রাজশাহী: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর অপসারণ চেয়ে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়েছেন ১২ জন কাউন্সিলর। এর আগে তাকে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের সরকারী বাংলোতে গিয়ে চিঠিটি দেন কাউন্সিলররা। এতে নেতৃত্ব দেন রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ লতিফুল হক।
চিঠি গ্রহণের পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিল সাংবাদিকদের জানান, কাটাখালি পৌরসভা কাউন্সিলরদের চিঠিটি তিনি পেয়েছেন। পরে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে কাটাখালি পৌর মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তৈরি করে তাতে সবার সই নেয়ার জন্য বিকেল থেকে পৌরসভায় অবস্থান নেন কাউন্সিলররা। সই শেষে রাতে তারা সেটি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে আব্বাসকে বরখাস্তের আবেদন করেন।
আব্বাস আলী কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। এরই মধ্যে তাকে এই পদ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
গত বুধবার তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। একইদিন জেলার পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে আব্বাসকে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে কেন তাকে দলীয় সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর আওয়ামী লীগ।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে শুক্রবার সকালে পৌরসভা ভবনে প্রতিবাদ সভা করেছেন কাউন্সিলররা। এতে তারা মেয়র পদ থেকে আব্বাসকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানান। একই সঙ্গে দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে শাস্তিরও দাবি জানান তারা।
প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন ১২ জন কাউন্সিলর। এতে সভাপতিত্ব করেন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঞ্জুর রহমান। তিনি মেয়রকে অপসারণে অনাস্থা প্রস্তাবের রেজুলেশন সাংবাদিকদের পড়ে শোনান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলরের জরুরী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মেয়রকে অপসারণে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়। রাতেই সেটি জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া হয়েছে। কাটাখালী পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা মেয়র আব্বাসের আগ্রাসন থেকে মুক্তি চান।
মঞ্জুর রহমান আরো বলেন, পৌরসভার রাজস্ব ফান্ডের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ছিল। এখন চা খাওয়ার টাকাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ করে পৌর ফান্ডের টাকা গায়েব হয়ে গেছে। বিষয়টি দ্রুত তদন্তের দাবি জানান মঞ্জুর রহমান।
৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩৬ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। ফান্ডে টাকা থাকার পরও মেয়র আব্বাস এই বেতন-ভাতা দেননি। তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোর করে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করতেন। কেউ স্বাক্ষর না করলে তাকে চাকরিচ্যুতসহ নানাভাবে হুমকি দেন। এছাড়া তার কাজের কোন প্রতিবাদ করলে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন মেয়র আব্বাস।