৯ বছরের মধ্যে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

গেল বছর (২০২১) জুন মাসে যে কোনো ধরনের পণ্য কিনতে যদি ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, সেই একই পণ্য গত জুনে (২০২২) কিনতে বাড়তি ৭ টাকা ৫৬ পয়সা অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে। অর্থাৎ খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৭ টাকা ৫৬ পয়সা। আর যদি আপনি গ্রামের বাসিন্দা হোন, তাহলে খরচের পাল্লা আরো খানিকটা বেড়ে দাঁড়াবে ১০৮ টাকা ৯ পয়সা। কারণ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে সাত দশমিক ৫৬ শতাংশ।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত মে মাসে মূল্যস্ফীতির সূচক উঠেছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। জুনে সেই সূচক আরো দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উঠেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা লক্ষ্যের চেয়ে দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরে ‘খাতা কলমে’ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে সরকারের এই হিসাব মানতে নারাজ বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলো। এরই একটি সানেম। সংস্থাটি এপ্রিল মাসে বলেছে, দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

এদিকে বিবিএস’র হিসাব মতে জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মে মাসে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে। ৯ বছর আগে ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।

৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কিছুটা কমেছিল এই সূচক। ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মুরগিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে। এ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত দুই অর্থবছরে সরকার মূল্যস্ফীতি আটকে রাখার যে লক্ষ্য ধরেছিল, তাতে আসলে সফল হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে : পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘর ছাড়িয়ে ৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে উঠেছে। মে মাসে যা ছিল ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য ও অন্যান্য সেবার দাম বেড়েছে বেশি। জুন মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ; মে মাসে হয়েছিল ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য বলছে, শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি। জুন মাসে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশে উঠেছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। জুন মাসে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। মে মাসে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জুনে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য আট শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *