ক্যারিবীয় দ্বীপ মানেই যেন দুর্বোধ্য ধাঁধাঁ। আর তা ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটেই। তারপরও ওয়ানডে ও টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে নেই জয়ের রেকর্ড। যদিও খেলা হয়েছে কম সংখ্যক ম্যাচ। এর মধ্যে একটি ম্যাচে হয়নি রেজাল্টই।
আগামী শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ, প্রথমবারের মতো। এবার কেমন করবে বাংলাদেশ। জয়ের খরা কাটাতে পারবে মাহমুদউল্লাহ শিবির?
দুই দল টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছে এখন পর্যন্ত ১৩ বার। তাতে সাত জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বাংলাদেশ জিতেছে ৫ ম্যাচে। একটি ম্যাচে হয়নি ফলাফল। এমন পরিসংখ্যান দুই দলের শক্তি-সামর্থ্য কাছাকাছির মনে হবে। তবে ক্যারিবীয়দের মাটিতে ম্যাচ খেলার হিসেব করলে রেজাল্ট শূন্য। এখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। দুটিতে হার টাইগারদের। এক ম্যাচ পরিত্যক্ত।
তিনটি ম্যাচও খেলা হয়েছে অনেক বিরতি দিয়ে। প্রথম ম্যাচ ২০০৯ সালে। বাসেত্রেতে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৫ উইকেটে। একই ভেন্যুতে ২০১৪ সালে ম্যাচটিতে হয়নি রেজাল্ট। সর্বশেষ ২০১৮ সালে একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল সাত উইকেটে।
এবার প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। এ লক্ষ্যে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদকে। টেস্টে ধরাশায়ী বাংলাদেশ জ্বলে উঠতে পারবে সংক্ষিপ্ত এই ক্রিকেটের ফরম্যাটে?
বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স অবশ্য অনেক কথাই বলেছেন বৃহস্পতিবার। বিসিবির পাঠানো ভিডিও বার্তায় তিনি বিশদভাবে বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন ক্রিকেটারদের শারীরিক অবয়ব নিয়ে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অনেকটা পাওয়ারের খেলা। কব্জির জোর থাকাটা খুব জরুরি। কারণ এই ফরম্যাটে প্রতি বলেই থাকে রান নেয়ার তাগাদা। সেই তুলনায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অনেকটাই পিছিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে শারীরিক গড়ন বড় একটা কারণ বলে মনে করেন বাংলাদেশের জেমি সিডন্স।
তিনি বলেন, ‘(ক্রিকেট) জাতি হিসেবে আমার মনে হয় না আমাদের খুব দীর্ঘকায় গড়নের খেলোয়াড় রয়েছে। যেমন জস বাটলার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৬ ফুট ২ ইঞ্চি, মার্কাস স্টয়নিস বড়সড় দৈহিক গড়ন… তাই আমাদের অন্যভাবে উপায় খুঁজতে হবে। আমরা শক্তির দিক থেকে অন্য দলগুলোকে পেছনে ফেলতে পারব না।’
বাংলাদেশের বোলিং বিভাগে আস্থা আছে সিডন্সের। তার মতে, ব্যাটসম্যানদের এখন কেবল প্রয়োজন ভালো একটা সংগ্রহ গড়া, ‘আমাদের বোলিং বিভাগ খুব ভালো। আমার মনে হয় না, আমাদের অনেক বেশি রান করতে হবে। একটা ভালো সংগ্রহ দাঁড় করাতে হবে। তো সিঙ্গেল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিততে হলে যে পাওয়ার হিটিংয়ে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। সিডন্সের মতে, ‘তবে পাওয়ার হিটিং অবশ্যই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতায়। যত বেশি বাউন্ডারি, তত বেশি ম্যাচ জেতা যায়। তাই আমাদের এখন পাওয়ার হিটিংয়ে মনোযোগ দিতে হবে, ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। অনেক চার মারতে হবে… আপনি জানেন এটি (চার মারা) অনেকগুলো ছক্কা মারার মতোই। আমরা যদি অনেক চার মারতে পারি, অনেক সিঙ্গেল নিতে পারি… পাশাপাশি কিছু ছক্কা হাঁকালে আমরা সংগ্রহ গড়তে পারব। এরপর আমাদের বোলিং আক্রমণ বাকিটা সামলে নিতে পারবে। আমাদের বিশাল স্কোর করতে হবে না।’
সিডন্স ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ শুরু করার পর কেবল দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। তাই এই সংস্করণে দলের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ তিনি।
তার মতে, ‘টেস্ট ম্যাচগুলো খুব ভালো যায়নি। তবে আমি এখন টি-টোয়েন্টির দিকে নজর দিচ্ছি। আমি আসার পর দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে ছেলেরা। তাই আমাদের ব্যাটিং নিয়ে মতামত দেয়ার মতো যথেষ্ট সময় আমি পাইনি। তবে আমি জানি, আমাদের দারুণ কিছু খেলোয়াড় রয়েছে। দেখা যাক পরের তিন টি-টোয়েন্টি কেমন কাটে।’
আগামী শনিবার ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। পরদিন একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ম্যাচ। ৭ জুলাই গায়ানায় হবে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।