তেলের দাম আরও বাড়ল

Slider সারাবিশ্ব

চীনের কঠোর করোনা বিধিনিষেধ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সুদের হার বৃদ্ধির জের আন্তর্জাতিক বাজারে ফের কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।

সোমবার প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৯১ দশমিক ৮৩ ডলার থেকে ১ দশমিক ১ ডলার কমে হয়েছে ৯০ দশমিক ৭৩ ডলার, আর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের অপর বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ৮৬ দশমিক ৭৯ ডলার থেকে ১ দশমিক ১৩ ডলার কমে হয়েছে ৮৫ দশমিক ৬৬ ডলার।

শতকরা হিসেবে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ, আর প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই তেলের দাম কমেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

গত শুক্রবার এক ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৪ দশমিক ১ শতাংশ ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার চার দিনের মাথায় ফের দরপতন ঘটল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক বাজারে।

সম্প্রতি জ্বালানি তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারী দেশসমূহের আন্তঃসরকার জোট অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) জ্বালানি তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অপরিশোধিত তেলের উত্তোলন সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছিল। সেই ঘোষণার বাস্তবায়নও হয়েছে, তবে তেলের বাজার পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বলছে, তেল উত্তোলোন খুব কম মাত্রায় সীমিত করেছে বিভিন্ন দেশ।

বাজারে দরপতনের আর একটি কারণ চীনের ‘জিরো কোভিড’ নীতি। বিশ্বের অন্যান্য দেশ করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করলেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক ক্রেতা চীন এখনও কঠোর করোনাবিধি জারি রেখেছে।

এই নীতির কারণে একদিকে দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও শিল্পোৎপাদন যেমন হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের চাহিদাও কমে গেছে দেশটির। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চীনের বর্তমান অপরিশোধিত তেলের চাহিদা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

অপরিশোধিত তেলের বাজার বিশ্লেষক জুন রং ইয়িপ বাজারের বর্তমান অবস্থাকে ‘উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘যদি চীনের করোনা নীতি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরোদমে শুরু হতে আরও বিলম্ব হয়, সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে তেলের দাম আরও কমবে। শিগগিইর হয়তো আমরা দেখতে পাবো— প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ৮৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম ও ইউরোপীয় দেশসমূহের জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সুদের হার বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে।

এতে হাওয়ার গতিতে বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতিতে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হলেও ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের হার কমে যাবে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা; এবং যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার হার কমে যায়, স্বাভাবিকভাবে পণ্য ও সেবার উৎপাদনও হ্রাস পাবে বিশ্বজুড়ে। ফলে, চলমান এই বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দ্রুত পরিবর্তন না এলে শিগগিরই বিশ্বের বিশাল অংশ জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *