সরকারকে সরানোর যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি-গণঅধিকারের ঐকমত্য

Slider রাজনীতি


বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন দুই দলের নেতারা। – ছবি : নয়া দিগন্ত
সরকারকে সরাতে যুগপৎ আন্দোলন করার বিষয়ে বিএনপির সাথে ঐকমত্য পোষণ করছে গণঅধিকার পরিষদ।

বুধবার দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের সাথে সংলাপের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে না। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে। জয়ী হলে সকলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদের সাথে আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়েছি, খুশি হয়েছি। তারা আমাদের সাথে প্রায় সব বিষয়েই একমত পোষণ করেছেন। বিশেষ করে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আমরা এই বিষয় একমত হয়েছি যে এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না।

তিনি আরো বলেন, এই সরকার অত্যন্ত সচেতনতার সাথে আমাদের যে অর্জনগুলো ছিল- গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা – সেগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে।

‘এই কারণে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে একটা আন্দোলন করার জন্য একমত হয়েছি,’ বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা, সাংবাদিকতা, ন্যায়বিচারের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে। এ কারণে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছি। পরে সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটা শক্তিশালী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সকলের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। আর এর মাধ্যমে যোগ্য পার্লামেন্ট ও সরকার গঠিত হবে।

তিনি বলেন, সরকার গঠনের পরেই সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করবো। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে একটা পরিবর্তন হওয়া দরকার।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ধন্যবাদ জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য নুরুল হক নুর বলেন, বিএনপির সাথে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নেই।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। প্রায় ১০টি বিষয় উঠে এসেছে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভোটবিহীন জোর-জবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান ফ্যাসিবাদ সরকারকে হটাতে যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রাম করার ক্ষেত্রে গণঅধিকার পরিষদও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একমত।

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যারা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে তাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।

বিএনপির সাথে গণঅধিকার পরিষদের যে ১০টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা হলো :

১. ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের ভোটবিহীন জোরজবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারকে হঠাতে যুগপৎ বা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম।

২. অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটগ্রহণ।

৩. রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার।

৪. বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক নিয়োগে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন।

৫. বাক, ব্যক্তি ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার অধিকারসহ নাগরিকদের সংবিধান স্বীকৃত সকল অধিকার প্রতিষ্ঠা।

৬. খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দী ও ধর্মীয় নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। ভিন্নমতের উপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, গুম, খুন, নির্যাতন-লিপীড়ন, হামলা-মামলা বন্ধে পদক্ষেপ।

৭. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ সকল গণবিরোধী ও নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করা।

৮. বর্তমান সরকারের গত ১৩ বছরের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ।

৯. মেগা প্রকল্প ও কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইন করে বাপেক্সকে শক্তিশালী স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা।

১০. রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বসহ জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

বিএনপি তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির হোসেন চৌধুরী এবং মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন সংলাপে অংশ নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *