গাজীপুর : গাজীপুরের বেদখল ১৯২ পুকুরের বর্তমান দখলদারের তালিকা প্রস্তুত ও তা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকসহ সরকারের ১০টি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
বুধবার (০৬ জুলাই) বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশ পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবীকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৩ জুলাই ‘১৯২ সরকারি পুকুর বেদখল’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো।
আইনি নোটিশের বিষয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পুকুরগুলোকে আমরা খুব অবহেলা করি। যেভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাপমাত্রা বাড়ছে, জলবায়ুর বিপর্যয় ধেয়ে আসছে, তাতে করে একসময়ে পুকুরগুলোই আমাদের একমাত্র পানির আধার হবে। আগুনের যে ঝক্কি মহানগরগুলোতে দেখছি, তা নিরসনে পুকুরের বিকল্প নেই। তাই পুকুরগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করেই সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।’
জেলা প্রশাসন ছাড়া যাঁদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাঁরা হলেন—গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, গাজীপুরের পুলিশ সুপার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক।
বেলার আইনি নোটিশে বলা হয়, ‘পুকুর ভরাট দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বৃহত্তর জনস্বার্থ বিবেচনায় এ পুকুরগুলো ভরাটরোধে এবং এগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে যথাযথ সংরক্ষণ করতে না পারা আইন বাস্তবায়ন বা প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে আপনার ব্যর্থতার পরিচায়ক।’
পুকুর দখল ও ভরাটে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান, পুকুর ভরাটের ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার যে ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ ও দোষীদের কাছ থেকে তা আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে আইনি নোটিশে। একই সঙ্গে ৮৮৭টি পুকুরের প্রয়োজনীয় সংস্কারপূর্বক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে শ্রেণি অপরিবর্তিত রেখে তা ‘পুকুর’ হিসেবে যথাযথ সংরক্ষণ, পুকুরের পাড় বাঁধাই ও বাঁধাইকৃত পাড়ে পুকুরের উপযোগী বৃক্ষরোপণের দাবি জানিয়েছেন বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না।
আইনি নোটিশে বলা হয়, প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী গাজীপুর জেলায় সরকারি বা খাসপুকুরের সংখ্যা ৮৮৭টি, যার মধ্যে ২২ শতাংশ অর্থাৎ ১৯২টি পুকুর পুরোপুরি বা আংশিক ভরাট করা হয়েছে, যার আয়তন প্রায় ১৫১ একর। এ সংবাদ অনুযায়ী জেলার ৮৮৭টি পুকুরের মধ্যে মহানগর ও সংলগ্ন এলাকায় পুকুর থাকার কথা ৩৯০টি, রয়েছে মাত্র ২৩৬টি; অর্থাৎ মহানগর ও আশপাশের এলাকার ৩৯ শতাংশের বেশি পুকুর (প্রায় ১৫৪টি) পুকুর দখল ও ভরাট করা হয়েছে। পুকুরগুলো ভরাট ও দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাড়ি ও মার্কেট।
পুকুরের গুরুত্ব সম্পর্কে আইনি নোটিশে বলা হয়, বৃষ্টির পানি ধারণের অন্যতম প্রধান আধার হিসেবে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে পুকুরগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। দৈনন্দিন নানা কাজে এ পুকুরগুলোর পানি ব্যবহার করতেন গাজীপুরবাসী। অধিকন্তু গাজীপুর শহরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষার্থে এ পুকুরগুলোর রয়েছে বিশেষ অবদান। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো এলাকায় পুকুর বেশি থাকলে, আর্দ্রতা বেশি থাকবে। ফলে ধুলাবালু নিয়ন্ত্রণে থাকবে, বায়ূদূষণ কম হবে।