মেধা-উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হতে যুবসমাজের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

Slider জাতীয়


রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দেশের যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি আজ ‘আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২২’ উপলক্ষে আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, এখনকার শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা পড়াশোনা শেষ করেই চাকরির পেছনে ছোটে অথচ সবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা একেবারেই অসম্ভব। এর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।

শিল্প মন্ত্রণালয় ও এসএমই ফাউন্ডেশনের এই আলোচনায় বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন না, অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন।

উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা দরকার, হয়তো সে সকল ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি, বিশেষ করে ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে। তবে এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রাণ কৃষি হলেও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষির পাশাপাশি শিল্পখাতের উন্নয়ন অনস্বীকার্য।

আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল বৃহৎ শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করে এসব শিল্প কারখানা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকেই বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্পায়নের ধারা এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।

অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অর্থাৎ এমএসএমই’র গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এমএসএমই খাতের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সুষম উন্নয়ন সম্ভব।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের শিল্পবান্ধব নীতি ও পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে শিল্পায়নে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

তিনি জানান, বিগত ১৩-১৪ বছরে দেশে বৃহৎ ও ভারী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এতে দেশব্যাপী কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

‘দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও পদ্মাসেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে,’ রাষ্ট্রপতি যুক্ত করেন ।

তিনি বলেন, দেশের বিপুল সংখ্যক নারী এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন করে ব্যবসায় মনোনিবেশ করছেন যা নারীর কর্মসংস্থান, ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে।

হামিদ আশা করেন, এ সকল পদক্ষেপ ও কর্মসূচির কারণে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা সৃজন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হবে।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ির কর্মকাণ্ড হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ আছেন তারা ব্যবসা শুরু করেই রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান নানা অজুহাতে তারা পণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেন।’

তিনিই উদ্যোক্তাদের রাতারাতি বড়োলোক হবার মানসিকতা ত্যাগ করার আহ্বান জানান এবং নিজের ব্যবসাকে স্থায়িত্ব দিতে হলে সততার সাথে এবং ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই ব্যবসা পরিচালনা করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘যুব সমাজের একটি বড়ো অংশকে যদি উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা যায় এবং তাদের জন্য ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, তবেই বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো: মাসুদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *