আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না: আইনমন্ত্রী

Slider জাতীয়


‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস বিল উত্থপানের আগে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের আপত্তির জবাব দিতে গিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না। মাননীয় স্পিকার আমি আপনার মাধ্যমে বলতে চাই উনি যে বিচারের কথা বললেন, আপনি কি ভুলে গেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট এর ঘটনার কথা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যের হত্যার পরে কি বিচার হয়েছিল? তাদেরকে বিচার করা দরকার ছিল কিনা? উনারা এখন কি বলবেন আমি জানি না, হয়তো বা বলবেন ইনডিমিনিটি অর্ডার করে বন্ধ করা হয়।

আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার পাওয়া বন্ধ করেছিলেন তারাই। আর এখন তাদের কাছ থেকে বিচার শিখতে হবে? এখন হয়তো তারা বলবেন এটা খন্দকার মোশতাক করেছিলেন। তারা ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৭৫ থেকেও ১৯৮১ সাল পর্যন্ত। বারবার তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় এসেছিলেন কিন্তু ইনডিমিনিটি কিন্তু তোলেন নাই। আর এখন উনারা আইন শেখান। তার কাছ থেকে আমাকে আইন শিখতে হবে..?

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ সংসদের ১৮তম (বাজেট) অধিবেশনের বৈঠকে ‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস বিল উত্থাপনের আগে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এরআগে বিএনপি সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আওয়ামী লীগ সরকারের ঘন ঘন আইন পাশের উল্লেখ করে বলেন, আমি ‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস বিল’-এর বিরোধীতা করছিনা। তবে সরকার নিজেদের সুবিধার জন্য প্রায়শ সংসদে বিল পাস করে যাচ্ছে। কিন্তু যেসব আইন হচ্ছে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আইনের ব্যত্বয় ঘটছে। আইনের বৈষম্য ঘটছে। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে ন্যায় বিচার সংক্রান্ত সুরা মায়েদার আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, যারা নিজেরা খেয়াল খুশিমতো আইন করেন, কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন হয় না। কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম জাতীয় সংসদের সদস্য হাজী সেলিম দণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আইন মেনেই গেছেন। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিদেশে চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি, আদালত বলেছে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এখানে আইনের বৈষম্য করা হয়েছে।
এসময় হারুণ আরো বলেন, আমরা দেখছি সরকারি দলের কর্মসূচি পুলিশের প্রহরায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিন্তু বিরোধী দলকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। এখানে আইনের শাসন বলে কিছু নেই, তাহলে এই আইন করে কি লাভ। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঘটনা ঘটেছে একটি সভ্য রাষ্ট্রের এই ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটে। আমরা দেখেছি একজন ছাত্রীকে কিভাবে ছাত্রনামধারী গুণ্ডারা নির্যাতন করেছে, তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকার যে আইন করছেন এই আইন কার জন্য করছেন?

এসময় স্পিকার ড. শিরীনর শারমিন চৌধুরী বিএনপির এই সংসদ সদস্যকে বার বার থামতে বলেন। স্পিকার বলেন, আপনার আপত্তিটা কোথায়? বিলটির বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে তা নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু হারুণ নিজের মতো বক্তব্য রাখতে থাকেন। এসময় সংসদে হৈ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেও হারুন বলেন, এ বিলে বিচারকদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে তাতে আমার আপত্তি নেই, তবে বিচার ব্যবস্থাকে হরণ করা হচ্ছে এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রতি উত্তরে সংসদে দাঁড়িয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ যে কথা বললেন তার কথা শুনে হাসব না কাঁদবো এটা আমি বুঝতে পারছি না। তার কারণ তিনি যে জ্ঞান দিলেন তাতে আমি বুঝে উঠতে পারছিনা- আমি আইন সম্পর্কে কিছু বুঝি কিনা? আইন সম্পর্কে বিএনপি আমলে যা হতো তাতে তার নিজেরই বোধদয় হওয়া উচিৎ। আইন মন্ত্রী আরো বলেন, এখন বলতে পারি জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ১৫ ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে, জেল হত্যার বিচার চলছে। আর সাহস করে বিচারপতিরা এই বিচার করায় আজ তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আইন করা হচ্ছে। আর আপনারা আইন শেখাচ্ছেন। মাননীয় স্পিকার আমাকে বিএনপির কাছ থেকে আইন শিখতে হবে..? এর পরে আইনমন্ত্রী সংসদে বিলটি উত্থাপণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *