বাঙ্গালি জাতি, বাংলা ভাষা ও বাংলা দিন, সপ্তাহ, মাস ও সনের ইতিহাস : বিতর্ক ও বাস্তবতা

Slider সাহিত্য ও সাংস্কৃতি


আসাদুজ্জামান আকাশ (গাজী আকাশ): বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলি। ভাষার বিচারে নিজেকে বাঙ্গালি হিসেবে চিনি, জানি ও পরিচয় দেই; (পার্বত্য অঞ্চলের কিছু আদিবাসী ব্যতীত)। ভারতের কিছু রাজ্যের মানুষও বাংলাভাষী। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গসহ এর আশ-পাশের অঞ্চল সমূহে। এরা ধর্মীয় দিক থেকে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেনো, ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে নিজেকে বাঙ্গালি বলেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করে। কিন্তু অনেকেই জানিনা, যে ভাষায় কথা বলছি, তার উৎপত্তির ইতিহাস। নিজেকে কেনো বাঙ্গালি হিসেবে পরিচয় দেই? তাও অনেকেই জানি না। তাই সংক্ষিপ্ত আকারে ইতিহাসকে নামমাত্র স্পর্শ করে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের আলোকে তুলে ধরছি বাংলা ভাষা, বাঙ্গালি জাতি ও বাংলা সনের ইতিহাস।

বাঙালি জাতি দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ একটি ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠীর নাম। স্থানীয় জনসংখ্যা স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বরাক উপত্যকা এবং নি¤œ আসাম ও মণিপুরের কিছু অংশের মধ্যে বিভক্ত। তাদের অধিকাংশই বাংলায় কথা বলে, যা ইন্দো-ইরানী (খ্রিস্টপূর্ব -২৫০০ অব্দ) ভাষাসমূহের বিশেষ একটি ভাষা, বংশ পরম্পরায় শতম, ভারতীয় আর্য, ইরানীয়, আদিম প্রাকৃত, গৌড়ী প্রাকৃত, অপভ্রংশ, বাঙ্গকামরূপী, বাঙ্গালা পরিবর্তিত হয়ে আজকের ব্যবহৃত বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে।

উইকিপিডিয়ার সূত্রমতে “বাঙালি” শব্দটি বর্ণনা করে এমন একজনকে, যার ভাষাগত, বংশগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয় মূলত বাংলার মাটি থেকে। এই ইন্দো-আর্য বাঙালি জাতি বাংলার অন্য অনার্য জাতিগুলো থেকে আলাদা। বাঙালি এবং বাংলা, উভয় শব্দের উৎপত্তি হচ্ছে বাঙ্গালা শব্দ থেকে, যা ছিল ফার্সী ভাষায় এই অঞ্চলের নাম। মুসলমানদের প্রসারের আগে, বাঙ্গালা বা বাংলা নামে কোন অঞ্চল ছিল না, কারণ এই অঞ্চলটি অসংখ্য ভূরাজনৈতিক উপরাজ্যে বিভক্ত ছিল। যেমন দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গ (যার নাম থেকে বাঙ্গালা শব্দ এসেছে বলে মনে করা হয়), পশ্চিমাঞ্চলের রাঢ়, উত্তরাঞ্চলের পু-্রবর্ধন ও বরেন্দ্র, এবং পূর্বাঞ্চলের সমতট ও হরিকেল। প্রাচীন কালে, এই অঞ্চলের মানুষ এসব বিভাগগুলির নাম দিয়ে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় দিতেন। যেমন মহাভারতের মত বৈদিক গ্রন্থগুলিতে পু-্র নামের একটি জাতির উল্লেখ আছে।
ইব্রাহিমীয় ও ভারতীয় ধর্মগুলির ইতিহাসবিদরা মনে করে যে প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে বঙ্গ নামক এক ব্যক্তি যিনি এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিলেন। ইব্রাহিমীয় বংশবিজ্ঞানীরা ধারণা করতেন যে, বঙ্গ ছিল নূহের ছেলে হামের নাতি। ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম ‘বঙ্গ’শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপুর্ব ৩০০০ বছর পূর্বে।

মোঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল ইবনে মুবারক তার আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে দেশবাচক বাঙ্গালা (বাংলা) শব্দ ব্যবহার করেন। তিনি বাঙ্গালা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে দেখিয়েছেন যে, প্রাচীন নাম বঙ্গের সাথে বাধ বা জমির সীমানাসূচক শব্দ ‘আল/আইল’ প্রত্যয়যোগে বাঙ্গালা শব্দ গঠিত হয়। ভারতের ইতিহাসবিদ গোলাম হোসেন সেলিমের রিয়াজুস সলাতীনেও এই উৎপত্তির বর্ণনা আছে। ১৩৫২ খ্রীষ্টাব্দে শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ নামে একজন মুসলিম অভিজাত ‘শাহী বাংলা’ নামে একটি সালতানাত প্রতিষ্ঠা করে এই বিভক্ত অঞ্চলকে প্রথম একত্র করেন। ইলিয়াস শাহ ‘শাহে বাঙালিয়ান’ উপাধী গ্রহণ করেন। ঐ যুগে বাংলা ভাষা প্রথমেই রাষ্ট্রীয় সমর্থন পেয়ে সাহিত্যিক উন্নয়ন প্রতিপাদন করে। এভাবে, ইলিয়াস শাহ “বাঙালি” নামে এই অঞ্চলের মানুষদের সামাজিক ও ভাষাগত পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে রূপান্তরিত করেন। তাই শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহকেই বাঙ্গালি জাতির নামকরণের জনক বলা যায়।

এবার আসা যাক বাংলা সালের ইতিহাসের কথায়। ইতিহাসবেত্তাদের মতে, মানুষের সাথে পঞ্জিকার সম্পর্ক পুরাতন। মেসোপটেমিয়া কিংবা নীলনদের প্রাচীন সভ্যতায় মাঝবয়সী কৃষক দিন-তারিখ দেখে, ঋতু বুঝেই ফসলীয় ক্ষেতে নামতো। দিনক্ষণের হিসেব কষেই উপাসনা করতো পুরোহিত। খ্রিষ্টীয় মাসগুলোকে সন্নিবিষ্ট করার ইতিহাস ঘাটলে দ্বিতীয় রোমান স¤্রাট নুমা পম্পিলিয়াসের নাম আসে। জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস করার কৃতিত্বও তাঁর। কয়েক শতক পরে জুলিয়াস সিজার ক্ষমতায় (৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এসে সংস্কার আনেন, যা প্রচলিত ছিল ১৫৮২ সাল পর্যন্ত। এ বছর জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের দুরাবস্থা দেখে এগিয়ে আসেন পোপ অষ্টম গ্রেগরি। আরো একদফা সংস্কার করলেন পঞ্জিকাতে। আজ অব্দি যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।

ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিষ্টাব্দের ধারণা আনে পর্তুগীজরা। আর এটিকে জনপ্রিয় করেছে ইংরেজরা। তারও আগে এ মাটিতেই পা ফেলেছিল আরব-তুর্কি-আফগানরা। সাথে করে নিয়ে এসেছে হিজরি সন। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। বছরটাকে ভিত্তি ধরে পরবর্তীতে হিজরি পঞ্জিকার উদ্ভাবন ঘটে। বস্তুত হিজরি সনই প্রথম বিশুদ্ধ চান্দ্র সন। প্রাচীন আরবে মাস চান্দ্র হলেও বছর ছিল সৌর। অর্থাৎ চাঁদনির্ভর মাস পার হয়ে প্রতিবছর এগারো দিন পিছিয়ে পড়তো তারা। কারণ, সৌর বছর ৩৬৫ দিনে হলেও চান্দ্র বছর ৩৫৪ দিনেই আটকে যায়। এভাবে একমাস পিছিয়ে গেলে পরের বছর নববর্ষ পালিত হতো ১ মাস পরে। অর্থাৎ সে বছরে ত্রয়োদশ মাস হিসাবে আরেকটা মাস যোগ হতো।

মুসলমানদের আগমনের আগে ভারতের মানুষ পঞ্জিকা ব্যবহার করতো। আল বিরুনির ভারততত্ত্ব মোতাবেকই সন প্রচলিত ছিল বেশুমার। উজ্জয়নীর রাজা বিক্রমাদিত্যের নামে বিক্রমাব্দ, চতুর্থ শতকের দিকে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের নামে গুপ্তাব্দ, উত্তর ভারতে হর্ষবর্ধনের নামে হর্ষাব্দ, সম্ভাব্য শক-ক্ষত্রপদের নামে শকাব্দ ছিল সবচেয়ে পরিচিত। তাছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক সন তো ছিলই।

সেন রাজাদের আমলেই বাংলার মানুষ শকাব্দের সাথে পরিচিত হয়। বখতিয়ার খলজির বাংলা অভিযানের পর হিজরি এবং শকাব্দ- দুটোরই ব্যবহার দেখা যায়। সেই সাথে ছিল পরগণাতি নামে আরেক রকমের সাল গণনা। সেন বংশের পতনকাল থেকে এই সনের উত্থান বলে ধারণা করা হয়। (সূত্র: নিবন্ধ: প্রাচীন ভারতীয় বর্ষপঞ্জি: একটি সমীক্ষা, অজয় রায়, পৃষ্ঠা: ৩০, গ্রন্থ: বাংলা সন ও পঞ্জিকার ইতিহাস-চর্চা এবং বৈজ্ঞানিক সংস্কার)

অন্যান্য সনগুলোর উৎস যতটা হুটহাট বলে দেওয়া যায়, বঙ্গাব্দের ক্ষেত্রে বিষয়টা অতো সহজ না। ‘বঙ্গ’ তো আর কোনো শাসকের নাম না, যে শিলালিপি দেখে শাসনকাল খুঁজে একটা কিছু বলে দিলেই কেল্লাফতে। ‘বঙ্গ’ একটা আঞ্চলিক পরিচয়। হাজার বছর ধরে গড়ে উঠা এক জনপদের নাম।

প্রাচীনকাল থেকেই স্থানীয় মানুষেরা জীবনযাপনের তাগিদে ঋতুর হিসেব রাখতো, তেমন ভাবনা স্বাভাবিক। তারপরেও বঙ্গাব্দের জন্মকথায় চারজন শাসকের দাবি নিয়ে প-িতেরা বিভাজিত। তিব্বতিয় রাজা স্রং সন, গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক, সুলতান হোসেন শাহ এবং মহামতি স¤্রাট আকবর।
তিব্বতীয় রাজার দাবিটা আসে ফরাসি পন্ডিত সিলভ্যাঁ লেভির কাছ থেকে। ভদ্রলোক ‘লে নেপাল’ নামক পুস্তকে বলেছেন, রাজা স্রং সন ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্য ও পূর্ব-ভারত জয় করেন। তার নামের সন থেকেই বাংলা সন শব্দ যুক্ত করে বঙ্গাব্দ প্রচলিত হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, স্বয়ং তিব্বতেও ঐ সময়ে কোনো অব্দ প্রচলনের নজির নেই। স্রং সনের বাংলা আক্রমণেরও নিশ্চিত তথ্যও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে সন এবং সাল শব্দদ্বয় বাংলা কিংবা তিব্বতি কোনটিই নয়। প্রথমটি আরবি এবং দ্বিতীয়টি ফারসি। অর্থাৎ ইতিহাস কিংবা যুক্তির ছাঁকনিতে দাবিটি ধুপে টেকে না।
বঙ্গাব্দ নিয়ে দ্বিতীয় মতবাদ গৌড়ের রাজা শশাঙ্ককে জড়িয়ে। ‘বঙ্গাব্দের উৎসকথা’ বইয়ের ৩৯ পৃষ্ঠায় সুনীলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এর সমর্থনে তোড়জোড় চালিয়েছেন। তার দাবি, ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল থেকে বঙ্গাব্দের গণনা শুরু হয়। সেদিন নাকি শশাঙ্ক সিংহাসনে আরোহন করেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সে সময়ে শশাঙ্কের ক্ষমতায় আসাটা নেহায়েত অনুমান। ইতিহাস ঘেঁটে ৭ম শতকের শুরুর দিকে শশাঙ্ককে গৌড়ের শাসক হিসেবে খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাপিডিয়ায় শশাঙ্কের সময়কাল ধরা হয়েছে ৬০০ থেকে ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ। তারপরের প্রায় এক হাজার বছরের মধ্যেও বঙ্গাব্দের ধারণা মেলেনি। অথচ এই সময়ের বহু তারিখযুক্ত উপাত্ত আছে। তার চেয়ে বড় কথা, “শশাঙ্কের অধীনস্থ মাধব বর্মণ তার গঞ্জাম লেখতেই ‘গুপ্তাব্দ’ ব্যবহার করেন। ”(এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা, খ- ৬, পৃষ্ঠা- ১৪৫)

বঙ্গাব্দের প্রচলন যদি শশাঙ্কই করতেন, তবে সেখানে বঙ্গাব্দ না হয়ে গুপ্তাব্দ কেন? বঙ্গাব্দের আর কোনো নজির নেই কেন? বস্তুত সুনীলকুমার যুক্তির প্রতি গুরুত্ব দেননি। খ্রিষ্টাব্দ ধরে পেছনে গিয়ে বাংলা ১ম বর্ষে পৌঁছে তাতে শশাঙ্কের সিংহাসনে আরোহনের তকমা জুড়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ মতবাদটাই ঐতিহাসিকভাবে ভিত্তিহীন।

সুলতান হোসেন শাহ তৃতীয় মতবাদের নায়ক। যতীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের দাবি এটি। এ কথা সত্য, সুলতান হোসেন শাহ শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্যে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। সুলতানি আমলে বাংলার অনেক শাসকই বাংলায় স্বাধীন কিংবা নামমাত্র অধীন হিসেবে শাসন পরিচালনা করেছেন। ইলিয়াস শাহ নিজেকে পরিচিত করেছেন ‘শাহ-ই-বাঙ্গালা’ উপাধিতে। বাংলার স্বাতন্ত্র্য এবং জাতীয়তাবোধ জাগ্রতকরণে তাঁদের ভূমিকা ছিল বিপুল। তারপরেও বঙ্গাব্দ প্রচলনের কোনো নজির সেসময় দেখা যায় না। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সুখময় মুখোপাধ্যায়ও এই দাবির সত্যতা খুঁজে পাননি। তার বদলে পাওয়া যায় হিজরি, শকাব্দ এবং পরগণাতির ব্যবহার।

বাংলা সনের উদ্ভব নিয়ে সবথেকে জনপ্রিয় ধারণায় যুক্ত সম্রাট আকবরের নাম। প্রখ্যাত বহু পন্ডিত এ মতের পক্ষে রায় দেন। সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন। তৎকালে প্রচলিত হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে সেটা ৯৬৩ সন। বর্তমান খ্রিষ্টাব্দ ২০২২ থেকে আকবরের সিংহাসন আরোহনের সন ১৫৫৬ বিয়োগ করলে দেখা যায়, (২০২২ – ১৫৫৬) = ৪৬৬। এই বিয়োগফলের সাথে তৎকালীন হিজরি সন ৯৬৩ যোগ করা হলে দাঁড়ায় (৯৬৩ + ৪৬৬) = ১৪২৯; যা বাংলা বর্তমান সালকে নির্দেশ করে। সহজভাবে বলতে গেলে, বাংলা সন = ৯৬৩ + (খ্রিষ্টীয় সন ১৫৫৬)

সম্রাট আকবর ছিলেন রাজ্যের সুশাসক এবং ধর্মমতের ব্যাপারে উদার। দিল্লীশ্বর তৃতীয় মুঘল স¤্রাট আবুল ফাতাহ জালাল উদ্দীন মুহম্মদ আকবরের (১৫৪২-১৬০৫) সম্রাটশাসিত মন্ত্রিসভার প্রধান সদস্য ছিলেন নয়জন, যাদের ইতিহাসে নবরতœ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আবুল ফজল (১৫৫১-১৬০২) ছিলেন গ্র্যান্ড উজির, রাজা তোডর মল (১৫০০-১৫৮৯) অর্থমন্ত্রী, রাজা বীরবল ওরফে মহেশ দাস (১৫২৮-১৫৮৬) হিন্দুবিষয়ক উপদেষ্টা এবং মুখ্য সেনাপতি, আবু আল ফাইজ ইবনে মোবারক ওরফে ফৈজী (১৫৫৭-১৫৯৫) ছিলেন মালিক উশ শোয়ারা বা সভাকবি (পোয়েট লরিয়েট), রাজা মান সিংহ-১ (১৫৫০-১৬১৪) বিশ্বস্থ জেনারেল, মিয়া তানসেন (১৫০০-১৫৮৬) সংগীতজ্ঞ, মোল্লা দোপিয়াজা (১৫২৭-১৬২০) বুদ্ধির জাহাজ, ফকির আজিও আও দীন (১৫০৮-১৫৭২) ধর্মমন্ত্রী এবং আবদুল রহিম খান ই খানান (১৫৫৬-১৬২৭) কবি এবং আকবরের মেন্টর। দেখা যায়, আকবরের কেবিনেটে সমরবিশারদ, বুদ্ধিজীবী, অর্থ ও ধর্মবিষয়ক পন্ডিত, কবি ও সংগীতবেত্তাদের প্রাধান্য ছিল। সম্রাট আকবর ১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৪৯ বছর দোর্দ-প্রতাপ, প্রতিভা, রাজ্য বিস্তার ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সংহতকরণ, ধর্ম-মত-অর্থ ও রাজস্ব সংস্কার সাধনে ব্যাপৃত হয়েছিলেন। আর এর জন্য তার নবরতœ সভার সভাসদরা তাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্য দিয়ে তাকে ঋদ্ধ করেছিলেন। তিনি ফসলি সন প্রবর্তনের যে কাজটি করেছিলেন সুদূর দিল্লির সিংহাসনে বসে, তা সুবে বাংলার (বর্তমানের বাংলাদেশ) জন্য আজও চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। পুরো ভারতবর্ষে একমাত্র বাংলাদেশে তার প্রবর্তিত ফসলি সন কার্যকর রয়েছে, বাঙালির নিজস্ব পঞ্জিকা বর্ষ বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন হিসেবে।

সম্রাট আকবরের আমল মধ্যযুগের ভারতে স্বর্ণযুগ হিসাবে গণ্য। শাসন, তদারকি এবং রাজস্ব আদায় সহজ করার জন্য গোটা সাম্রাজ্যকে ভাগ করেন আকবর। টোডরমলের তত্ত্বাবধানে প্রবর্তিত হয় নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা, যা দশসালা বন্দোবস্ত নামে স্বীকৃত। ঠিক কাছাকাছি সময়ে ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে নতুন সনের সূচনা ঘটে জ্যোতির্বিদ আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজীর তত্ত্বাবধানে। তিনি রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে একটি নতুন সৌর সন উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এটি নিয়ে আলাপ করেন তার সভাসদ আবুল ফজল এবং অর্থমন্ত্রী রাজা তোডর মলের সঙ্গে। তাদের পরামর্শে সম্রাট কঠিন এ কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব দিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতেউল্লা সিরাজির ওপর।

পারস্যের সাফাবিদ ঘরানার সুফি সৈয়দ মীর ফতেউল্লা সিরাজি (? -১৫৮৯) ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক, পদার্থবিদ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও ইসলামী আইনবেত্তা। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক এবং কোরআন-হাদিস বিদ্যাবিশারদ গিয়াস আল দীন মনসুরের (১৪৬১-১৫৪২) শিষ্য। তারা আগে থেকেই ছিলেন গান পাউডার সমরাস্ত্র নির্মাতা হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। এ পরিচয়ে ফতেউল্লা সিরাজি স¤্রাট আকবরের দরবারে কামান তৈরিতে বিদেশী কনসালট্যান্ট হিসেবে ১৫৫৬ সালে যোগদান করেন। প্রথম দিকে তিনি মুঘল সেনাবাহিনীর জন্য ভলিগান, হাত কামান, ছোট কামান এবং পরবর্তীকালে ষোল গোলাবিশিষ্ট কামান তৈরির পারদর্শিতা দেখান এবং গোলন্দাজ শাখায় সেরা সম্পদ হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। তিনি স¯্রাট আকবরের ‘অযুদদুদদৌলা’ বা স¤্রাটের হস্ত উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি প্রধান উজির প-িত আবুল ফজলের আরাম আয়েশের জন্য এমন একটা বাহন তৈরি করেন, যা ছিল বহুল ব্যবহারযোগ্য। একসময় তা দিয়ে ফসল মাড়াইয়ের কাজও করা যেত।

সম্রাট আকবরের দরবারে আমির ফতেউল্লা সিরাজি নতুন সাল উদ্ভাবন প্রস্তাব পেশ করেন। ১৫৮৪ সালে নতুন সাল উদ্ভাবনে নিয়োগ পেয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেউল্লা সিরাজি ভারতের বিভিন্ন এলাকার সনকে চন্দ্র ও সৌর বৈশিষ্ট্যে সমন্বিত করেন। এখানে আমির সিরাজি তদানীন্তনকালে প্রচলিত সব বর্ষপঞ্জি পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর হিজরতকে মূল ঘটনা ধরে হিজরি সনের বর্ষকে অক্ষুন্ন রেখে, ১, ২, ৩ এভাবে হিসাব না করে মূল হিজরি সনের চলতি বছর থেকেই বাংলা সনের গণনা শুরু দেখিয়ে বাদশা আকবরের মসনদে অধিষ্ঠানের বছর ৯৬৩ হিজরিকে ৩৫৪ দিনে গণনার স্থলে ৩৬৫ দিনে এনে একটি প্রস্তাব বাদশার দরবাওে পেশ করেন ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে। ৯৬৩ হিজরি ঠিকই থাকে, শুধু পরবর্তী বছর থেকে ৩৬৫ দিনে তা গণনায় আনায় ঋতুর সঙ্গে এর সম্পর্ক স্থিত হয়ে যায়। ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দেই বাদশা আকবর হিজরি চান্দ্র সনের এ বিশেষ সৌর সনের গণনাকে অনুমোদন দান করেন এবং ২৯ বছর আগে তার সিংহাসনে আরোহণের বছর (হিজরি ৯৬৩, ১৫৫৬ সন) থেকে উদ্ভাবিত নতুন সৌর বর্ষপঞ্জিকার হিসাব শুরু করার নির্দেশ দেন।

আকবরের প্রবর্তিত এই নতুন সন পরিচিতি পায় ‘ইলাহি সন’ হিসাবে। হিজরি সন পুরোপুরি চন্দ্র নির্ভর হবার কারণে ভারতের ঋতুর সাথে মিলতো না। রাজস্ব আদায়েও অসুবিধা হতো। এজন্য মাসগুলোকে চন্দ্রনির্ভর রেখে বছরকে সৌর করে ঋতুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া হয়। ফসলি সন হিসেবে এর কার্যকারিতা ছিল যুগোপযোগী।

১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত হলেও ইলাহি সনের শুরু ধরা হয় ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। আর তা ছিল হিজরি ৯৬৩ সন। অর্থাৎ ইলাহি সন যাত্রাই শুরু করেছে ৯৬৩ বছরের তাগড়া জোয়ান হিসেবে। ইলাহি সনে মাসের নাম ফারসিতে। মোগল দরবার পারসিক সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল কী না! বারোটি মাস যথাক্রমে ফেরিদুন, উর্দি-বিহিস্ত, খুর্দাদ, তীর, মারদাদ, শাহরিয়ার, মিহির, আবান, আজর, দে, বাহমন এবং ইসপন্দর মাজ। আকবরের দরবারি ঐতিহাসিক আবুল ফজলও তার আকবরনামাতে এই সন প্রবর্তনের কথা বলেছেন।

বাংলা সন এবং আকবরের ইলাহি সনের মধ্যে যে ঐতিহাসিক শূন্যস্থান, তা পূরণের জন্য মুর্শিদকুলী খান গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্যই আকবর ইলাহি সনের প্রবর্তন করেন। সেই সনকে ভিত্তি ধরে ঠিক রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্যই মুর্শিদকুলী খানের সময় বাংলা সন জন্ম নেয়। এ কারণে মাসের ফারসি নামগুলো পরিবর্তিত হয়ে গেল নক্ষত্রের নামানুসারে। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণৃ এভাবে।

বৈশাখ কেন প্রথম মাস? ৯৬৩ মহররমের প্রথম মাসকে তারিখ-এ-এলাহির প্রথম মাস ধরে গণনা করা শুরু হয়। যেহেতু ৯৬৩ মহররমের প্রথম মাস বৈশাখ মাসের সাথে মিলে যায়, তাই বৈশাখই হয় তারিখ-এ-এলাহি-র প্রথম মাস।(আগে শকাব্দ অনুযায়ী চৈত্র মাসকে প্রথম মাস হিসেবে ব্যবহার করত বাঙালিরা) বাংলা সাল ও অন্যান্য সালের মিল ও তফাত তারিখ-এ-এলাহি-র শুরুর পর যে ৪০০+ বছর অতিবাহিত হয়েছে তাতে হিজরী এবং বাংলা সালের মধ্যে ১৪ বছরের ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে, কারণ হিজরী হিসাব করা হয় চন্দ্রকে ভিত্তি করে আর বাংলা সাল হিসাব করা হয় সূর্যকে ভিত্তি করে।

কিন্তু বাংলা সাল আর গ্রেগরিয়ান সাল-এর মধ্যে কোনো পার্থক্য হয়নি কারণ উভয়-ই সূর্যকে ভিতি করে গণনা করা হয়। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনের নাম আকবরের রাজত্বের সময় মাসের প্রত্যেক দিনের আলাদা নাম ছিল। কিন্তু যেহেতু মাসের ৩১দিনের ৩১টা নাম মনে রাখা কষ্টকর তাই আকবরের প্রপৌত্র শাহজাহান সপ্তাহ পদ্ধতির সুচনা করেন তার ফসলী সাল পদ্ধতিতে। তার সময়কার সপ্তাহের নামকরণ: ১.সূর্য এর জন্য রবি(Sunday) ২. চাঁদ এর জন্য সোম((Monday) ) ৩.মঙ্গল গ্রহ এর জন্য মঙ্গল(Tuesday) ৪. বুধ গ্রহের জন্য বুধ((Wednesday) ৫. বৃহস্পতি গ্রহের জন্য বৃহস্পতি(Thursday) ৬.শুক্র গ্রহের জন্য শুক্র ((Friday) ৭.শনি গ্রহের জন্য শনি (Saturday) নির্ধারণ করেন।
প্রথমদিকে মাস এর নাম ছিল ফারওয়ারদিন, খোরদাদ, তীর, মুরদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আযার, দে, বাহমান ইত্যাদি। এটা জানা যায়নি যে কেন মাস গুলোর নাম এখন বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ দেয়া হয়েছে। তবে মনে করা হয় যে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে শাকা জাতির রাজত্বের সময় প্রচলিত শাকাব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। মাসের নাম:

১.বিশাখা(Librae)থেকে বৈশাখ ২.জাইষ্ঠা(Scorpii) থেকে জৈষ্ঠ ৩.আষাঢ়া (Sagittarii) থেকে আষাঢ় ৪.শ্রাবনা(Aquilae)থেকে শ্রাবন ৫.ভাদ্রপাদা (Pegasi) থেকে ভাদ্র ৬. আশ্বিনী (Arietis) থেকে আশ্বিন ৭. কৃতিকা (Tauri) থেকে কার্তিক ৮. পুস্যা(Aldebaran)থেকে পৌষ ৯.আগ্রৈহনী (Cancri) থেকে আগ্রহায়ন ১০.মাঘা (Regulus) থেকে মাঘ ১১.ফাল্গুনী ((Leonis)) থেকে ফাল্গুন ১২.চিত্রা (Virginis) থেকে চৈত্র। সঠিক হিসাবের জন্য পরিবর্তন বাংলা সালের দৈর্ঘ্য ৩৬৫ দিন।

কিন্তু পৃথিবীর সুর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড লাগে। এই ঘাটতি দূর করার জন্য গ্রেগরিয়ান সালে প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারী মাসের সাথে একদিন যোগ করা হয়।

ইলাহি সন থেকে উৎপত্তি ঘটলেও বাংলা সালের মাস এবং দিনের নাম পূর্বপ্রচলিত শকাব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে। আবার স্মরণ করা দরকার, মুর্শিদকুলী খান স্থানীয় হিন্দু অভিজাত এবং সংস্কৃতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।

রাজস্ব আদায়ের জন্য সম্রাটের পক্ষ থেকে চাপ আসতো প্রায়ই। সাধারণ মানুষেরা ফসল না কেটে তো আর খাজনা দিতে পারতো না। অনেকটা সে কারণেই নবাবেরা পূণ্যাহের প্রবর্তন করেন। নবাবের বাড়িতে উৎসব ও খাবার দাবারের আয়োজন থাকতো আর সাধারণ মানুষ তাতে যোগ দেবার পাশাপাশি রাজস্ব পরিশোধ করতো। নবাবের বাড়িতে মেহমান হিসেবে আপ্যায়িত হওয়াটা কম কথা না। রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয়ে গেল দিনটা। নববর্ষ চালুর ইতিহাসের পূণ্যাহের তাৎপর্য ব্যাপক। খুব সম্ভবত ব্যবসায়ীরা সেখান থেকেই হালখাতার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ( সূত্র: পূর্বোক্ত গ্রন্থে শামসুজ্জামান খানের নিবন্ধ, পৃষ্ঠা: ১১১)

মোটামুটি সেভাবেই চলেছে ইতিহাস। ১৯৫২ সালে প্রখ্যাত জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা এবং তার কমিটি ভারতের অন্যান্য সালের সাথে বাংলা সনের সংস্কারের প্রস্তাব করেন। ভারত সরকার তার প্রস্তাব গ্রহণ করে ১৯৫৭ সালে। সেই সংস্কারের কথা মাথায় রেখে ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে বাংলা ক্যালেন্ডার সংস্কার কমিটি গঠিত হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। বাংলাদেশ জন্মের পর তাজউদ্দিন আহমদ সরকারি নথিতে বাংলা তারিখের প্রথা চালু করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে তা আরো দৃঢ় হয়। অবশেষে ১৯৮৭ সাল থেকে সরকারি কাজে খ্রিস্টাব্দ ব্যবহারের পাশাপাশি বাংলা সন লেখার নির্দেশনা আসে।

পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শহীদুল্লাহ্ কমিটির প্রস্তাবনায় উন্নয়ন আনা হয়। ১৩ই আগস্ট ১৯৯৫ এবং ১৯শে আগস্ট ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে পরপর দুই সভায় প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সংস্কারের পর প্রস্তাবগুলো নিম্নরূপ-
১. সাধারণভাবে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাস ৩০ দিন গণ্য করা হবে।
২. গ্রেগরিয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে যে বাংলা বছরের ফাল্গুন মাস পড়বে সেই বাংলা বছরের অধিবর্ষ গণ্য করা হবে।
৩. অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস হবে ৩১ দিনে।
৪. আন্তর্জাতিক রীতি মোতাবেক রাত ১২টায় তারিখ পরিবর্তিত হবে।
(বাংলা সন ও পঞ্জিকার ইতিহাস-চর্চা এবং বৈজ্ঞানিক সংস্কার, পৃষ্ঠা-১১৯)

সেই সাথে ১৪ই এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আসলে তা ছিল পূর্ববর্তী কমিটির সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধার ফলস্বরূপ। হিজরি, ইলাহি এবং শকাব্দ হাত ধরাধরি করে এই সন এগিয়ে এসে মিলিত হয়েছে বাংলায়। বঙ্গীয় জনপদের আদিতম গুণ ধর্মীয় সম্প্রীতির আরো একটা উজ্জ্বল দলিল যেন এই বাংলা সন। যা আজও ভিন্ন দেশ উৎসব আনন্দে সকল বাঙ্গালি এ বাংলা সনের প্রথম দিনটিকে একটি বড় উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে এই দিনটিকে সরকারি ছুটিসহ সরকারি বেসরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য সরকার উৎসব ভাতার ব্যবস্থা করেছেন।

ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে আমার সংকলিত এ লেখার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলা সনের ইতিহাস জেনে দিনটিকে উৎসব হিসেবে পালন করবে এই প্রত্যাশা।

লেখক-
সহকারী অধ্যাপক (বাংলা)
গাজীপুর বিএম কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *