প্রতিমন্ত্রী মুরাদ আজ পদ হারাবেন আসছে দলীয় শাস্তিও!

Slider বাংলার মুখোমুখি

অশালীন মন্তব্যের জেরে প্রবল সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাতে সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন।

কাদের বলেছেন, তিনি সন্ধ্যেয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে আগামীকালের মধ্যে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ রাতেই মুরাদ হাসানকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে কাদের জানান।

বিরোধীদল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে মুরাদ হাসানের নারী বিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মন্তব্য নিয়ে প্রবল সমালোচনার মাঝেই একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপের সাথে মুরাদ হাসানের নাম যুক্ত হয় – এই দু’টি ঘটনা আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগের চাকা যেভাবে ঘুরল
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবার রাত সোয়া নয়টার দিকে ঢাকায় তার বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন।

সেখানেই কাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানান।

তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেন।।

তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন যে, মঙ্গলবারের মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর বাইরে ঐ সংবাদ সম্মেলনে তিনি আর কিছু বলেননি।

এ ধরনের পরিস্থিতি বা সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে একজন প্রতিমন্ত্রীর বিদায় বাংলাদেশে এক বিরল ঘটনা।

প্রতিক্রিয়া নেই মুরাদ হাসানের
এদিকে মুরাদ হাসানের সাথে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

মুরাদ হাসানের একাধিক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। তারা বলেছেন, মুরাদ হাসান এমুহূর্তে কোনো বক্তব্য দেবেন না। তবে মুরাদ হাসান মঙ্গলবারের মধ্যে পদত্যাগ করবেন।

এনিয়ে মুরাদ হাসান রোববার রাতে বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন না এবং তিনি কোনো ভুল করেননি।

কিন্তু একটি ইউটিউব ভিডিওতে প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই ফেসবুকে একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজন চিত্রনায়িকাকে অশোভন কথাবার্তা ও হুমকি দিতে শোনা গেছে এক ব্যক্তিকে।

ওই ব্যক্তির কণ্ঠ শুনে তাকে মুরাদ হাসান বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে।

এই বিষয়ে কিন্তু মুরাদ হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পর পর দু’টি ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গন, নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন সমালোচনার ঝড় ওঠে, তেমন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে বলেন, এই দু’টি ঘটনায় মুরাদ হাসানের আচরণ নিয়ে যে সব অভিযোগ উঠেছে তা আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

দলটির নেতা-কর্মীদের বক্তব্য ছিল, মাঠ পর্যায়ে তাদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বড় অংশই মুরাদ হাসানের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন। তাদের অনেকের সাথে কথা বলা এমন ধারণা পাওয়া যায়। তবে তারা তাদের দল এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন।

অন্যদিকে, সোমবার দিনের বেলা ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, মন্তব্যগুলো প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত, দলের নয়। একইসাথে তিনি জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে তারা এনিয়ে আলোচনা করবেন।

পরে রাতে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসানের পদত্যাগের ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানান।

মুরাদ হাসানের সামনে রয়েছে দলীয় শাস্তি
ওদিকে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, রাজনীতির মধ্যে শিষ্টাচার থাকা বাঞ্ছনীয়।

‘যারা জনগণকে নিয়ে সব সময় ভাববে, জনগণের জন্য কথা বলবে তাদের মধ্যে যদি শিষ্টাচার না থাকে তাহলে তাদের দিয়ে জনগণের কোন কল্যাণ আসতে পারে না,’ বলছিলেন তিনি।

‘রাজনৈতিক মত-পার্থক্য থাকতে পারে, চেতনার পার্থক্য থাকতে পারে, তাই বলে কারো বিষয়ে অশালীন কথাবার্তা বলা, কুৎসিত কোন আচরণ করা – এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।’

হানিফ জানান, সোমবার সকালেই দলের পক্ষ থেকে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নেয়ার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ে সুপারিশ করা হয়েছিল।

মুরাদ হাসান এখনও এমপি পদে আছেন, কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে দলীয় পদে আছেন, তাহলে তার কী হবে, বিবিসির এই প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম সম্পাদক জানান, সেসব ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।

‘আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ শান্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকবে,’ জানান হানিফ।
সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *