পারিবারিক অভাব অনটনের কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিজিবি সদস্যের আত্মহত্যা

Slider টপ নিউজ

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে নিজের কাছে থাকা অস্ত্রের গুলিতে সোহরাব হোসাইন চৌধুরী (২৩) নামে বিজিবির এক সদস্য আত্মহত্যা করেছেন। জেলার খাগডহর এলাকায় অবস্থিত ৩৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর তিনি আত্মহত্যা করেন বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ কামাল আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সোহরাব হোসেন চৌধুরী ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বাশপাদুয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পরশুরাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ২১ জুলাই বিজিবির চাকরিতে যোগদান করেন।

জানা গেছে, মৃত্যুর আগে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন সোহরাব হোসাইন চৌধুরী। সেখানে আর্থিক অনটন নিয়ে দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন তিনি।

ওই পোস্টে সোহরাব লিখেছেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়ে ভালো কিছু আশা করা মহাপাপ। নামে সরকারি চাকরি, কিন্তু বেতনটা ওই নামের ওপরই। সাত বছর চাকরি, এখনো বাড়িতে গেলে ঠিকমতো একটু কোথাও যাওয়া হয় না। ছুটির সময়টাও চোরের মতো থাকতে হয়। গত কিছুদিন আগে আম্মু খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। মায়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেলাম, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মায়ের জন্য ওষুধ কিনবো, সে টাকা আর হাতে নেই। পরে মামার কাছ থেকে ধার নিয়ে মাকে কিছু ওষুধ আর গাড়ি ভাড়া দিলাম। এমনটা প্রতিমাসেই হতে থাকে। না পারি নিজের খুশিমতো একটা জিনিস কিনতে, কিংবা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভালো কিছু খেতে, না পারি পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে। তার মধ্যে বর্তমান বাজারের যা পরিস্থিতি, এতে বাজার করা কিংবা সংসার চালানো কতটা কঠিন, বোঝানোর মতো না। ছোট ভাইটা শারীরিকভাবে কিছুটা অক্ষম। তার জন্য কিছু করবো, তার সুযোগ হয়নি এই জীবনে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ প্রশ্ন করে, বিয়ে করি না কেন? কিন্তু মানুষকে তো আমার সরকারি চাকরির ভেতরটা দেখাতে পারি না। আমার বেতন, আমার সুযোগ-সুবিধা, সেভিংস এই সব কিছুতে অন্য একটা মানুষকে আনা আমার জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তাই বিয়ে-শাদীর চিন্তা করিও না। শুধু খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারলে খুশি—এমন চাইলাম, তাও আর হয়ে উঠল না। সাতটা বছর মানসিক যন্ত্রণা আর অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে সত্যি বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। এবার একটু রেস্ট দরকার।

আমার পরিবার-সহকর্মী, সিনিয়র-জুনিয়র, আমার বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, এই নিকৃষ্ট কাজের জন্য পারলে ক্ষমা করবেন। এই ছাড়া বিকল্প কোনো পথ আমার ছিল না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *