রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে পরবর্তী ধাপের বৈঠক তুরস্কের ইস্তানবুল শহরে অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (২৭ মার্চ) তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের যোগাযোগ বিষয়ক অধিদফতর জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে আগামী মঙ্গলবার দুপক্ষ বৈঠকে বসবে।
এক বিবৃতিতে কার্যালয়ের যোগাযোগ বিষয়ক অধিদফতর জানিয়েছে, পরবর্তী বৈঠক ইস্তানবুলে আয়োজন করতে একমত হয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও তার রুশ প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিন।
এর আগে সোমবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের আলোচক ডেভিড আরাখামিয়া। কিন্তু এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহীম কালিন বলেন, বৈঠকটি হবে আগামী মঙ্গলবার (২৯ মার্চ)।
তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মাসব্যাপী চলা যুদ্ধের মধ্যস্থতা করতে চেষ্টা চালাচ্ছে ন্যাটো সদস্যটি।
ইব্রাহীম কালিন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক এমনভাবে নষ্ট করা যাবে না, যাতে আর ফিরে আসা সম্ভব না হয়। ইউক্রেনের নাগরিকেরা যাতে নিজেদের রক্ষা করতে পারে, সে জন্য যে কোনো উপায়ে সম্ভব তাদের সহায়তা করতে হবে। কিন্তু রাশিয়ার কথাও শুনতে হবে।
তিনি বলেন, যেভাবেই হোক, রাশিয়ার কথায়ও কান দিতে হবে। যাতে তারা অন্যায় কিছু করে থাকলে পরবর্তীতে তা বুঝতে পারে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানকে অগ্রহণযোগ্য বললেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে তুরস্ক। ন্যাটো সদস্য হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি ইস্তানবুল।
মুদ্রাস্ফীতির কারণে তুর্কিদের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। তারা রাশিয়ার জ্বালানি, বাণিজ্য ও পর্যটনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পরেই হাজার হাজার রুশ নাগরিক তুরস্কে ভ্রমণে আসেন। নিষেধাজ্ঞা থেকে তুরস্ককে নিজেদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করছেন তারা।
এদিকে শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেন একটি নিরপেক্ষ দেশ হতে ইচ্ছুক, পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাসের মর্যাদা নিয়ে আপস করতেও প্রস্তুত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন দাবি করেছেন।
যদিও ইউক্রেনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ইউক্রেনকে দুটো ভাগে বিভক্ত করতে চাচ্ছে রাশিয়া।
একটি ভিডিও কলের মাধ্যমে রাশিয়ার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নিরাপত্তা জিম্মা, নিরপেক্ষতা ও আমাদের রাষ্ট্রের অপারমাণবিক অবস্থা, আমরা এসব কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত।
নিরপেক্ষ অবস্থান মেনে নিতে রাজি হলেও এ রকম চুক্তিতে তৃতীয় পক্ষগুলোর জিম্মা ও গণভোটের আয়োজনের কথা বলছেন জেলেনস্কি।
৯০ মিনিটের এই ভিডিও কলে রুশ ভাষায় তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার অভিযানে ইউক্রেনের রুশভাষীরাও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। চেচনিয়ায় রাশিয়ার যুদ্ধের চেয়েও এতে আরও বড় ক্ষতি হয়েছে।
তবে দেশের বেসামরিকীকরণসহ রাশিয়ার আরও কিছু দাবি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করেছেন ইউক্রেন বলে জানান জেলেনস্কি।
এ সময়ে পূর্বাঞ্চলীয় অবরুদ্ধ শহর মারিয়াপুলের ভাগ্য নিয়েও কথা বলেন তিনি। শহরটি কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘিরে রেখে অব্যাহত বোমা হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এক সময় সেখানে চার লাখ জনসংখ্যা ছিল।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, শহরের সব প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্দরটি খনন করা হয়েছে। সেখানে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা গেছে, তা স্পষ্ট। শহরটিতে খাদ্য, ওষুধ ও পানি প্রবেশ করা অসম্ভব।