রাজাপাকসের বাসভবন ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ

Slider সারাবিশ্ব

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কা। সংকট মোকাবিলায় স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী। এরই প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে ফুঁসে উঠেছে জনতা। গত বৃহস্পতিবার তার বাসভবনের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়। তারা টিয়ারশেল ও জল কামান ব্যবহার করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অশান্ত রূপ ধারণ করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা।
পুলিশও শুরু করে লাঠিচার্জ। সবমিলিয়ে এক কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয় প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলাকা। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এ ঘটনাকে ‘চরমপন্থিদের কাজ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, অন্তত ৪৫ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত রাজধানী কলম্বোর বেশিরভাগ এলাকায় সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জারি করা হয় কারফিউ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে ভয়াবহ বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। রান্নার গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ নেই এক দিনে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত। এমন অবস্থায় কয়েক শত বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে সমবেত হয়। তারা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে।

পুলিশের তথ্যমতে, বিক্ষোভে ৫ পুলিশসহ বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছেন। গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশের একটি বাস, একটি জিপ এবং দুটি মোটরসাইকেল। কলম্বোতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কারফিউ জারি করা হয়। শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত তা বহাল ছিল। কেলানিয়া এলাকায় বিক্ষোভকারীরা কলম্বো-ক্যান্সি সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে।

শ্রীলঙ্কায় এখন বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট চলছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলছে। এমন অবস্থায় এ বিক্ষোভকে একটি বড় ধরনের সরকার বিরোধী মনোভাবে বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদিও ২০১৯ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন রাজাপাকসে। তিনি তখন স্থিতিশীলতা ও দৃঢ়ভাবে দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সমালোচকরা এ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছেন। কারণ প্রেসিডেন্টের ভাই ও ভাতিজারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আছেন। এটিকেই দেশটির বর্তমান অবস্থার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলছেন অনেকে।

যদিও সরকার অবশ্য বলছে যে, করোনা মহামারির কারণে পর্যটনখাত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালে চার্চগুলোতে সিরিজ হামলার ঘটনাও পর্যটনখাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংকটের শুরু অনেক আগে থেকেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জায়াদেবা উয়ানগোদা বিবিসিকে বলেছেন যে- কয়েক দশক ধরেই ধীরে ধীরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং কেউ এর দায় নেয়নি। তবে অবশ্যই বর্তমান সরকারের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদক্ষতাই এর জন্য সরাসরি দায়ী। ২০০০ সালে জিডিপির ৩৩ শতাংশ আসতো রপ্তানি থেকে। যেটা এখন ১২ শতাংশে নেমে এসেছে।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কান রুপির অবনমণ না করাতেও বৈদেশিক মুদ্রার ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে যায়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের মতো থাকলেও এখন তা দুই বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এরমধ্যে ব্যবহারযোগ্য আছে মাত্র তিনশ’ মিলিয়ন ডলার। এমনকি আমদানিনির্ভর দেশটির জন্য এখন বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীল প্রবাহও নেই। শ্রীলঙ্কার হাতে এখন আর তেলের মতো জরুরি দরকারি পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত ডলার নেই। এর ফলে আরও বেশি সময় ধরেই সেখানকার মানুষজনকে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। সামনের দিনগুলোতে এটি ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। তেলের পাম্পগুলোতে লাইন দীর্ঘ হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *