বিক্রমাসিংহে আস্থা নেই লঙ্কান বিরোধীদের

Slider সারাবিশ্ব


নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধীদল। দেশের সর্বনাশা অর্থনৈতিক সংকটের দায় নিয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে হবে বলে তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) ষষ্ঠ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। কিন্তু বিরোধীদের মন্তব্য আভাস দিচ্ছে, এতে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট মিটছে না।-খবর রয়টার্স ও আল-জাজিরার

ক্ষমতাগ্রহণের পর বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিক্রমাসিংহে বলেন, আপাতত পরিবারগুলোর জন্য তিনবেলা খাবার নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন তিনি। এজন্য সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসব। অর্থনীতি ভালো অবস্থায় পৌঁছার আগে আরও অবনতির মুখ দেখবে।

বিক্ষোভকারী ও সরকার সমর্থকদের মধ্যে এক সপ্তাহের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। গেল সোমবার প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ান গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে। আত্মরক্ষার জন্য পরবর্তী সময়ে তিনি একটি সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কার পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছে।

প্রধান বিরোধীদল সমাজি জানা বালাওয়েগায়ার জ্যেষ্ঠ সদস্য ও এমপি ইরান বিকরামারাত্নে বলেন, এটি খুবই পরিষ্কার যে, নতুন প্রধানমন্ত্রীকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি গোতাবায়ার একজন ‘দূর-নিয়ন্ত্রিত’ প্রধানমন্ত্রী। কাজেই প্রেসিডেন্টকে সরে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসী এখন এটিই চাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।

কলম্বোতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন টেম্পল ট্রির বাইরে ক্যাম্প তৈরি করে এক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। তারাও নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিরোধিতা করেছেন।

‘গোটা গো হোম’ বিক্ষোভস্থলে কয়েক শ মানুষ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরই একজন চামালাগে শিবকুমার বলেন, মানুষ ন্যায়বিচার পেলেই আমাদের লড়াই থেমে যাবে। তারা যাকেই প্রধানমন্ত্রী বানান না কেন, মানুষের স্বস্তি আসার আগ পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ বন্ধ করব না।

৭৩ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহের রাজনৈতিক দলের নাম ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি। দলের হয়ে পার্লামেন্টে একমাত্র প্রতিনিধি তিনি। একটি জোট সরকার গঠন করতে হলে বিরোধী রাজনীতিবিদদের ওপর নির্ভর করতে হবে তাকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বিরোধী আইনপ্রণেতা হর্ষ ডি সিলভাকে। কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে তা প্রত্যাখ্যান করেন। বরং সরকারের অপসারণেই সমর্থন জানাবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।

২২৫ আসনের পার্লামেন্টে রাজাপাকসে পরিবারের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রায় ১০০টি আসন। আর বিরোধীদের আসন ৫৮টি। বাকিরা স্বতন্ত্র।

এক বিবৃতিতে হর্ষ ডি সিলভা বলেন, মানুষ কোনো রাজনৈতিক খেলা কিংবা সমঝোতা চাচ্ছে না। তারা নতুন একটি ব্যবস্থা চাচ্ছে, যা জনগণের ভবিষ্যতের রক্ষাকবচের ভূমিকা রাখবে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পতনের দাবিতে আন্দোলনে তিনি যোগ দেবেন। তাকে পদে রেখে কোনো রাজনৈতিক সমাধানে সমর্থন দেওয়া সম্ভব না।

শুক্রবার ভারত, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিক্রমাসিংহে। এক টুইটবার্তায় কলম্বোয় ভারতীয় হাইকমিশনার বলছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

কৌশলগত দ্বীপরাষ্ট্রটিতে প্রভাব বিস্তারে চীনের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ভারত। এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজপথ রয়েছে শ্রীলঙ্কা ঘেঁষে। এছাড়া দুদেশের অর্থায়নে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পও রয়েছে শ্রীলঙ্কায়।

গত কয়েক মাস ধরে শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি সংকট চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাল পুরো দেশটিকে বিবর্ণ করে দিয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। এসব সংকট নিরসনে ইতিমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভের উপশম হবে না। চলমান সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেই দায়ী। ১৯৪৮ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর আর কখনো এতো ভয়াবহ নৈরাজ্য দেখা যায়নি।

দ্বীপরাষ্ট্রটিতে খাদ্য ও জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। এছাড়া বাজারে যা পাওয়া যাচ্ছে, তাও অধিকাংশের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য লঙ্কানরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।

শ্রীলঙ্কার মুদ্রা রুপির মান পড়ে গেছে। এ বিপর্যয়ের জন্য করোনা মহামারিকে দায়ী করতে চাচ্ছে দেশটির সরকার। অতিসংক্রামক ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবে দেশটির পর্যটননির্ভর অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। অথচ পর্যটন শিল্প দিয়েই তাদের বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার আয় হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে তাতে ধস নেমেছে।

বছর তিনেক আগে গির্জায় কয়েক দফায় প্রাণঘাতী বোমা হামলার পর পর্যটকদের মধ্যে ভীতি ঢুকে গেছে। তারা দেশটিতে ভ্রমণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। যার প্রভাব পড়েছে লঙ্কান অর্থনীতিতে।

রয়টার্সের খবর অনুসারে, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, করোনা মহামারি ও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় রাজকোষে টান পড়েছে।

এতে ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবারের ওপর মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। লোকজন মনে করেন, দেশের অর্থ লুটপাট করতে স্বজনদের সুযোগ করে দিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এর মাধ্যমে তিনি নিজেও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

প্রেসিডেন্টের সব ভাই ও কয়েকজন ভাতিজা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। পরে বিক্ষোভের কারণে তাদের পদত্যাগ করতে হয়েছে। ক্ষোভ থেকে বাঁচতে কয়েকজন ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েও পালিয়েছেন।

দ্বীপটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আগামী দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংকটের সমাধান সম্ভব হবে না। এতে নাগরিকদের দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। এছাড়া অস্থিতিশীলতার অবসান না ঘটলে তিনি নিজেও পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *