পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির যত বিতর্কিত মন্তব্য

Slider রাজনীতি


প্রকল্প যাত্রা থেকে বাস্তবায়ন, পুরো সময়টাই পদ্মা সেতু নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। কখনো বিরোধিতা, কখনো দুর্নীতির অভিযোগ, কখনো বা সেতুর পেছনে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি। নানা সময়ে এমন নানা অবস্থান নিয়ে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দলটি। এমনকি বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোর পর কেউ কেউ দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও। আর বিএনপি চেয়ারপারসন তো প্রকাশ্য সমাবেশেই নেতাকর্মীদের বারণ করেন সেতুতে ওঠতে।

জাতীয় সক্ষমতার প্রতীক হয়ে যে সেতু আজ দাঁড়িয়ে পদ্মার বুকে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও হয়নি কম জলঘোলা। বিশ্বব্যাংকের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানের মধ্যে পদ্মা প্রকল্পকে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক নেতারা এমন সব তোপ দাগানিয়া মন্তব্য করেছেন একের পর এক।

২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল এমন- ‘পদ্মা সেতু কি হচ্ছে? হচ্ছে না। এ সরকার পদ্মা সেতুও করতে পারল না।’

এর পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি আবারও একই ধরনের মন্তব্য বিএনপি চেয়ারপারসনের। আবারও কটাক্ষ করে বলেন, ‘পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে আর হবে না। আর যদি সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানায়, সেই সেতুতে কেউ ওঠতে যাবেন না। অনেক রিক্স আছে।’

পিছিয়ে ছিলেন না দলের অন্য নেতারাও। সুর মেলাতে থাকেন বেগম জিয়ার বক্তব্যের সমর্থনে। বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, ‘টিকবে না পদ্মা সেতু।’ ১১ জানুয়ারি তিনি বলেন, ‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের ওপরে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো উনি (খালেদা জিয়া) ভুল বলেননি। এটা সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, পদ্মা সেতু রং (ভুল) ডিজাইনের ওপরে নির্মিত হচ্ছে।’

অবশ্য প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই বেশ আক্রমণাত্মক বিএনপি নেতাদের বক্তব্য। ‌ঋণ বাতিলের ঘোষণার দিনই বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিভিন্নভাবে চেষ্টা করলেও পদ্মা সেতু আর হবে না আওয়ামী লীগ আমলে। দুর্নীতির কাঠগড়ায় দাঁড় করান প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারকে।’

২০১২ সালের ১ জুলাই খালেদা জিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত। সেতুর কাজ শুরু হওয়ার আগেই সরকার বিরাট দুর্নীতি করেছে। তাই এ সরকারের আমলে আর পদ্মা সেতু হবে না।’

আর দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার। সমালোচনা করা হয়, বিকল্প অর্থায়ন অনুসন্ধানের। বলা হয়, ‘দুর্নীতির দায় নিয়ে সরকারের এখনই সরে যাওয়া উচিত। এই সরকার এখন আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিতে স্বীকৃত।’

সেতু নির্মাণ নয়, বরং ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতিই সরকারের লক্ষ্য- এমন ছিল ব্যারিস্টার মওদুদের কণ্ঠে।

২০১২ সালের ১৫ জুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ ছিল, নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর নামে নির্বাচনী তহবিল করতে চায় সরকার। সেতু নির্মাণের নামে টাকা সংগ্রহের নতুন ধান্ধা শুরু করেছে। আর পদ্মা প্রকল্প ডেকে আনবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু- এমন ভবিষ্যৎবাণী করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ।

এমনকি কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরও বিএনপি নেতাদের সাফাই ছিল বিশ্বব্যাংকের সমর্থনে।

আর পদ্মা সেতু যখন রূপ নিল বাস্তবে, তখনও থেমে নেই কটাক্ষ। চলতি বছরের ২৭ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘আজকের এই পদ্মা সেতুতে ওঠার আগে আমাদের চেক করে দেখতে হবে আবার বাঁশ দিয়েছেন কি না।’

আবার নিজেদের কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টায় বিএনপি মহাসচিব। ৫ জুন তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় পদ্মার দুই পাড়েই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন খালেদা জিয়া।’ যদিও তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার দাবি, ‘মির্জা ফখরুলের এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *