প্রবল গণঅসন্তোষের মধ্যে পালিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে আগামী বুধবারই পদত্যাগ করছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। তিনি বুধবারই ইস্তফা দেবেন।
বিবিসি জানিয়েছে, দুদিন ধরে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাড়ি দখল করে থাকা বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, সরকারের এ দুই শীর্ষ ব্যক্তির পদত্যাগের ঘোষণার বাস্তবায়ন না দেখে তারা জায়গা ছাড়তে রাজি নন।
শনিবার দিনভর সহিংস বিক্ষোভের পর হাজারো জনতা যখন প্রেসিডেন্টের বাড়ি দখল করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দিলো, সেই রাতেই এক ভিডিও বার্তায় পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য’ ১৩ জুলাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে।
কিন্তু প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য এখনো আসেনি। সে কারণে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে প্রবল সন্দেহ রয়েছে। এর মধ্যেই আজ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হলো।
শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে তার পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে জমা দিতে হবে। কেবল তখনই তার ইস্তফা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হবে। কিন্তু এখনো তা ঘটেনি।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহে বলেছিলেন, ‘দেশের স্বার্থে’ একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করতে তিনি পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। তবে তিনিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দেননি।
প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী – দুজনেই পদত্যাগ করলে শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী, স্পিকার সেদেশে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ ৩০ দিন দেশ পরিচালনা করতে পারবেন।এর মধ্যেই পার্লামেন্টকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে, যিনি বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদের শেষ দুই বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।
গত শুক্রবার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ছাড়ার পর থেকে গোতাবায়া রাজাপাকসে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
তবে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার উপকূলে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে অবস্থান করছেন তিনি। আর গোতাবায়ার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে অবস্থান করছেন একটি নৌঘাঁটিতে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কা। ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে দেশটি বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধেও ব্যর্থ হয়েছে। এক সময়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটিতে চলছে খাদ্য সংকট। জ্বালানি তেল কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। ওষুধসহ নিত্যপণ্যের সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত।
দেশের এ পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার পরিবারকে দায়ী করে আসছে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা। গত দুই দশক ধরে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির ক্ষমতায় রয়েছে রাজাপাকসে পরিবার। প্রবল বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গত মে মাসে পদত্যাগে বাধ্য হলেও তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ছিলেন অনড়।