুর। এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৪ বছর পর ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বড় জমায়েত ঘটিয়েছিল বিএনপি। জাতীয় পার্টির দুর্গে ওই সমাবেশ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল দলটি। তখন থেকে রংপুর বিভাগে কিছুটা হলে ঘুরে দাঁড়ায় বিএনপি। সেই রংপুরে ৯ বছর পর আবার সমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে রংপুরে সমাবেশ আয়োজনের দলনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ এমপি আমাদের সময়কে বলেন, ‘২০১৩ সালে ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন। সেই সমাবেশে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন। এবার শুধু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নয়, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষের চরম কষ্ট এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন করার মতো ইস্যুগুলো আছে। এসব কারণে দেশের মানুষ এই সরকারের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। আমরা মনে করি, এই সমাবেশ ২০১৩ সালের সমাবেশের চেয়েও বড় সমাবেশ হবে। খুলনার মতো বাধা দিলেও স্মরণকালের সমাবেশ হবে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সমাবেশ সফল করতে একাধিক টিম কাজ করছে। এসব টিম সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক জেলা নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। সমাবেশ সফল করতে ইউনিয়ন পর্যায়েও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক আমাদের সময়কে বলেন, ‘খুলনার মতো বাধা সৃষ্টি করা হলে বিকল্প প্রস্তুতিও আছে আমাদের। এক সময় সবাই বলতেন রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। ২০১৩ সালের সমাবেশ করে সেই ধারণা পাল্টি দিয়েছে। এবার আমরা প্রমাণ করতে চাই, রংপুর বিভাগ বিএনপির ঘাঁটি।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি সাংগঠনিক জেলাকে কমপক্ষে দশ থেকে পনেরো হাজার করে নেতাকর্মীকে সমাবেশে উপস্থিত করতে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা এবং সাবেক এমপি ও সর্বশেষ নির্বাচনে এমপি যারা প্রার্থী ছিলেন, তারা মাঠে কাজ করছেন।

পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি এখনো সমাবেশ সফল করতে একটি বাজারে লিফলেট বিতরণ করছি। এখানে নেতাকর্মীদের যে মনোবল দেখছি, তাতে করে শত বাধার মাঝেও সমাবেশ সফল হবে।’

বিএনপির রংপুর মহানগরের সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন বলেন, গণসমাবেশ উপলক্ষে এখনো কোথাও নেতাকর্মীদের বাড়িতে কোনো পক্ষ থেকে হয়রানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে সমাবেশে যোগদানের আগে আগে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। সমাবেশের স্থল কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠ ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে।

এদিকে সমাবেশ সফল করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশের পর খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশে আহত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে গতকাল মঙ্গলবার ছুটে যান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি খুলনার ফুলতলা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দলের ৪৮ জন আহত নেতাকর্মীর খোঁজখবর নেন। এ ছাড়াও তিনি যশোরের কেশবপুরে চারজন এবং মনিরামপুরে পাঁচজন আহত নেতাকর্মীর খোঁজখবর নেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা আহত নেতাকর্মীদের দেখতে এসেছি। আরও তেজোদীপ্ত ও শক্তিশালী হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, হারানো অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন ও গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *