ভোট চুরি করলে জনগণ ছাড় দেয় না: প্রধানমন্ত্রী

Slider টপ নিউজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট চুরি করলে জনগণ তাদের ছেড়ে দেয় না। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে অতীতে যারা ছিনিমিনি খেলেছে, তারা তাদের শাস্তি হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থেকে সভাপতিত্ব করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য যে মানুষটার বুকভরা ভালোবাসা ছিল, যে মানুষগুলো আমাদের ঘরে বসে খেয়ে পরে গেলো, তারা কীভাবে ওই বুকে গুলি চালায়? বাংলাদেশের মাটি অনেক উর্বর। এখানে যেমন অনেক ভালো মানুষ জন্মে, তেমনি পরগাছাও জন্ম নেয়। তেমন বেইমান পরগাছাও এ দেশে ছিল।

তাদের ইচ্ছা ছিল এ দেশ যেন উন্নতি করতে না পারে। এরা মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল। এদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাদেরকে ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার পদত্যাগের কথা স্মরণ করাতে চাই।’ ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন যারা করে তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসা করি, ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া কেমন ইলেকশন করেছিল? আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তারা ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ভুলে যান কী করে? কয় পার্সেন্ট ভোট পড়েছিল? চার শতাংশ ভোটও পড়েনি। সব জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ভোটের বাক্স সিল দিয়ে ভরে খালেদা জিয়া নাকি তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী। জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলে কী হয়েছিল তার পরিণতি! তাদের তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী তো তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। পদত্যাগে বাধ্য হয় গণআন্দোলনে। ভোট চুরির অপরাধে নাকে খত দিয়ে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ভবনে পদত্যাগ করতে যাওয়ার সময় আমাদের পারমিশন নিয়ে যেতে হয়েছিল। জনগণের পারমিশন নিয়ে তাকে যেতে হয়েছিল। ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। এটা বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে শুরু করে বিগত সময়কালে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর হত্যা, ক্যু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা এ দেশকে কী দিয়েছে? অনেকেই গালভরা বুলি দিয়েছে, তারা গণতন্ত্র দিয়েছে। কী গণতন্ত্র? আজকে নির্বাচন নিয়ে যারা কথা বলেন। প্রশ্ন তোলেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন পঁচাত্তরের পর সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল জারি করে, ক্ষমতা দখল করা হয়েছিল। একটা নয় বার বার ক্যু হয়েছে সেনাবাহিনীতে। ১৯ বার ক্যু হয়েছে। তার ফলটা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে হত্যা করা হয়েছে। সৈনিকদের হত্যা করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে। এরপর রাজনীতি করার শখ। সেই রাজনীতির খায়েশ মেটাবার জন্য মিলিটারি ডিকটেটররা প্রথমে হ্যাঁ না ভোট। সাতাত্তর সালে জিয়াউর রহমানের ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটে কি ‘না’ পড়ার সুযোগ ছিল? সবই তো ‘হ্যা’-ই পড়েছে। একজন সেনাপ্রধান সেনাবাহিনীর রুলস ভঙ্গ করে ক্ষমতায় বসে উর্দি পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি। সে নির্বাচনে জনগণ কি ভোট দিতে পেরেছিল? সেখানে ভোট ছিল কোথায়? তারপর ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছ্বিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করা হলো। সেই দলেরই নাম হচ্ছে বিএনপি।’ ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই নির্বাচনটি তো জনগণের ভোটে হয়নি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করতে দুই-তৃতীয়ংশ মেজেরিটি পেতে জনগণের ভোট ও ভোটের অধিকার নিয়ে খেলা করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন এই খেলা চলছিল।

এরপর ’৮১ ও ’৮৬ সালের নির্বাচন। ৪৮ ঘণ্টা ফলাফল বন্ধ রেখে ফল পাল্টে দেওয়া হলো। ’৯১ সালের নির্বাচনে কোনও দলই সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলো না। তখনকার রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জামায়াত আর জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আমরা ক্ষমতা গঠন করতে পারি। আমরা মেজরিটি পাইনি বলে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। বললাম যে, এই দুর্বল অবস্থা নিয়ে আমরা ক্ষমতা গঠন করতে পারি না। কারণ, আমার ক্ষমতার প্রয়োজন দেশের উন্নয়ন করা। ওই সময় জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতা গঠন করে।’ গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ার কারণে ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল, ভোটের পারসেন্টে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি ভোট পেয়েছিল। কিন্তু সেদিন সেখানে বড় চক্রান্ত হয়েছিল। সেই চক্রান্তের ফলে আমাদের সিট পেতে দেয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে আমরা যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছি, তাতে একেবারে চিহ্নিত করা ছিল কোন কোন সিট আমরা পাবো। কোন কোন সিট আমাদের দেয়া হবে, আর কোনটা দেওয়া হবে না। এর কারণ ছিল গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়া।

আলোচনা সভায় সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *