মিরসরাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় আহত ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের মৃত্যু

Slider বাংলার মুখোমুখি


সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার ছয়দিন পর মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ছয়বারের জনপ্রিয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোররাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য বেলালকে ১নং আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনের নামে মিরসরাই থানায় সোমবার রাতে আবুল কাশেমের স্ত্রী বিবি ফাতেমা একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত বেলালের ছেলে ফাহাদ, নজরুল ও সিরাজুল ইসলাম নামে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) উপজেলার দক্ষিণ মঘাদিয়া ঘোনা এলাকার খালের কাদা মাটি থেকে আবুল কাশেমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর রাত ১০টায় ছুরিকাঘাত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি করানো হয়। হাসাপাতালে তিনবার অপারেশনের করেও শারীরিক কোনো উন্নতি হয়নি। সেখানে রোববার থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। মঙ্গলবার ভোররাত ৩টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে মায়ানী ইউনিয়নে অবস্থিত আনন্দ বাজার যান সাহেরখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ছয়বারের সদস্য আবুল কাশেম। সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হয়। ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে খুঁজতে খুঁজতে রাত ১০টার নাগাদ স্থানীয় মঘাদিয়া খালের পাশে কাদার মধ্যে ছুরিকাঘাত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রথমে মিরসরাই উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরে অবস্থার অবনতি হলে চমেক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়।

আহত সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের ছেলে বদরুদৌজা তারেক জানান, হাসপাতালে দীর্ঘদিন আমার বাবাকে নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ করেছি। শুধু যেন বাবা বেঁচে থাকেন। হামলার পর মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার মুখ থেকে কোনো কথা শুনতে পাইনি। তিনবার অপারেশন হয়েছে। তারপরও আমার বাবাকে বাঁচাতে পারিনি। মঙ্গলবার ভোররাতে আমাদের এতিম করে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, আমার বাবা সারাটা জীবন মানুষের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। শেষ বয়সে সন্ত্রাসীরা আমার বাবাকে চিরতরে শেষ করে দিয়েছে। আমি খুনি বেলালসহ জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি করছি।

আবুল কাশেমের স্ত্রী বিবি ফাতেমা অভিযোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামী আবুল কাশেমের সাথে স্থানীয় শাহেরখালী ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেনের সাথে বিরোধ চলে আসছিলো। এর আগে কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়েছে। এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। আমাদের ধারণা, বেলালের নির্দেশে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাহেরখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘কাশেম সাহেব গত নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষও ছিলো না। তার সাথে কোনোকালে আমার কোনো বিরোধ ছিলো না। হয়তো বা আমার কোনো বিরোধীপক্ষ কাশেম সাহেবের পরিবারকে ভুল বুঝাচ্ছে।’

এদিকে সোমবার সকালে মিরসরাই থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ অলি উল্ল্যাহ বলেন, হামলার ঘটনায় সোমবার মিরসরাই থানায় একটি মামলা হয়েছে। আবুল কাশেম মারা যাওয়ায় তা এখন হত্যা মামলা হবে। ইতোমধ্যে মামলায় অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।

এ রিপোর্ট লেখার সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আবুল কাশেমের লাশ চমেক হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়ি আনার পর নিজ গ্রামে জানাযা শেষে দাফন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *