বাস, ট্রেন, লঞ্চে মানুষের স্রোত

Slider জাতীয়


দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের ভিড়। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

যাত্রাপথের ভোগান্তি সয়ে ঈদে ঘরে ফেরার গল্প নতুন নয়। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর আবার সেই চিত্র, রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর থেকে ঘরমুখো মানুষের স্রোত। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। দুপুরের পরই নাড়ির টানে রাজধানী ছাড়তে শুরু করে মানুষ।

বাস, ট্রেন, লঞ্চ—সব যানেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এতে ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা।
ঢাকার রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া না গেলেও যাত্রাপথের কষ্ট ছিল। প্রথম দিনের তুলনায় রেলের সময়সূচি গতকাল অনেকটা উন্নতি করেছে। তবে মহাসড়ক ও ঘাটে যানজট বেড়ে গেলে বাসের সময়সূচিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাসে শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা

গতকাল দুপুরের পর থেকে বাসে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করে। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ বাড়লেও ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দই তাঁর কাছে মুখ্য বলে জানালেন মাগুরার যাত্রী রোমেল। তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ছে, পথে কিছু ভোগান্তি তো হবেই। আগামী বছর পদ্মা সেতু দিয়ে যেতে পারব, ঘাটের ফেরির যন্ত্রণা আর থাকবে না। ’

বাসের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনটি টার্মিনালের বিভিন্ন বাসের কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা। গাবতলী টার্মিনালের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের

কাউন্টার ব্যবস্থাপক তরুণ কুমার বলেন, পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে ট্রাকের দীর্ঘ সারি থাকায় যানজটে পড়তে হচ্ছে বাসযাত্রীদেরও। এ কারণে যাত্রী পৌঁছে দিয়ে আবার সঠিক সময়ে বাস গাবতলী টার্মিনালে ফিরতে পারবে কি না নেই আশঙ্কা রয়েছে।

কাউন্টারের ব্যবস্থাপকরা বলছেন, ঘাটে যানজটের বিষয়টি জেনে ভোগান্তি এড়াতে ও সময় বাঁচাতে দেশের দক্ষিণ-পাশ্চিমাঞ্চলগামী অনেক যাত্রী ঢাকা থেকে সেলফিসহ বিভিন্ন পরিবহনে পাটুরিয়া ঘাটে চলে যাচ্ছে। সেখানে লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে স্থানীয় বিভিন্ন জেলার বাসে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে।

গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরাঞ্চলগামী পরিবহনের একাধিক কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে যানজট হচ্ছে বড় সমস্যা। ওই যানজট ধাক্কা গাজীপুর পর্যন্ত পৌঁছায়। ঈদে এই এলাকার যানজট কমানো না গেলে উত্তরাঞ্চলের বাস সময়মতো ছাড়া যাবে না।

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতকারী পরিবহনগুলোর মালিক ও কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা বলেন, টঙ্গী থেকে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় স্বাভাবিক সময়েই যানজট লেগে থাকে। ঈদের সময় এই এলাকার যানজট বাড়লে মহাখালী বাস টার্মিনালে সব বাসেরই সময়সূচি এলোমেলো হতে পারে।

সায়েদাবাস বাস টার্মিনালের মালিকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়েই যানজট থাকে। ঈদ যাত্রা শুরুর পর তাঁরা ওই এলাকার যানজট নিয়ে বেশ আতঙ্কে আছেন।

রাতের লঞ্চ দুপুরেই যাত্রীভর্তি

গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে সদরঘাট লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাপ বাড়ছে। রাত ৯টার লঞ্চেও যাত্রীরা জায়গা নিয়ে বসছে। বিকেল ৩টার মধ্যেই বেশির ভাগ লঞ্চের কেবিন বুক হয়ে গেছে।

সুরভী-৭ লঞ্চের ডেকে কথা হয় বাকেরগঞ্জগামী যাত্রী মো. শাহ আলম মৃধার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১২টার দিকে চলে আসছি। হেই সময় না আসলে ডেকেও জায়গা পাইতাম না। ’

লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীরা সকাল থেকেই আসা শুরু করেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) অনুমতি পাওয়া গেলে লঞ্চ ভরলেই ছেড়ে দেওয়া হবে।

ঢাকা-হুলারহাট-ভাণ্ডারিয়া রুটের পারাবত-৮ নামের লঞ্চের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মানুষ টিকিট কেনার সময় জাতীয় পরিচয় নম্বর চাওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও অনেকের কাছে চাওয়া হচ্ছে না।

লঞ্চের সুপারভাইজার আব্দুল জলিল মোল্লা বলেন, সবার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষই আনছে না। ফলে মোবাইল নম্বর নিয়ে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ’

ঘাট সূত্র জানায়, ঈদের আগে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫টি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে গেলেও ঈদের কয়েক দিন আগে সেই সংখ্যা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০টি হয়েছে।

রেলেও ভিড়

তুলনামূলকভাবে ঈদ যাত্রার দ্বিতীয় দিন গতকাল রেলে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। প্রায় সব রেলই কমলাপুর থেকে সময়মতো ছেড়ে গেছে। কাউন্টারে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকলেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে প্ল্যাটফরমেই হাতে লিখে টিকিট তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা

ঘরমুখো মানুষের স্রোতে ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। আজ শুক্রবার থেকে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ঢাকা আরো ফাঁকা হয়ে পড়বে। গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান, কমলাপুর, পল্টন, রামপুরা, ফার্মগেট ও বাড্ডা এলাকার মতো ব্যস্ত সড়কও ফাঁকা দেখা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *