খাদ্যদ্রব্যের বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না

Slider সারাবিশ্ব


ঢাকা: নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াতে খাদ্যদ্রব্যসহ অর্থনীতিতে যে বৈশ্বিক সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। এ সংক্রান্ত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে সরকার আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে থাকা এবং অর্থনীতির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্যপণ্যসহ অন্যন্যা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামের ঊর্ধ্বগতিও এরই মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞরা খাদ্য সংকট তৈরির আশঙ্কা করছেন এবং এ বিষয়ে তারা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

গত ১৯ মে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সামনের মাসগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট তৈরি হতে পারে। সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এই যুদ্ধের (ইউক্রেন-রাশিয়া) কারণে দাম বাড়ায় দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। তার আশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে রপ্তানি স্বাভাবিক না হলে বিশ্ব দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে। খাদ্য সংকটের কারণে কোটি কোটি মানুষ অপুষ্টি, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে। ইউক্রেনের খাদ্যশস্য স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা ছাড়া খাদ্য সংকটের কার্যকর কোনো সমাধান নেই। একই ভাবে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া ও বেলারুশের সারেরও বিকল্প নেই।

এদিকে বাংলাদেশে এর প্রভাব সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে থাকায় সরকারের নীতিনির্ধারকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে এ আশঙ্কা থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তৎপরতা শুরু করেছে। এই সংকটের প্রভাব যাতে না পড়ে সে জন্য করণীয় কী হবে- সে বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলার সংকট মোকাবিলাসহ বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণে অর্থ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে জরুরি সমন্বয় বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৯ মে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

গত রোববার (২২ মে) এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সারা বিশ্বে যে প্রভাব পড়েছে তার থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন না। বাংলাদেশেও এর প্রভাব বিস্তার করবে তার আলামত আমরা কিছু কিছু দেখতে পাচ্ছি।

যদিও সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না বলে আশা করছেন। বাংলাদেশের খাদ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে এ ধরনের কোনো সংকট তৈরি বা সমস্যা হবে না। তাছাড়া সংকট মোকাবিলায় আগে থেকেই সরকার করণীয় নির্ধারণে সচেষ্ট আছে বলে জানান তারা।

জাতিসংঘ থেকেও বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়ার কোনো আশঙ্কা আছে কি-না জানতে চাইলে পরষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, না, আমরা এখনও অনেক ভালো অবস্থানে আছি। কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সরকার চেষ্টা করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে চেষ্টা করছেন সেভাবে চললে সাধারণ মানুষের গায়ে তাপ লাগবে না বলে আশা করি।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরাতো বিশ্বের মধ্যেই আছি। সারা পৃথিবীতে যেটার প্রভাব পড়বে, সেটা তো এখানেও পড়তে পারে। করোনোয় সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তো এর বাইরে না। তবে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে, জনগণ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে।

সোমবার(২৩ মে) এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, বাংলাদেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার হবে না। সারা বিশ্বে যখন খাদ্যের দাম বাড়ে তখন এখানেও (বাংলাদেশে) খাদ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে দেশে প্রচুর খাদ্য মজুদ আছে। সামনে আউশ চাষাবাদ হবে, আশা করা যায়, উৎপাদনও ভালো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *