স্বামীর নির্যাতনে ডিভোর্সের পথে হেঁটেছেন শবনম ফারিয়া

নারী ও শিশু

গত বছরের নভেম্বরে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু বিচ্ছেদের নেপথ্যে কী ছিল? কারো পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি, শোবিজে গল্প ছড়িয়েছে নানারকম। সেসব গল্পে মশলা ছিল কিন্তু প্রমাণ ছিল না। দোষ ফারিয়ার ওপর দিতে ছাড়েননি নেটিজেনদের একাংশ। কিন্তু আদতে কি তাই? সেসময় কেউই মুখ খোলেননি।

২০১৫ সালে ফেসবুকে ফারিয়া-অপুর পরিচয়। সেখান থেকে বন্ধুত্ব ও প্রেম। তিন বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা আংটিবদল করেন। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ধুমধাম করে বিয়ে হয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ও বেসরকারি চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপুর। সেই হিসাবে তাঁদের সম্পর্কের বয়স পাঁচ বছর। হঠাৎ করেই অপুর স্মৃতি ভোলা যাবে না উল্লেখ করে ফারিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে মানুষটার সঙ্গে গত পাঁচ বছর আমার জীবন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে ছিল, সেই মানুষটার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে, যা চাইলেই হঠাৎ করে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। বিচ্ছেদের পরে তাঁকে কীভাবে ছোট করি।’

কিন্তু বুধবার রাতের এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানা গেল নেপথ্যের আঁচ। শবনম ফারিয়া স্বামীর কাছে নির্যাতিত হয়ে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন। শুধু নির্যাতনই নয়, নির্যাতন করে হাত ভেঙে দিয়েছিলেন তার স্বামী। সমাজের নিয়ম ও কী বলবে সমাজ, স্বজন এই ভেবে সহজে বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন দেবীখ্যাত অভিনেত্রী।

শবনম ফারিয়ার ভেরিফাইড ফেসবুক থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তার সঙ্গে এমন ঘটনা দুই বছর আগে ঘটলেও মানুষ কী বলবে বা পরিবার কীভাবে মানুষের সামনে মুখ দেখাবে তা ভেবে সে সময় মুখ খোলেননি তিনি। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ইলমার নির্যাতনের কারণে মৃত্যু প্রসঙ্গে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গেই ফারিয়া কণ্ঠে শিল্পী লোপার একটি পোস্ট শেয়ার করে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা উল্লেখ করেন।

শবনম ফারিয়া লেখেন, মৃত মেয়েটার ছবি দেখার পর বার বার আমি দেড়/দুই বছর পিছনে ফিরে যাচ্ছিলাম। মনে পড়ছে কিভাবে আমি দেবী সিনেমার পুরো প্রোমোশন ভাঙ্গা হাত নিয়ে করেছি, যখন কেউ জানতে চেয়েছি কি হয়েছে, বলেছিলাম সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছি! আমার সাহস ছিল না সবাইকে বলার যে কিভাবে ব্যাথা পেয়েছি!

ফারিয়া বলেন, কারণ আমি জানতাম এই মানুষটার সাথেই থাকতে হবে, নইলে মানুষ কি বলবে! আমার মা সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে! আমার দুই বোন যে স্বপ্ন নিয়ে এত আয়োজনের প্ল্যান করছে তাদের কি জবাব দেব! কাবিনের ৩ মাস না যেতেই এত কিছু! নিশ্চই সমস্যা আমারই! আমি এইটা ভেবে দিনের পর দিন জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি!

বার বার ভেবেছি কিছু হলে সবাই আমাকেই খারাপ বলবে! কিন্তু আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমার মা আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে! সাহস দিয়েছে! বুঝিয়েছে মানুষ কি বলে তার চেয়ে নিজের ভাল থাকা আরও অনেক জরুরি! জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বেঁচে থাকা আরও জরুরি!

লোপা হোসাইন ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স দিলে কতনা গালি খেত এলমা মেয়েটা। সহ্য করতে করতে মরে গেল বলেইনা এখন আমরা মায়াকান্না কাঁদছি… এদেশের বাবামায়েরা সমাজে মানইজ্জত বাঁচাতে মেয়েদের এমনভাবে ব্রেইনওয়াশ অথবা ব্ল্যাকমেইল করে যে ডিভোর্স দিয়ে লাইফের রিস্টার্ট বাটন চাপার চেয়ে পাওয়ার অফ বাটন চেপে দেয়াই বেশী সহজ মনে হয়। আর তার আগেই যদি স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মেরে ফেলে, তাহলে তো কথাই নেই… এইসব ঘটনা দেখলে নিজের অজান্তেই নিজের অতীতে ফিরে যাই…’

এটাই শেয়ার করে নিজের না বলা কথাগুলো বলে ফেলেছেন শবনম ফারিয়া। নেটিজেনরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ শবনম ফারিয়াকে নিয়ে কটূ কথা বলেছিলেন মন্তব্যে সেসবের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *