একদিকে চীনা ঋণ, অন্যদিকে এক পরিবারের শাসন ‘বেসামাল শ্রীলঙ্কা’

Slider সারাবিশ্ব


বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের ঘাটতি এবং বিপুল ঋণের বোঝায় বেসামাল সার্কভুক্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। বাংলাদেশের কাছে আরও মার্কিন ২৫ কোটি ডলার আর্থিক সুবিধা চেয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কান গণমাধ্যম এ খবর দিয়ে জানায়, এটা দু’দেশের মধ্যে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা মুদ্রা বিনিময় প্রথায় হবে। এর আগে গত বছরও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটিয়ে উঠতে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সঙ্গে অনুরূপ মুদ্রাবিনিময় চুক্তি করেছিল, পরে যেটির পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওদিকে, সোমবারই শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ভারতের কাছ থেকে ১৫০ কোটি ডলারের নতুন ঋণসীমা চাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া, বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে এক বৈঠকে নিজ দেশের ঋণ পুনর্গঠনের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান।

মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ বেকারত্ব এবং খাদ্য থেকে ওষুধ পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের ঘাটতি, সবমিলিয়ে অনেক শ্রীলঙ্কান বিদেশে উন্নত জীবনের আশায় নিজ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। সবার অবশ্য দেশ ছাড়ার সামর্থ্য নেই। জ্বালানি ঘাটতি, বিদ্যুৎ ঘাটতি এবং খাদ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যের কারণে অগণিত শ্রীলঙ্কান এখন মূল পেশার বাইরে অন্যকিছু করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তেমনই একজন হলেন ৫৩ বছর বয়সী শ্রীলঙ্কান ওয়েটার আব্দুল রাজ্জাক। তিনি তার বন্ধুর মোটরসাইকেলে করে নিজের চাকরির বাইরে লুকিয়ে ‘উবার ইটস’-এর কাজ করে বাড়তি কিছু রোজগার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পেট্রোল কেনার লাইনে আটকা পড়ে তিনি ফুড ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হন। রাজ্জাক বলছিলেন, ‘আমরা কখনোই আর্থিকভাবে এমন ধরনের কষ্টের সম্মুখীন হইনি। কখনও কখনও আমার স্ত্রী এবং আমি না খেয়ে থাকছি যাতে বাচ্চাদের দু’বেলা খাওয়াতে পারি।’

উল্লেখ্য, আমদানি করার মতো প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় শ্রীলঙ্কায় মারাত্মক জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটির পেট্রোল পাম্পগুলোর সামনে সারা দিনই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন হাজারো মানুষ। লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও এসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। জ্বালানি তেল আমদানি করতে না পারায় বিদ্যুৎ সংকটে প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে কাগজ আমদানি করতে না পারায় স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যে, কাগজের অভাবে কয়েকটি পত্রিকা নিজেদের প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ওদিকে, মুদ্রাবিনিময় সংকটে আমদানি বিধিনিষেধ থাকায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকার যানবাহন আমদানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, প্রতিমাসে পাঁচ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের চা ইরানে রপ্তানি করে ধীরে ধীরে ইরানের কাছ থেকে কেনা আড়াইশ’ মিলিয়ন ডলারের জ্বালানি তেলের দাম শোধ করবে দেশটি।

লন্ডনভিত্তিক থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন বলছে, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে শ্রীলঙ্কা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়েছে। ঐতিহাসিকভাবে দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা, অসময়ে ট্যাক্স কাটছাঁট এবং দেশের অন্যতম আয়ের খাত পর্যটন শিল্পকে আঘাত করা করোনা মহামারি দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে, চরম মুদ্রা সংকট সৃষ্টি হয়েছে যার কারণে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের ভারে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় খাদ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

অবশ্য মহামারি শুরুর আগেই শ্রীলঙ্কাকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ এবং ধীর প্রবৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সরকারি হিসাব মতে, গত দুই বছরে (করোনাকালে) দেশটির প্রায় ১৪০০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ৩.২০ ডলার দৈনিক আয়ের উপর ভিত্তি করে হিসাব করা দরিদ্রদের সংখ্যা ২০২০ সালে আনুমানিক ৫ লাখেরও বেশি বা ১১.৭% বেড়েছে যা এর আগের বছর ছিল ৯.২%।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের নভেম্বরে সেটা এক বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে এবং এখন সেটা এক বিলিয়ন ডলারেরও নিচে নেমে আসায় অনেক অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন দেশটি ঋণখেলাপি হওয়ার পথে।

গত প্রায় এক দশক ধরে সড়কপথ, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরসহ শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দেয় চীন। সমালোচকরা বলছেন, ঋণের অর্থ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে, যেখান থেকে নেহায়েতই সামান্য পরিমাণ আয় হচ্ছে। বর্তমানে বহুল প্রচলিত চীনা “ডেবট ট্র?্যাপ ডিপ্লোম্যাসি” বা “ঋণের ফাঁদ” কথাটির বাস্তব উদাহরণ দিতে অনেকেই শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ টানেন। চীনা বিনিয়োগে শ্রীলঙ্কা হাম্বানটোটায় বৃহৎ আকারের বন্দর নির্মাণের প্রকল্প শুরু করে। কয়েকশ’ কোটি ডলারের ওই প্রকল্পে চীনা ঋণ এবং চীনা ঠিকাদারদের ব্যবহার করা হচ্ছে। সারা বিশ্বেই এই প্রকল্প কতটা বাস্তবায়নযোগ্য সেটা ঘিরে বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এর ফলে শ্রীলঙ্কা ক্রমবর্ধমান ঋণের চাপে জর্জরিত হয়ে পড়বে। সেই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা প্রমাণ করতেই যেন বছর পাঁচেক আগে শ্রীলঙ্কা আরও চীনা বিনিয়োগের বিনিময়ে বন্দরটির ৭০% নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না মার্চেন্টস কোম্পানির কাছে ৯৯ বছরের জন্য ছেড়ে দিতে সম্মত হয়।

এর বাইরেও আর্থিক বিপর্যয় মোকাবিলা করতে চীনের কাছ থেকে অতিরিক্ত আরও ১ বিলিয়ন ডলার ধার করে শ্রীলঙ্কা। অবশ্য, ২০১৪ সাল থেকেই ঋণের বোঝা বাড়তে শুরু করেছিল দেশটির। বর্তমানে পরিস্থিতিতে, এ বছর সব মিলিয়ে অন্তত ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার শোধ করতেই হবে দেশটিকে।

ইউনিভার্সিটি অব কলম্বোর শিক্ষক এবং অর্থনীতির গবেষক উমেশ মোরামুদালি অবশ্য মনে করেন, চীনা ঋণের ফাঁদই যে শ্রীলঙ্কার এমন সংকটের মূল কারণ, সেটি ঠিক নয়। সমস্যার কারণ আরও গভীরে উল্লেখ করে তিনি দ্য ডিপ্লোম্যাটে লিখেছেন, শ্রীলঙ্কার সরকারি ঋণের মাত্র ১৪% চীনের কাছ থেকে নেওয়া। বিশ্ববাজারে সার্বভৌম বন্ড ছেড়ে নেওয়া হয়েছে ৩৬%। তার মতে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান সমস্যা আসলে দশকের পর দশক ধরে আর্থিক খাতে সংস্কারের ব্যাপারে সরকারগুলোর উদাসীনতার পুঞ্জীভূত রূপ? করোনা মহামারির কারণে তা আরও জটিল রূপ ধারণ করেছে।

উমেশ মনে করেন, বর্তমান সমস্যার মূলে রয়েছে মারাত্মক ব্যালান্স অব পেমেন্ট সংকট, যা শ্রীলঙ্কা ২০২০ সালের শুরু থেকেই মোকাবিলা করে আসছে। করোনাকালে দেশটির অন্যতম আয়ের খাত পর্যটন থেকে শ্রীলঙ্কা বার্ষিক অন্তত ৪ বিলিয়ন ডলার করে হারিয়েছে (করোনার আগে শুধু পর্যটন এবং রেমিটেন্স খাত থেকেই শ্রীলঙ্কা ১২ বিলিয়ন ডলার আয় করতো)। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে ২০১৯ সালের শেষের দিকে ব্যাপক করছাড়সহ (ভ্যাট এবং ট্যাক্স কমানো) বর্তমান সরকার গৃহীত বেশকিছু বেপরোয়া অর্থনৈতিক নীতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছ থেকে সহায়তা না নেওয়ার সরকারি একগুঁয়ে নীতিও এর পেছনে কাজ করেছে। আইএমএফ’র ঋণ নিলে দেশটির সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ অর্থনীতিতে আরও বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম চালাতে হবে। কর ছাড়ের সিদ্ধান্তটি যে ভুল ছিল তাও স্বীকার করতে হবে, যেটি সরকার করতে চাচ্ছে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের আত্মগরিমার প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে উমেশ লিখেছেন- “নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাকে রক্ষা করার জন্য তাদের ট্যাক্স কাটছাঁটের সরকারি সিদ্ধান্ত এবং সরকারের ব্যাপক অহঙ্কারের কারণে আমরা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছি। এটা আমি কখনই ভুলবো না? আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার জন্য (তাদের) কখনই ক্ষমা করবো না। বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই, পানি নেই, জ্বালানি নেই।”
যদিও অতি সমপ্রতি জানা গেছে, উদ্ধার পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি আগামী মাসে শ্রীলঙ্কা বিশ্বব্যাংকের সহায়তাও চাইবে। আইএমএফ-এর ঋণ পেতে ইতিমধ্যেই ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার এমন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য দেশটির দায়িত্বশীল অনেকেই করোনা মহামারিকে দায়ী করলেও বিশেষজ্ঞরা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন, দেশটি যে এমন একটি পরিণতির দিকে যাচ্ছে সে আশঙ্কা অনেক আগেই করা হয়েছিল। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মানবজমিনকে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার দুরবস্থার জন্য করোনা মহামারির কথা বলা হলেও এর শুরুটা কিন্তু হুট করে হয়নি। বলা হচ্ছে, করোনার কারণে পর্যটন নির্ভর দেশটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা ঠিক। তবে, পর্যটন শিল্প দেশটির অর্থনীতিতে কেবল ৩ শতাংশ অবদান রাখে। অর্থনৈতিক দুর্বলতাতো এক দশক ধরেই প্রকাশ পাচ্ছিল? দেশটির অর্থনৈতিক নীতিগত অবস্থান সেটা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দেশটি আমদানি বিকল্প শিল্প কাঠামোর দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ শিল্প খাত আশানুরূপ বিকশিত হয়নি। অন্যদিকে, রপ্তানিমুখী খাতে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হয়নি। দেশটির কাছে যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে সপ্তাহখানেকের পেমেন্ট মেটাতে পারবে। শ্রীলঙ্কার জ্বালানি শতভাগ আমদানি-নির্ভর হওয়ায় এমন দুর্বল রিজার্ভ দিয়ে জ্বালানি আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। ফলে, তীব্র জ্বালানি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ভুল অর্থনৈতিক নীতির কারণে দুরবস্থায় পড়েছে শ্রীলঙ্কা। উন্মুক্ত বাজার নীতির বদলে তারা বরং সংরক্ষণমূলক নীতিকে রক্ষা করতে চেয়েছিল। সরকার দেশে হঠাৎ করেই অর্গানিক কৃষি চালু করে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কৃষিক্ষেত্রে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। অধিক খাদ্য আমদানি করতে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়।”

সাবেক সচিব এবং অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও মনে করেন করোনার কারণে দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তিনি মানবজমিনকে নেপথ্যের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “শ্রীলঙ্কায় এক পরিবারের শাসন। পারিবারিক ব্যবসা সমপ্রসারণ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দু’টোতো এক জিনিস নয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় দু’টোই একাকার হয়ে গেছে। সরকার ও পরিবারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। করোনার কারণে দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে বলা হলেও এটা আসলে ‘পলিসি ফেইলিউর’। অনেক আগে থেকেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। একটা গাড়ি চালাতে হলে গাড়ির জ্বালানি, সক্ষমতা, রাস্তাঘাট সহ অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয়, শুধু তাড়াতাড়ি যেতে চাইলেই হয় না। তেমনি, শ্রীলঙ্কা পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো খেয়াল না করে দ্রুত যেতে চেয়েছে। আর সেজন্যই আজকের এই ফল। তাদের শুধুই প্রজেক্ট দরকার ছিল। না ভেবেচিন্তেই তারা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। আমাদের দেশেও এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।”

শ্রীলঙ্কার অবস্থা থেকে বাংলাদেশ কী শিক্ষা নিতে পারে জানতে চাইলে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এতে যেন রপ্তানিমুখী পণ্যের শিল্পায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকা ভালো। কিন্তু এর বাহুল্যও যেন না হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। পাওয়ার সেক্টরে প্লান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত জ্বালানি আমদানি করা হচ্ছে। পেট্রোলিয়াম থেকে এলএনজি, এলএনজি থেকে গ্রিন এনার্জির দিকে যেতে হবে। জ্বালানি খাতে আমদানি নির্ভরতা, সরকারি ভর্তুকি কমাতে হবে। শ্রীলঙ্কায় বেশ কিছু বড় বড় প্রকল্প দেশটির জন্য ‘শ্বেতহস্তীতে’ (কাজে আসে না তবে দামি ও অসুবিধাজনক) রূপান্তরিত হয়েছে। বিদেশি ঋণে সেসব বড় বড় অবকাঠামো করতে গিয়ে যেমন ঋণের বোঝায় পড়েছে, তেমনি সেগুলো থেকে আশানুরূপ কোনো অর্থনৈতিক লাভও হয়নি? আমাদের দেশেও ঋণের টাকায় বিভিন্ন বড় প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে যেগুলোতে অপচয় ও দুর্নীতির খবর এসেছে। অনেক প্রজেক্টের ঋণের টাকা শোধের সময় হয়ে গেছে। অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্ট যাতে না হয় কিংবা প্রজেক্টে অতিরিক্ত বা অযাচিত খরচ যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *