জ্বালানির দাম কমিয়ে এবার বিদ্যুতের দাম বাড়াল শ্রীলঙ্কা

Slider সারাবিশ্ব


বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় গত সপ্তাহে ডিজেল ও এলপি গ্যাসের দাম কমেছে শ্রীলঙ্কায়। তার সঙ্গে তাল রেখে দেশটিতে কমেছে গণপরিবহনের ভাড়াও।

কিন্তু তার ৫ দিনের মধ্যেই বিদ্যুতের দামে রীতিমতো উল্লম্ফন ঘটেছে দেশটিতে। শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বিষয়ক সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাবলিক ইউটিলিটি কমিশন অব শ্রীলঙ্কার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিদ্যুতের দাম এক ধাক্কায় ৭৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার।

এক বিবৃতিতে এই দিন কমিশনের চেয়ারম্যান জনকা রত্নায়েকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বিদ্যুতের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গ্রাহকদের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই এ দাম বাড়ানো হয়েছে।’

তবে সরকারি কমিশন বিদ্যুতের দাম ‘যৌক্তিক’ পর্যায়ে উন্নীত করার কথা বললেও শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুতের চরম সংকট চলছে। লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানী কলম্বোই প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় বাসাবাড়িতে অনেকেই গাড়ির ব্যাটারি ব্যবহার করছেন।

গত ৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) এক সরকারি আদেশে জানানো হয়, ডিজেল ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য এলপি গ্যাসের দাম কমেছে শ্রীলঙ্কায়। ডিজেলের দাম কমায় সেদিন দিন বাসভাড়া কমিয়ে নতুন ভাড়াতালিকা প্রকাশ করে দেশটির জাতীয় গণপরিবহন কমিশন এনটিসি।

ডিজেলের দাম কমে যাওয়ায় এনটিসির নতুন তালিকায় বাসভাড়া আগের তুলনায় ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ কমানো হয়। তার ৫ দিনের মাথায়ই বিদ্যুতের দাম ৭৫ শতাংশ বাড়াল রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যের দাম ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য প্রধান বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রুপির মূল্য হ্রাস পেয়েছে।

অনেকেই দেশটির চলমান এই পরিস্থিতির জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দায়ী মনে করেন। তাদের মতে, রাজাপাকসের ভুল নীতির কারণে শ্রীলঙ্কায় বর্তমান সংকট তৈরি হয়েছে। আর এই সংকটের প্রভাব করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আরও প্রবল হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ ঋণ করেছে। দুই দশকের মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে গত মাসে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেলআউটের জন্য আইএমএফের সাথে আলোচনা করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে এই আলোচনা আপাতত থমকে গেছে। এখন দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে পুনরায় আইএমএফের সাথে বেলআউটের আলোচনা শুরু করাই হবে বিক্রমাসিংহের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, উচ্চমাত্রার ঋণ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো একই ধরনের বৈশ্বিক প্রতিকূলতা বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এক নজরে শ্রীলঙ্কা

• ভারতের দক্ষিণের এক প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের ৯৯ শতাংশই প্রধানত তিনটি জাতিগত গোষ্ঠী— সিংহলিজ, তামিল এবং মুসলিম।

• রাজাপাকসে ভাইদের পরিবার বছরের পর বছর ধরে দেশটি শাসন করছে। কয়েক দশকের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর ২০০৯ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল বিদ্রোহীদের পরাজিত করে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিজদের কাছে ‘বীর’ বনে যান মাহিন্দা রাজাপাকসে।

• মাহিন্দার ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে সেই সময় দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন। পরে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। যদিও গণবিক্ষোভের মুখে গত সপ্তাহে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *