মাথা উদ্ধারের ১১ মাস পর পাওয়া গেল দেহের ১৯ হাড়গোড়

Slider জাতীয়

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি ডোবা থেকে তানজিনা (২৬) নামে এক তরুণীর মাথা উদ্ধারের প্রায় ১১ মাস পর একটি ডোবা থেকে উদ্ধার হয়েছে শরীরের ১৯টি হাড়গোড়। এ ছাড়া এ ঘটনার মূল হোতাকে গ্রেফতারের পর পুরো ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে তদন্তকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগের আদর্শনগর এলাকার একটি ডোবার পানি সেচে ওই তরুণীর (তানজিনা) শরীরের ১৯টি হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। তানজিনা রংপুর জেলার আবদুল জলিলের মেয়ে। এ ঘটনায় তানজিনার কথিত স্বামী একই জেলার মিঠাপুকুর থানার এনায়েতপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তানজিনা ও রাসেল ফতুল্লার মাসদাইর বাড়ৈভোগ এলাকার সিরাজ খানের বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া থাকতেন।

নারায়ণগঞ্জ পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, তানজিনার সঙ্গে গ্রেফতার রাসেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তানজিনার পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। ২০১৯ সালে রাসেল পারিবারিকভাবে মোনালিসা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। বিয়ের সংবাদে তানজিনা তার পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে আসেন এবং গার্মেন্টে চাকরি নেন। এ সময় রাসেলের সঙ্গে তানজিনার পুনরায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা বিয়ে করে (যদিও বিয়ে সংক্রান্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি)। এরপর থেকে তানজিনা ও রাসেল স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ এলাকায় একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় বসবাস শুরু করেন।

একই সঙ্গে তানজিনা তার কথিত স্বামী রাসেলের মৃত বোনের স্বামী মোস্তফাসহ বিভিন্ন পর-পুরুষের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ নিয়ে তানজিনা ও রাসেলের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। ২০২১ সালের ২৯ মার্চ ঘটনার দিন রাত ৩টায় রাসেল শবেবরাতের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে তানজিনাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখে রেগে যান এবং তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে রান্না করার বঁটি দিয়ে তানজিনার গলায় আঘাত করেন। পরে বঁটি দিয়ে তানজিনার গলা থেকে মাথা কেটে আলাদা করে ফেলেন এবং হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দেন।
নারায়ণগঞ্জ পিবিআই এসপি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম আরও জানান, ২০২১ সালের ২৯ মার্চের পরে রাসেল বিভিন্ন সময়ে খন্ডিত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ তার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী ময়লার স্তূপের মধ্যে ফেলতে থাকেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল গভীর রাতে তানজিনার মাথা একটি প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে ফতুল্লা বাড়ৈভোগ বটতলা সাকিন এলাকার একটি ডোবার মধ্যে ফেলে দেন। পরে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ মাথাটি উদ্ধার করে। এই ঘটনার পরে রাসেল ভাড়া বাসা ছেড়ে হত্যার কাজে ব্যবহৃত বঁটি নিয়ে গোপনে পালিয়ে যান এবং সোনারগাঁ উপজেলার ছোট সাদিপুর এলাকায় ঘর ভাড়া নেন। এর মধ্যে তানজিনার স্বজনরা তানজিনার খোঁজ না পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। জিডির সূত্র ধরে রাসেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্য মতে, তার ভাড়া বাসা থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত বঁটি ও মৃতদেহ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত ফ্রিজ উদ্ধার ও জব্দ করে পুলিশ। পরে তানজিনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি রাসেলের বোন আশার কাছ থেকে উদ্ধার ও জব্দ করা হয়। রাসেলের দেওয়া তথ্য মতে নিহতের দেহের অন্যান্য খন্ডিত অঙ্গ ময়লার স্তূপ থেকে উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *