‘স্টেশন মাস্টারের উচিত রনিকে চা খাইয়ে দেওয়া’

Slider জাতীয়


‘কেউ আন্দোলন করতে আসলে চা খাওয়াব’ প্রধানমন্ত্রীর এ কথাকে উদ্ধৃত করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘স্টেশন মাস্টারের উচিত রনিকে চা খাইয়ে দেওয়া।’

রোববার (২৪ জুলাই) বিকেলে দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে অব্যবস্থাপনার জন্য আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে স্টেশন গেটে তিনি এ কথা বলেন।

যতক্ষণ কমলাপুর রেল স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হবে না ততক্ষণ মহিউদ্দিন রনির সঙ্গে গেটে অবস্থান করার ঘোষণা দেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ কমলাপুর রেল স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হবে না ততক্ষণ রনির সঙ্গে গেটে অবস্থান করব। তার প্রত্যেকটা দাবি যুক্তিসংগত। তাকে আমি অভিনন্দন জানাই। সে ৭ জুলাই থেকে সকল নিপীড়ন অগ্রাহ্য করে এখানে অবস্থান করছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বলা উচিত যে আপনার এই ছয় দফাকে বাস্তবায়ন করব। আজকে দেখেন রেলওয়ে পরিবহনের কাছ থেকে টিকিট পাব না; ব্ল্যাক থেকে টিকিট কিনতে হবে! এটা খুব কঠিন কাজ। তার প্রতিটি দাবি যৌক্তিক। ডিজিটাল একটা নিয়ম থাকতে পারে, দুইটা, তিন-চারটা টিকিট থাকতে পারে না।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘পঁচা ডিম মেরে আন্দোলন বন্ধ করা যায় না, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়েও আন্দোলন বন্ধ করা যায় না। আপনার কয়জন আসবেন? পঞ্চাশ জন, পাঁচ শ জন! আমরা আসব পাঁচ হাজার। আমাদেরকে দমাতে পারবেন না।’

এরআগে শনিবার (২৩ জুলাই) ও শুক্রবার (২২ জুলাই) বিকেলে স্টেশন চত্ত্বরে আসার পরই রেলস্টেশনের বাইরের কলাপসিবল গেটে রনিকে আটকে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এ সময় ট্রেনের যাত্রীদেরও ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

রেলের অব্যবস্থাপনা দূর করা, ট্রেনের টিকিটে কারসাজি বন্ধসহ ৬ দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুরে আন্দোলন করছেন রনি। শুরুতে তিনি একাই অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও গত সোমবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গানের দল বিশ কুড়ি ‘আমাদের স্বপ্ন যেন সত্য হয়। মানুষের স্বপ্ন যেন সত্য হয়’ গানে প্রতিবাদ জানায়।

এর আগে, ছয় দফা দাবি পূরণ করতে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলেও তাতে কাজ হয়নি। তাই আলটিমেটামের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) আবার অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে রনিসহ অন্য শিক্ষার্থীরা যান কমলাপুর রেলস্টেশনে। তবে, চলমান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বাধায়’ কমলাপুর স্টেশনে থাকতে না পেরে অবশেষে তারা সন্ধ্যায় শাহবাগে চলে যান।

‘ছয় দফাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে’ শুক্রবার বিকেলে আবার কমলাপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে যান মহিউদ্দিন রনি। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতে না দেয়ায় তিনি প্রধান গেটের সামনেই বসে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন।

এ সময় সেখানে আসা সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দেয়া এম এ সূর্য নামে এক ব্যক্তি রনিকে তার আন্দোলনের বিষয়টি পরিষ্কার করতে বলে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। একপর্যায়ে সেখানে থাকা জনতা ওই ব্যক্তিকে ‘দালাল’ আখ্যায়িত করে ধাওয়া দেন। এ সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠে কমলাপুর স্টেশনের পরিবেশ। পরে পুলিশ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। এ সময় রনি সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনের ইস্যুকে ধামাচাপা দিতে নতুন ইস্যু তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সূর্য সাংবাদিকদের বলেন, তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলেছে। তারা আমাকে মেরেছে।

গত মাসে রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ঈদুল আজহার আগে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অনশন শুরু করেন মহিউদ্দিন। ১০ জুলাই ঈদের দিনেও তিনি অবস্থানে ছিলেন। এর আগে গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *