১০ উইকেটে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক জয়

Slider খেলা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচে অতীতে কোনো দল এক উইকেটও খরচ না করে জয় পাওয়ার ইতিহাস নেই। রোববার ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান ১০ উইকেটে এমন ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ল। শুরুতেই টস জিতে পাকিস্তান ব্যাট করতে পাঠায় ভারতকে। কিন্তু মাত্র ১৫১ রানে থামতে হয় বিরাট কোহেলি, রোহিত শর্মাদের।

দুবাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে পাকিস্তানের হেড টু হেড পরিসংখ্যান ছিল ১২-০। বিশ্বকাপ মঞ্চের ভারতের বিপক্ষে কোনো জয়ই ছিল না পাকিস্তানের। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা সেই পরিসংখ্যান প্রসঙ্গ টানলে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক পাত্তাই দেননি। বলেছিলেন, অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে বর্তমান নিয়ে পরিকল্পনায় ব্যস্ত তিনি।

আর রোববার মাঠে সেই পরিকল্পনার পুরোটাই নিংড়ে দিলেন বাবর, শাহীন আফ্রিদিরা। গোটা ম্যাচেই রোববার চালকের আসনে থেকে পাকিস্তান বিশ্বকাপ মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে ১০ উইকেটে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিয়ে গড়লেন বিশ্বকাপের মঞ্চে নতুন ইতিহাস।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলির অনবদ্য হাফসেঞ্চুরিতে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান করে ভারত। আর ১৩ বল হাতে থাকতেই ১৫২ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে যায় পাকিস্তান।

এই লক্ষ্য পেরুতে ইতিহাস গড়া এক উদ্বোধনী জুটি সমর্থকদের উপহার দিয়েছেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্থে ব্যাট করতে নেমে এই দুই ওপেনার অপরাজিত থেকে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। বাবর-রিজওয়ান জুটির কাছে ভারতীয় বোলাররা অসহায় অত্মসমার্পন করে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন।

ভুবনেশ্বর, বুমরাহ, শামির মতো পেসারদের একের পর এক পরিকল্পনা ব্যাটে উড়িয়ে দিয়েছেন বাবর ও রিজওয়ান। আইপিএলে দুর্দান্ত বল করা বরুণ চক্রবর্তীও ব্যর্থ। রবিন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণিকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের এই দুই ব্যাটসম্যান।

জাদেজা ও বরুণ দুজনে ৪ ওভার বল করে রান দিয়েছেন যথাক্রমে ২৮ ও ৩৩। তখন বোলারদের ব্যর্থতা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না বিরাট কোহলির।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাবর আজম। খেললেন ৫২ বলে ৬৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। যেখানে ৬ বাউন্ডারি ও ২টি ছক্কার মার রয়েছে।

উইকেটকিপার ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানও কম যাননি। বাবরকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ৫৫ বলে ৭৮ রানের অসাধারণ ইনিংস খেললেন তিনি। তার ইনিংসে ছক্কার মার ছিল ৩টি। আর মাটি কামড়িয়ে বল সীমানা ছাড়া করেছেন ৬ বার।

যখন জয়ের লক্ষ্যে শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৭ রানের। ১৮ বলে ১৭ রান। তখনো সব ক’টি উইকেট হাতে পাকিস্তান দলের। জয়ের উল্লাসে মাতা শুধু সময়ের ব্যাপার তখন। এ রানের জন্য শেষ ওভার পর্যন্ত আর অপেক্ষা করেননি তারা। ১৭.৫ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন দলকে। আর ওপেনাররাই থাকেন অপরাজিত। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড।

এর আগে টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপাকে পড়ে যায় ভারত। মাত্র ৬ রানে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের উইকেট হারায় তারা। পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন রোহিত আর বোল্ড হয়ে ফেরেন লোকেশ রাহুল।

২.১ ওভারে ৬ রানে দুই ওপেনার আউট হওয়ার পর দলীয় ৩১ রানে ফেরেন চার নম্বর পজিশনে চ্যাটিংয়ে নামা সুরাইয়া কুমার যাদবও।

ইনিংসের প্রথম সারির ৩ ব্যাটসম্যান আউট হওয়াতে চাপের মধ্যে পড়ে যায় ভারত। দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

চতুর্থ উইকেটে ঋষভ পন্থকে সঙ্গে নিয়ে ৫৩ রানের ‍জুটি গড়েন কোহলি। ৩০ বলে ৩৯ রান করে শাদাব খানের বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ঋষভ পন্থ।

ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে হাসান আলীর বলে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ১৩ বলে মাত্র ১৩ রান করার সুযোগ পান রবিন্দ্র জাদেজা।

এরপর হার্দিক পান্ডিয়াকে বেশি সময় সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ৪৯ বলে ৫টি চার ও এক ছক্কায় ৫৭ রান করে ফেরেন তিনি।​​​​​

কোহলি আউট হওয়ার পর ১৩ রানের ব্যবধানে ফেরেন পান্ডিয়া। শেষ দিকে চার বলে পাঁচ রান করেন ভুবনেশ্বর কুমার। ভারত থামে ৭ উইকেটে ১৫১ রানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *