আ.লীগে ‘ত্যাগী-অনুপ্রবেশকারী’ মুখোমুখি: নিহত ১৮, আহত ৫ শতাধিক

Slider রাজনীতি


ঢাকা:ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিনই ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বিতর্কিতদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ও ত্যাগীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ এনে উত্তপ্ত তৃণমূল। আর সেই উত্তাপে পুড়তে হচ্ছে বৃদ্ধ থেকে শিশু, এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধাকেও। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য কেন্দ্র থেকে বারবার হুশিয়ারি দিলেও কোনো কাজে আসছে না। দিন যত গড়াচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের তালিকা।

গতকাল শনিবারও নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়াই ইউপি নির্বাচন ঘিরে অক্টোবরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৮ নেতাকর্মী, আহত অগণিত। এমন পরিস্থিতিতে বেশ বিব্রত নির্বাচন কমিশন, সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্তি ও গ্রুপিং এমনিতেই দানা বেঁধে আছে। এর মধ্যে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ ও মনোনয়নে ত্যাগীদের বঞ্চিত করায় সেই বিভক্তি বেড়ে রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। সারাদেশ থেকে আসা অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় নিজেরাই নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন দলীয় আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত নেতারা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু ইউপি নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১৬৭টি। এতে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯৪২ জন।

চলমান ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা সম্প্রতি বলেন, ‘অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেছে। এগুলো নিয়ে আমরা বিব্রত। স্থানীয় সরকারের চলমান ইউপি নির্বাচনে নির্বাচনী পরিবেশ ভালো না থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোট বন্ধ করা হবে।’ কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে বলেও হুশিয়ারি দেন সিইসি।

বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘এমন খবরে আমরাও বিব্রত। তবে সব মৃত্যু যে নির্বাচনকেন্দ্রিক, তা কিন্তু নয়। তবু আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কারও বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিরোধী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে দলীয়ভাবে এবং আইনগত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে গত শুক্র ও শনিবার আরও ছয় জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে নির্বাচনকে ঘিরে। এর মধ্যে পিরোজপুর সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগপ্রার্থীর বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরীয়তপুরের রুদ্রকর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা। এতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম ঢালী গুরুতর আহত হন। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় আওয়ামী লীগপ্রার্থীর নির্বাচনী অফিসেও হামলা-ভাঙচুর ও প্রতীকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পটুযাখালীর বাউফল ও নওগাঁয়ের রানীনগরে নির্বাচনী সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪৩ জন। এ ছাড়া বরগুনা সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আটজনকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *