ভবঘুরে’ ইকবাল গ্রেপ্তারে যে সকল প্রশ্নের সুরাহা জরুরি

Slider জাতীয়

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ‘ভবঘুরে’ ইকবালকে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় আনা হয়েছে। পুলিশ বলেছে সে ভবঘুরে। এছাড়াও খবরে প্রকাশ সে নাকি মাদকাসক্ত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন ভবঘুরে বা পাগল কি করে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ফিতা কাটলো? কুমিল্লায় মন্দিরে কোরআন রাখলো আর দেশজুড়ে হামলা, আগুন, লুট শুরু হয়ে গেল। বিষয়টি কি এত সহজ? অঙ্কের হিসাবে দুইয়ে দুইয়ে চার, এটাই কি? নিশ্চয় তা নয়। এতোটা সরল অঙ্ক ভাবার কোনো কারণ নেই।

ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে একটি সম্প্রদায়ের কোটি কোটি মানুষের উৎসবকে কান্নায় রূপান্তরের ঘটনা একজন ভবঘুরে ইকবালকে দিয়ে হয়ে গেল? সাধারণ মানুষ যেমন এটি বিশ্বাস করছে না। খোদ সরকারও তা বিশ্বাস করে না। পুলিশও একই প্রশ্ন করছে গ্রেপ্তার হওয়া ইকবালকে নিয়ে।
সরকারি দল বা সনাতন সম্প্রদায়ের নেতারাও প্রশ্ন তুলেছেন এ নিয়ে। এর পেছনে কারা তাদের মুখোশ উন্মোচন জরুরি।

কক্সবাজারে শনাক্ত হওয়া আসামী গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেছেন, ইকবাল হোসেন নামে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার নামের আগে একটা শব্দ জুড়ে দিল। সেটা হলো ভবঘুরে। কখনো কখনো এমন যাদের ধরা হয়, কখনো বলে পাগল, না হলে বলে ভবঘুরে। এই ভবঘুরে কীভাবে পবিত্র কোরআন শরিফ চিনল? এটি কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না। এটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। চক্রান্তকারীরা পেছনে আছে। এদের বের করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব।

চিহ্নিত হওয়া ইকবালকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালও সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, কাজটি পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছে। এর পেছনে কেউ রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও এমন বেশকিছু প্রশ্ন নিয়ে কাজ করছেন।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত বলে আমরা পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। কিন্তু নিকট অতীতের এই ঘটনা আমাদের আত্মপরিচয়কে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে আমরা কি এমন দেশ চেয়েছিলাম? এমন দেশের জন্যই কি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল? একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তেই বাংলাদেশের জন্ম। অথচ পঞ্চাশ বছর পরেও একটি সম্প্রদায়ের মানুষ চরম নিরাপত্তহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। তাই অবিলম্বে ইকবালের পেছনে কারা, তাদের খুঁজে বের জরুরি। আর দেশজুড়ে হামলা ছড়িয়ে দেয়ার নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী কারা তাদেরকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা দরকার। না হলে বরাবরের মতোই বিচারহীনতার জটে আটকা পরে যাবে ঘটনার মূল হোতারাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *