পদ্মাসেতু দিয়ে নয় ফেরিপথেই ঢাকায় আসছে ঢাকা-ফরিদপুর রুটের বাস

Slider বাংলার মুখোমুখি


ফরিদপুরের বাসমালিকরা এখনো পদ্মাসেতু হয়ে তাদের পরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেননি। টোল ইত্যাদি দিয়ে ওই পথে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় বাস চলাচলে লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তাই পদ্মাসেতু চালু হলেও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিপথেই ঢাকায় আসছে ফরিদপুরের বাস।

এদিকে পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর ফেরি রুটে ফরিদপুর থেকে ঢাকা বাসচলাচলে যাত্রীদের সময় কমেছে প্রায় এক ঘণ্টার মতো। রোববার কোনো ধরনের যানজট না থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি পার হয়ে ঢাকা যেতে আগের চেয়ে এক ঘণ্টা কম সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

যাত্রীরা জানান, রোববার ফরিদপুর থেকে ঢাকা যেতে সময় লেগেছে ৩ থেকে সোয়া ৩ ঘণ্টার মতো। আগে এই পথে ফরিদপুরের যাত্রীদের সময় লেগে যেতো চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার মতো।

তবে পরিবহনসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন ঢাকার অংশে মহাসড়কে ফোর লেন নির্মাণাধীন থাকায় সময় কিছু বেশি লাগছে। ফোর লেনের কাজ শেষ হলে এবং ফেরি ঘাটের রাস্তার উন্নতি হলে সর্বোচ্চ আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই তারা যাত্রী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে পারবেন।

জানা গেছে, আশির দশকের শুরুর দিকে ফরিদপুর থেকে ঢাকা রুটে সরাসরি বাস চলাচল শুরু করে পরিবহন কোম্পানিগুলো। তার আগে ঢাকার যাত্রীদের ভরসা ছিলো আরিচামুখী লোকাল বাস কিংবা ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট থেকে নৌপথে লঞ্চ মারফত চলাচল। তবে নব্বই সালের আগেই ফরিদপুর থেকে ঢাকার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাসই একমাত্র বাহন হয়ে উঠে।

শুরুর দিকে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগলেও সাম্প্রতিককালে যানজট ও অন্যান্য কারণে চার ঘণ্টার আগে ফরিদপুর হতে ঢাকা কিংবা ঢাকা হতে ফরিদপুর পৌঁছা সম্ভব হতো না। তবে পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন এখন মাওয়ামুখী। এর ফলে ফেরিঘাটের সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর নেই।

রোববার পদ্মাসেতু চালুর প্রথম দিনেই দেখা গেল, ফেরির জন্য নয় বরং গাড়ির জন্য ফেরিগুলো অপেক্ষায় বসে আছে।

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সদস্য রাজিব হাসান সুজন জানান, রোববার ভোরে সূর্যমুখীর ফাস্ট ট্রিপ (প্রথম গাড়ি) ফরিদপুর থেকে ছেড়ে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছেছে সোয়া তিন ঘণ্টার মধ্যে। আর বিকেলে এই পরিবহন ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে ফরিদপুরে পৌঁছেছে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে। আগে এই সময় লাগতো কমপক্ষে চারঘণ্টার মতো।

ফরিদপুরের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের গাবতলীর কাউন্টার মাস্টার তৌহিদ খান বলেন, তাদের পরিবহন ঢাকা থেকে ছেড়ে ফরিদপুরে পৌঁছতে রোববার সময় লেগেছে সোয়া তিন ঘণ্টার মতো। তিনি বলেন, ঢাকা হতে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে ফোর লেনের কাজ চলছে। এছাড়া পদ্মায় এখন ভালো স্রোতও রয়েছে। আর ফেরিঘাটের রাস্তাগুলোতে সমস্যাও আছে। এসব সমস্যা দূর হলে তারা আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই অনায়াসে ফরিদপুর হতে ঢাকা যাত্রী পরিবহন করতে পারবেন।

এদিকে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে যানজট কমে আসায় ফরিদপুরের পরিবহন মালিকেরা এখনো পদ্মাসেতু হয়ে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেননি। এই রুটে যানজট কম থাকায় এখন যাত্রী পরিবহন সহজতর হবে এবং পদ্মাসেতুর টোল দিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে গেলে তুলনামূলক কম লাভের আশঙ্কা করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই রুটে বাস চলাচলে লোকসানের ঝুঁকিসহ কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা রয়ে গেছে। তাছাড়া নতুন করে বাস চলাচল শুরু হলে একটি পরিবহনের কাউন্টার ও যাত্রী উঠানামাসহ যেসব জিনিস নির্ধারণ করা দরকার সেসব ব্যাপারেও তারা এখনো পরিষ্কার করে কোনোকিছু করে উঠতে পারেননি। এজন্য দেখে-শুনে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

ফরিদপুর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি এসএম শাহ্ আলম মুকুল বলেন, ‘রোববার পদ্মাসেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও ওই পথে ফরিদপুর থেকে আমরা কোনো বাস চলাচল চালু করছি না। আমরা এখনই বাস চালু করে দু’দিন পর লস দিয়ে বন্ধ করে দিলে তো হবে না।’

তিনি বলেন, আসলে মাওয়া রুটে ফরিদপুরের যাত্রী তেমন নেই। মূলত: বরিশাল থেকে হাজার হাজার যাত্রী যারা লঞ্চে যাতায়াত করতো তাদেরই একটা চাপ পড়বে। অন্যদিকে আমাদের যাত্রী যারা তারা ফিক্সড যাত্রী।

তিনি আরো বলেন, ফরিদপুরের ওপর দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যেসব গাড়ি চলাচল করে তারাই পদ্মাসেতু হয়ে চলাচল করবে। আর আমাদের তো পাটুরিয়া হয়ে অল্টারনেটিভ একটা পথ রয়েছেই। এজন্য এখনই লসে যেতে চাচ্ছি না। তবে দশ-পনের দিন দেখে তারপরে এ ব্যাপারে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেবো।

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সিদ্দিকী কামরুল বলেন, ফরিদপুর থেকে ঢাকা যেতে পদ্মাসেতু হয়ে বাস চলাচলে খরচ অনেক বেশি পড়ে যাবে। পথে পথে সড়ক ও সেতুর টোল দিতে হবে। তাছাড়া এই রুটে বাস কোথা থেকে যাত্রী তুলবে, কোথায় যাত্রী নামাবে সেগুলোও পরিষ্কার না।

এই পথে ঢাকা প্রান্তের বাসগুলো যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তানে পৌঁছাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব স্থানে ফরিদপুরের পরিবহনগুলোর কোনো কাউন্টারও নেই। এসব কারণে এখনই এই রুটে বাস চালু হচ্ছে না।

কামরুজ্জামান আরো বলেন, পদ্মাসেতু রুটে মূলতঃ বরিশাল, খুলনাসহ দূরবর্তী যেসব এলাকার বাস চলবে তারা খরচসহ পুষিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু ফরিদপুর থেকে সেতুর দূরত্ব খুবই কম। এতে তেমন ভাড়া পাওয়া যাবে না। আবার সেতু ও সড়কের টোল দিয়ে লাভের মুখও দেখা যাবে না।

ফরিদপুরের মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জুবায়ের জাকির জানান, রাজবাড়ী, ভোলা ও ফরিদপুর বাদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সব জেলা থেকেই রোববার থেকে পদ্মাসেতু হয়ে বাস চলাচল করবে। তবে ফরিদপুরের বাইপাস হয়ে এই রুটে অন্য কোনো জেলার বাস চলাচল করবে কিনা সেটি এখনো পরিষ্কার না।

ফরিদপুরের ঢাকামুখি অন্যতম পরিবহন কোম্পানি গোল্ডেন লাইনের কাউন্টার মাস্টার আজম জানান, আগামী এক তারিখ থেকে পদ্মাসেতু হয়ে তাদের পরিবহন ঢাকার পথে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে, পদ্মাসেতু হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ২৩ রুটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিসির বাস চলাচল করবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এসব রুটের মধ্যেও ফরিদপুর নেই। তাছাড়া জেলার ভাঙ্গা উপজেলাতেও কোনো বাস টার্মিনাল নেই। এর ফলে এই পথে চলাচলে ফরিদপুরের যাত্রীদের ভেঙ্গে ভেঙ্গেই চলাচল করতে হবে।

পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকা-ফরিদপুর বাস চালু না হলেও মাইক্রোবাস কিংবা প্রাইভেটকারের যাত্রীরা পদ্মাসেতুর অপরপ্রান্তে যেতে পারবেন বলে জানান বাস মালিকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *