রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া, সিট বাণিজ্য ও চলমান নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতীকী অনশন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত তিনি এই প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় অনশনে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের অনন্য অবদান রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সেই অবদানকে ক্ষুন্ন করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও নিপীড়ন করে মাঝরাতে হল বের করে দেয়া হচ্ছে। এটা কোনো সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায় না। পৃথিবীর কোনো দেশেই এরকম শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা কখনোই ঘটে না যেটা বাংলাদেশে ঘটছে। আমরা সচেতন শিক্ষকসমাজ অভিভাবক হিসেবে এ অসভ্যতা মেনে নিতে পারি না। অবিলম্বে এ ধরনের অসভ্যতা, নিপীড়ন ও অধিকার থেকে বঞ্চনা বন্ধ করতে চাই।
তিনি বলেন, অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কেউই ছাত্রলীগ কর্তৃক এই নৈরাজ্যকর এই পরিস্থিতিকে পছন্দ করছেন না। কিন্তু তারা কোনো কারণে প্রকাশ্যে এসে এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেন না। মনে হচ্ছে তারা সবাই একটা ভয় ও অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আমি জানি না কোথায় তাদের অসহায়ত্ব। এটা খুবই দুঃখজনক। এই সময়ে এসেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন বিভিন্ন ইস্যুতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চলমান অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
অনশনে সংহতি জানিয়ে অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, প্রশাসন থাকা স্বত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন বন্ধু আরেকজন বন্ধুকে, একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রকে হল থেকে বের করার ঘটনা ঘটছে। এটা শুধু একটা কালচারের পরিবর্তনই নয় বরং মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। এটা এক প্রকার জঙ্গি আচরণ। এই কালচারের পরিবর্তন না হলে পরবর্তীতে এই সন্ত্রাসীরা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে গিলে খাবে।
অনশনে বীর মক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব নিয়েই আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। সেই চেতনা থেকে যেখানেই কোনো অন্যায়-অত্যাচার হয় সেখানেই তার প্রতিবাদে সামিল হই। এছাড়া শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে চলমান এমন নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদগুলো সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া উচিত।