গরুর মাংস ধনীর খাবার, অন্যদের স্বপ্ন

Slider বিচিত্র


মধ্যবিত্ত আর গরিব মানুষদের কাছে দুর্লভ ও আভিজাত্যের খাবারে পরিণত হয়েছে গরুর মাংস। তাদের মনকে একরকম মানিয়েই নিতে হয়েছে যে, এই মাংস আমাদের জন্য নয়। তবুও মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে দামটা জিজ্ঞেস করেন অনেকে। দাম শুনে আস্তে ধীরে পিছু হটেন তারা। মাংসের দাম কিছু মানুষের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও দেশের বড় একটা শ্রেণির জন্য খুবই কষ্ট আর যন্ত্রণার।

ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা শুক্রবার এলেই দিনটিকে অনেকটা ঈদের মতোই মনে করেন। কিন্তু সেটি মসজিদ আর নামাজেই সীমাবদ্ধ। বাসায় ভালো কিছু রান্না কিংবা গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াটা যেন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার (২৪ জুন) সকালে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা ও মেরুল বাড্ডা এলাকার একাধিক মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানের সামনে দর্শনার্থী বেশি থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম।

বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত জাহিদ হাসানের সঙ্গে কথা হলে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, মাংসের দাম আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অনেকেই হয়তো কিনতে পারছেন, কিন্তু মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে গরুর মাংস কেনা যেন স্বপ্ন। এভাবে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেল দামটা। ফলে অনেকটাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে মাংস কেনা।

তিনি বলেন, গরুর কলিজার দাম মাংসের চেয়ে কম ছিল। এখন সেটিও মাংসের দামেই বিক্রি হচ্ছে। সবকিছুই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই। দাম যদি একটু কমতো, তাহলে হয়তো সবাই কিনে খেতে পারতেন।

মাংসের বাজার প্রসঙ্গে হতাশা ব্যক্ত করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বাজারের কথা বলে ভাই লাভ নেই। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষ আসলে অসহায় হয়ে পড়েছে। বাজারের এদিকে ৬৮০ টাকা করে বিক্রি হলেও ওই পাশে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা করে। অথচ গতবছরেও মাংসের দাম ছিল ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি।

বাজারে শুধু মাংসই নয়, প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কষ্ট হলেও সাধারণ মানুষও যেন অনেকটা সয়ে গেছে। মাংসের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরেক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ৬৮০ টাকা কেজি করে মাংস নিয়েছি। বাজার অনুসারে দামটা আমার কাছে ঠিকই মনে হয়েছে। কারণ প্রতিটি পণ্যেরই দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে মাংসের দামটা ঠিকই আছে।

সাম্প্রতিক সময়ের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে মাংসের দাম একবার বাড়লে পরবর্তীতে কমার কোনো ইতিহাস নেই এই। এ বছরের জানুয়ারিতেই যে গরুর মাংস ছিল কেজিতে ৫৮০ থেকে ৬০০ ও ফেব্রুয়ারিতে ৬৫০ টাকা, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে।

বিক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম বেশি থাকায় বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। দাম কমলে তারাও কম দামে বিক্রি করবেন।

মধ্য বাড্ডা বাজারের জাকির হোসেন নামের এক বিক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরুর দাম বেশি, কী করমু কন। গরু যারা পালে তারা বলে গরুর খাবারের দাম বেশি। কৃষকরা গরু বিক্রি করতে চায় না। ওনারও তো গরু লালন-পালন করেন একটু ভালো দামে আশায় বিক্রির আশায়। এখন আমরা যদি কম দামে আনতে পারি, তাহলে কম দামে বিক্রি করতে পারব।

তিনি বলেন, গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৬৮০ টাকা করে বিক্রি করছি। এই দামে ভালোই বিক্রি হয়। গরুর কলিজাও মাংসের মতো একই দাম। ভেতরের হাড় ফেলে দিয়ে মাথার দাম ৪০০ টাকা কেজি। গরুর পায়ার (পা) একেকটার একেক দাম। ছোট গরুর এক হালি পায়া বিক্রি করি ৮০০ থেকে এক হাজার, আর বড় গরুর ১৪শ-১৫শ টাকায় বিক্রি করি।

সামনের দিনে দাম আরও বাড়বে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করছি সামনে আর দাম বাড়বে না। ঈদের মধ্যে যদি গরু আমদানি বেশি হয় তাহলে দাম একটু কমবে। আর যদি আমদানি কমে তাহলে দাম বেড়েও যেতে পারে।

মেরুল বাড্ডা কাঁচাবাজারেও গরুর মাংস ৬৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম প্রসঙ্গে আবু তাহের মোল্লা নামের এক বিক্রেতা বলেন, সবজায়গায় ৭০০ টাকা কেজিতেই বিক্রি করছে। আমার নতুন দোকান তাই ৬৮০ টাকা করে বিক্রি করছি। মগজ বিক্রি করছি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। কলিজার দামও মাংসের দামের মতোই বিক্রি করছি। বড় গরুর পায়া বিক্রি করছি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা হালি, দেশি ছোট গরুর পায়া ৮০০ থেকে এক হাজারে বিক্রি করছি।

ঈদ ও চলমান বন্যার প্রভাবে দাম বাড়বে কি-না জানতে চাইলে আরেক বিক্রেতা বলেন, ঈদে মাংসের দাম বাড়বে না। হয়তো গরু একটু বেশি দামে কিনতে হবে, কিন্তু আমরা দাম বাড়াব না। বন্যায় কিছু এলাকায় গরু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটা মাংসের বাজারে প্রভাব পড়বে না। আমরা মূলত গরুগুলো বিভিন্ন ফার্ম থেকেই আনি, বন্যায় ফার্মগুলোর কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে এখনো শুনিনি। তাছাড়া আমাদের কাছেও পর্যাপ্ত গরু মজুদ আছে। আশা করছি বন্যার প্রভাবেও মাংসের দাম বাড়বে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *