সরকারি কলেজে শিক্ষক সঙ্কট, বিপাকে ১৯ হাজার শিক্ষার্থী

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষক সঙ্কটে রয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ। অধ্যক্ষসহ ৪৬ জন শিক্ষকের কর্মস্থলে রয়েছে ২১ জন। শূন্য রয়েছ ২৫টি পদ। এতে বিপাকে পড়েছে কলেজে পড়ুয়া ১৯ হাজার ছাত্র-ছাত্রী। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে যথাযথভাবে ক্লাস না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত অভিভাবকরা।

অধ্যক্ষ নেই বেশ কয়েক মাস। হিসাব বিজ্ঞান, দর্শন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ চলছে একজন করে শিক্ষক দিয়ে।

কলেজে চালু থাকা অনার্সের ৯টি বিষয়সহ মোট ১৫টি বিষয়ের পদার্থ বিজ্ঞান ও কৃষি বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া কোনোটিতেই পরিপূর্ণ শিক্ষক নেই। শূন্য রয়েছে শিক্ষকের ২৫টি পদ। এর মধ্যে অধ্যাপক একজন, সহযোগী অধ্যাপক চারজন, সহকারী অধ্যাপক ৯ জন এবং প্রভাষক ১১ জন।

প্রদর্শকের চারটি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে দু’টি। অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে চালানো হচ্ছে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিমাসে প্রতিবেদন দেয়া হলেও পাওয়া যাচ্ছে না কোনো শিক্ষক। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে অসুবিধায় পড়েছেন কলেজের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা।

পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বদরুল হুদা জানান, পীরগঞ্জ সরকারি কলেজে বাংলা, ইংরেজী, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও প্রাণি বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। এরমধ্যে ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রায় এক বছর ধরে কোনো শিক্ষক নেই। এ বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক এবং দু’জন প্রভাষকের পদ শূন্য। বর্তমানে এ বিভাগে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী প্রায় এক হাজার ৩০০ জন।

গণিত বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮০০ জন। কিন্তু এ বিভাগেও কোনো শিক্ষক নেই। এক মাস আগে শিক্ষক শূন্য হয়েছে বিভাগটিতে। এ বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক এবং একজন প্রভাষকের পদ শূন্য।

রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে মাত্র একজন প্রভাষক ছিলেন। তিনিও রোববার বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে গেলেন। সে বিভাগও এখন শিক্ষক শূন্য। এ বিভাগে অনুমোদিত পদ রয়েছে সহযোগী অধ্যাপক একজন, সহকারি অধ্যাপক একজন এবং প্রভাষক দুজন। এ বিভাগে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৪০০ জন।

বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপকের পদ শূন্য রয়েছে। এ বিভাগে ইনসিটু হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক ড. হান্নান মিয়া কর্মরত থাকলেও তিনি নিয়মিত কলেজে যান না। দু’জন প্রভাষক দিয়ে চলছে বাংলা বিভাগ। এ বিভাগে শিক্ষার্থী প্রায় দু’হাজার ৭০০ জন।

ইংরেজী বিভাগেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা দু’হাজার ৭০০। এ বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং একজন প্রভাষকের পদ শূন্য রয়েছে। একজন সহকারি অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক দিয়ে চলছে বিভাগটি।

অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকের চারটি পদের মধ্যে প্রভাষকের একটি পদ শূন্য। এখানে অধ্যায়ন করছেন প্রায় এক হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী। দর্শন বিভাগ চলছে একজন সহকারী অধ্যাপক দিয়ে। শূন্য আছে প্রভাষকের একটি পদ। এ বিভাগে শিক্ষার্থী প্রায় ৯০০ জন। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী প্রায় এক হাজার ৩০০ জন। একজন প্রভাষক দিয়েই চলছে বিভাগটি। শূন্য আছে সহকারী অধ্যাপক একজন ও প্রভাষক একজন।

রসায়ন বিভাগে শূন্য আছেন সহকারী অধ্যাপক একজন। দু’জন প্রভাষক ও একজন প্রদর্শক কর্মরত আছেন। এ বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় এক হাজার ১০০ জন।

প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যপক একজন ও প্রদর্শক একজনের পদ শূন্য। চলছে দু’জন প্রভাষক দিয়ে। এ বিভাগে শিক্ষার্থী প্রায় এক হাজার। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে একজন প্রভাষক ছাড়া সব পদ শুন্য। এ বিভাগে পড়াশুনা করছে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী।

এ ছাড়াও কলেজে অধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে। উপাধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল হাসান অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রশিক্ষণে থাকায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন সহযোগী অধ্যাপক বদরুল হুদা। কলেজে শিক্ষক সঙ্কটের কারণে এক বিভাগের শিক্ষককে অন্য বিভাগের ক্লাশ নিতে হচ্ছে।

কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবিউল আওয়াল বলেন, তিনি দর্শনের শিক্ষক হলেও তাকে দর্শনের পাশাপশি রাষ্ট্র বিজ্ঞান পড়াতে হচ্ছে। এতে তাদের উপর চাপ বাড়ছে।

হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাশমুন আকতারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষক না থাকার কারণে তাদের ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। তাদের সমস্যা হচ্ছে। বাইরে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে।

অভিভাবক সাংবাদিক মাহাবুবুর রহমান বুলু বলেন, ‘এই কলেজে এত শিক্ষক সঙ্কট আগে জানলে আমার সন্তানকে ভর্তি করতাম না।’

শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ইকরামুল হক বলেন, শিক্ষক সঙ্কটের কারণে কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এ অঞ্চলের বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখানে অবিলম্বে শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ হওয়া দরকার। কলেজে যেসব বিভাগে শিক্ষক নেই, সেসব বিভাগে স্থানীয়ভাবে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের দিয়েই চালিয়ে নেয়া হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। প্রতি মাসেই শিক্ষকের শুন্য পদের প্রতিবেদন দেয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরে। আশা করছি, শিগগিরই এ সঙ্কট কেটে যাবে।

শিক্ষক সঙ্কট বিষয়ে ঠাকুরগাও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান বলেন, এ অঞ্চলের সব চেয়ে বড় বিদ্যাপিঠ এটি। শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ অবদান রাখছে কলেজটি। এখানকার শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *