মুকুটহীন সম্রাট ইরফানের ছিল চার থানায় প্রাইভেট বাহিনী

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

ঢাকা: পুরান ঢাকায় নিজেকে মুকুটহীন সম্রাট ভাবতেন ইরফান। তার বেপরোয়া জীবনের সঙ্গী ছিল ৪ থানায় অন্তত ৪০ জনের নিজস্ব বাহিনী। খোরপোষ দিয়ে ওই প্রাইভেট বাহিনী লালন করতেন। প্রত্যেক থানায় একজন করে ওই প্রাইভেট বাহিনীর নিয়ন্ত্রক ছিল। যাদের হাতে ছিল ওয়াকিটকি। সে ওয়াকিটকি দিয়ে পুরো পুরান ঢাকার বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন ইরফান। এই প্রাইভেট বাহিনীর অত্যাচারে গোটা এলাকার ছিল মানুষ অতিষ্ঠ। কিন্তু, এমপি’র পুত্র বলে কথা। কেউ মুখ খুলে কথা বলতে পারতো না।

চকবাজার, লালবাগ, সূত্রাপুর, ও কোতোয়ালিতে ছিল এ বাহিনীর বিচরণ ক্ষেত্র। দিন-রাত এ বাহিনীর সদস্যরা গোটা পুরান ঢাকা চষে বেড়াতো। ইরফানের দখল সাম্রাজ্য রক্ষা করা, সদর ঘাটের কুলির চক্র নিয়ন্ত্রণ করা, বেসরকরি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা ছিল বাহিনীর অন্যতম কাজ। দিন শেষ তারা সবাই জড়ো হতো ইরফানের আসর ঘর মদিনা আশিক টাওয়ারে। এ সময় তিনি প্রাইভেট বাহিনীর সদস্যদের কাছে দিনের কাজের খতিয়ানের হিসাব নিতেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার জানান, সমাজে যে যতই প্রভাবশালী হোক আইন সবার জন্য সমান। অপকর্ম করে কেউ পার পাবে না। যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এছাড়াও গতকাল র‌্যাব’র এক ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘ইরফানের মামলার তদন্তের দায়িত্বভার যদি তাদের (র‌্যাব) দেয়া হয় তাহলে তারা তা তদন্ত করবে। তবে ইরফানের অপকর্মের তথ্যানুসন্ধানের জন্য র‌্যাব’র গোয়েন্দারা কাজ করছেন। ইরফানের গ্যাং চক্রকে ধরার জন্য তারা বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকার প্রায় ১০০ টি অবৈধ জুতা এবং বিভিন্ন পণ্যের অবৈধ কারখানা স্থাপন এবং সেগুলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতো এ প্রাইভেট বাহিনী। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে সেই কারখানা তারা পুনরায় স্থাপন করতো। অবৈধ কারখানার মালিককে আবার নতুন করে অবৈধ কারখানা স্থাপনে সুযোগ করে দিত।

সূত্র জানায়, ইরফানের বাসা থেকে যে ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে সেই ওয়াকিটকি কেন মোবাইলের যুগে ব্যবহার করা হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন প্রশ্নের উত্তরে ইরফান জানিয়েছেন যে, তিনি যখন কথা বলেন তখন তার মোবাইল ট্র্যাকিং করা হয় বলে সন্দেহ মনে করতেন। তাই তার সব কর্মকাণ্ডকে গোপন করার জন্য তিনি সেই ওয়াকিটকি ব্যবহার করতেন। আর তার বাসা থেকে যে হাড় উদ্ধার করা হয়েছে তা তিনি টর্চারের সময় ধরে আনা ব্যক্তিকে ওই হাড় দিয়ে ভয় দেখাতেন। তাকেও এই হাড়-হাড্ডিতে পরিণত করার হুমকি দিতেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কোতোয়ালি এলাকায় তার প্রাইভেট বাহিনীর প্রধান ছিল সাব্বির। তার অধীনে সুমন, আজিজ ও রহিম ছাড়াও ১০ জনের একটি দল ছিল। সূত্রাপুর এলাকায় আবিরের নেতৃত্বে ছিল প্রাইভেট বাহিনী। তার অধীনে ছিল শফিক, শহীদ ও বারীসহ ১০ জন। তারা এলাকায় বাইক পার্টি বলে পরিচিত।

এছাড়াও চকবাজারে মামুন স্টালিনের অধীনে ছিল আরেকটি প্রাইভেট বাহিনী। যার অধীনে ছিল নেওয়াজ, সাজু ও শাহ করিমসহ অন্যরা। এবং লালবাগ এলাকায় কানা দ্বীপ প্রাইভেট বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতো। দ্বীপের অধীনে ছিল মইনুল, মিজানসহ ১০ জন। সূত্র জানায়, দিনের চেয়ে তারা রাতে ওই এলাকা চষে বেড়াতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *