সংঘর্ষের পর ক্লাস-পরীক্ষা ‘স্থগিত’ করল ঢাকা কলেজ

Slider শিক্ষা


রাজধানীর ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে। সোমবার ভোর ৪টার দিকে ঢাকা কলেজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নির্দেশনায় দেওয়া ওই ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়, ‘অনিবার্য কারণে ১৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক ও অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণির সকল ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ স্থগিত করা হলো। সকল শিক্ষককে সকাল ১০টার মধ্যে কলেজে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এর আগে, সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের পর রাত আড়াইটার দিকে দুই পক্ষকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই ব্যবসায়ী। এছাড়া পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন ঢাকা কলেজের চার শিক্ষার্থী। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে আহত দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন- মোশাররফ হাজারি (২৪) ও রজব রহমান (২৭)।

শিক্ষার্থীরা জানান, পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে মোশারফ হোসেন বুলেটবিদ্ধ হন। অন্যদিকে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার শেল রজবের বুকে লাগে। আহতদের মধ্যে মোশাররফের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন। ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চলে গেছেন।

তবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ- এমন অভিযোগ করে কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা হলের ছাদে ও তেলের পাম্প এলাকায় অবস্থান নেন।

দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে রাস্তার দুই পাশে রাখা একাধিক মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুরো রাস্তাজুড়ে ইটের টুকরা ও কাঁচ ভাঙা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ আসলে রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষের জেরে মিরপুর রোডের বন্ধ হয়ে যাওয়া যান চলাচল শুরু হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে যান। কেনাকাটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে- এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে নিউমার্কেট এলাকায় যান ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী। পরে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, নিউমার্কেটের একটি ফাস্টফুডের দোকানে খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীরা লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে তাদের মারধর করেন।

এসময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ও ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে রমনা জোনের এডিসি হারুন-অর রশিদ ও অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। রাত পৌনে ১টার দিকে যোগ দেয় অতিরিক্ত পুলিশ। তারা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ১৫-২০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের রাবার বুলেটও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) শরীফ মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এডিসি হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষ খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। দেখতে পাই- শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা মুখোমুখি অবস্থানে। দুপক্ষই ইটপাটকেল ছুড়ছেন। আড়াই ঘণ্টা পর উভয়পক্ষকে শান্ত করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে গেছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *