ট্রেন-বাস-লঞ্চে জনস্রোত,

Slider জাতীয় সারাদেশ

14238105_1795011610773144_2488328389744652832_n

 

ঢাকা: নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ আপন মনে। ঘরমুখো মানুষের আনন্দের গন্তব্য এখন শেখড়ে। গতকাল ট্রেন, বাস, লঞ্চ স্টেশনে দেখা গেছে ব্যাপক জনস্রোত। এই স্রোত যেন বাঁধভাঙার মতোই। যে যেভাবে পারছেন বাড়ির দিকে ছুটছেন। এসব পরিবহনে তাই তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। পথে পথে রয়েছে হাজারো দুর্ভোগ।
এবারের ঈদযাত্রার শুরু থেকেই মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজট লেগেই আছে। তাই এখনও ঘরমুখো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মহাসড়কগুলো তাদের জন্য অস্বস্তিতে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও দীর্ঘ যানজটের কারণে ঘরমুখো মানুষকে রাস্তায় ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। ট্রেনেও ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে গতকাল। অনেক যাত্রীর সময়মতো টিকিট না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অহরহ অভিযোগ করেছেন বহু যাত্রী। সড়কগুলোতে রয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। এমন আরো অনেক বাধা থাকার পরও সব বাধা ঠেলে বাড়ি ফেরছে মানুষ। এক্ষেত্রে সড়ক, রেল ও নৌপথের পাশাপাশি মানুষ ব্যবহার করছে বিমানপথও। সরকারি অফিসগুলো বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি হয়েছে। গতকাল কিছু বেসরকারি অফিস ও গার্মেন্টস শিল্পের কর্মীরা হাজিরা দিয়েই বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। কিছু সংখ্যক কর্মী সমস্ত কাজ গুছিয়ে আজ সোমবার খুব সকালেই রওনা দেবেন বাড়ি। অনেকেই আবার এই ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বাইরে ঘুরতে যাচ্ছেন। নৌ-পরিবহন মালিকদের দাবি, এ বছর দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ নৌপথে বাড়ি ফিরবেন। রেল, সড়ক ও বিমানপথে যাচ্ছেন বাকিরা। মূলত ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ সোমবার থেকে ছুটি শুরু হচ্ছে। তবে, এর আগে গত বুধবার থেকেই অনেকেই টিকিট করে পরিবারের অন্য সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারা অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পেরেছেন। ফলে ব্যস্ত শহর ঢাকা অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে।
বাস টার্মিনাল: গতকাল রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায় দেশের সব রুটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসে বাড়ি পৌঁছাতে অনেক সময় নিচ্ছে। যাদের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে তাদের বাড়ি পৌঁছাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগার কথা থাকলেও পথেই সময় লাগছে ১৫ থেকে কুড়ি ঘণ্টা। দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রীদের প্রায় একই অবস্থা।  টাঙ্গাইল পর্যন্ত যেতেই কয়েক ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে গতকাল রোববারও তীব্র যানজট ছিল। যানজটের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের ভোগড়া থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট দেখা গেছে। একই সময় ভোগড়া বাইপাস থেকে বোর্ডবাজার পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজট ছিল। কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় যানজট। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মহাসড়কের বাঐখোলা এলাকায় একটি বাস ও প্রাইভেটকারের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজট বাড়ে। সকাল আটটার দিকে এই মহাসড়কে ব্যক্তিগত
গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের চাপ বেড়ে যানজট পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মির্জাপুর এলাকায় টাঙ্গাইলগামী যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়। এ ছাড়াও যানবাহনের প্রচণ্ড চাপে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। খুবই ধীরগতিতে চলছিল যানবাহন। এ অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল দূরপাল্লার যাত্রীদের।  উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধাগামী এক যাত্রীর নির্ধারিত বাস ছিল শনিবার রাত ৯টায়। সেই বাস আবদুল্লাহপুর কাউন্টারে এসেছে রাত ৩টায়। ওই বাস ১১ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল পৌঁছেছে বলে যাত্রীর ভাই জানিয়েছেন। ওই যাত্রী এনা পরিবহনে গাইবান্ধা যাচ্ছিলেন।
কমলাপুর রেলস্টেশন: কমলাপুর এবং এয়ারপোর্ট স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বাড়িতে যাবার আশায়। সিলেটগামী একটি ট্রেন ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে বিকল হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখো ট্রেনের যাত্রী হাজার হাজার মানুষ। গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি ট্রেনেরই যাত্রার সময় ঠিক নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার থেকেই কিছু ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কয়েকটি ট্রেন ৩০ মিনিট থেকে প্রায় চারঘণ্টা  উপরে দেরি করে স্টেশন ছেড়েছে। এ জন্য ছেড়ে যাওয়ারও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউ। প্ল্যাটফরমের ভেতরে তথ্য সেবা দিচ্ছে স্কাউট সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে জানা গেল, প্রতিটি ট্রেনই বিলম্ব করে প্ল্যাটফরমে প্রবেশ করছে। এ কারণে ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাধ্য হয়ে মানুষ ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। বেশি যাত্রী নিয়ে ট্রেনগুলোকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। কারণ আসন কিংবা টিকিট না পাওয়া গেলেও ঈদে বাড়িতে যে যেতে হবে। ট্রেনের দরজায় ঝুলে, ছাদে উঠে অনেকে গন্তব্যে গেছেন। আর চাপের কারণে অনেক ট্রেন নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারছে না। দেরি হচ্ছে। দরজায় ঝুলে, বগির পেছনের অংশে দাঁড়িয়ে, ছাদে উঠেও মানুষকে যেতে দেখা যায়। ভিড়ের কারণে কেউ কেউ চেষ্টা করেও ট্রেনে উঠতে পারেননি। আর টিকিট করে সিট পেলেও অনেকে সিট খুঁজে পাননি।  রোববার সকাল পৌনে ৭টায় সিলেটের কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়া ১৫ মিনিটের মাথায় পারাবাত এক্সপ্রেসের দুটি কোচের ‘এয়ার প্রেসার ব্রেক আউট’ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসও বিমানবন্দর স্টেশনের আগে খিলক্ষেতে একই সমস্যায় পড়ে। এতে অন্তত ১১টি ট্রেনের সূচিতে কয়েক ঘণ্টার বিলম্ব হয়। কমলাপুর স্টেশনে বিভিন্ন গন্তব্যের অপেক্ষমাণ হাজার হাজার যাত্রী পড়েন ভোগান্তিতে। পারাবতের পেছনেই আটকা পড়ে থাকে সকাল ৭টায় কমলাপুর ছেড়ে আসা সোনারবাংলা এক্সপ্রেস; তেজগাঁও স্টেশনে বসে থাকে তিস্তা এক্সপ্রেস। এছাড়া রাজশাহীর ধূমকেতু এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতী, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের মহুয়া এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জের ঈদ স্পেশাল, গাজীপুরের জয়দেবপুর এক্সপ্রেস, জামালপুরের তারাকান্দির অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস ও দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসকে কমলাপুর স্টেশনে বসে থাকতে হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুটি ট্রেনের পারাবতের ‘এয়ার প্রেসার ব্রেক’ ঠিক করে দেয়ার পর ফের ট্রেন ছেড়ে যেতে শুরু করে। কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, পারাবত ট্রেনটি বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ভ্যাকুয়াম সমস্যার কারণে আটকে থাকায় ঢাকা  থেকে ছেড়ে যাওয়ার লাইন ‘ব্লক’ হয়ে যায়। এ কারণে তিস্তা তেজগাঁওয়ে ও সোনারবাংলা খিলক্ষেতে আটকে পড়ে। এছাড়া আরো অন্তত সাতটি ট্রেন কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। আমাদের লোকজন এগুলো মেরামত করে দিয়েছে। দুপুরের পর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। এর মধ্যে সকাল ৯টার রংপুর এক্সপ্রেস কমলাপুর ছেড়ে যায় বেলা সোয়া ১২টায় এবং সকাল ১০টার একতা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় বেলা পৌনে ১২টায়। এর মধ্যে ধূমকেতু শনিবারও দেরি করে ছেড়েছে। রোববার ভোর ৬টায় এই ট্রেনের কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৭টার আগে স্টেশনে এসে পৌঁছাতে পারেনি। পরে এটি প্রায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যায়।

সদরঘাট: রোববার সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল গ্রামমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরো তীব্র আকার ধারণ করে। যাত্রী বেশি থাকায় লঞ্চগুলো তাড়াতাড়ি ঘাট ছেড়েছে। সিট পাওয়ার জন্য অনেকেই রাত কাটিয়েছেন টার্মিনালে। এমন একজন ভোলাগামী  যাত্রী খোকন সরদার। তিনি থাকেন গাজীপুর। গত শনিবার রাতে এসে টার্মিনালে ঘুমান। কারণ হিসেবে বললেন, সিট না পেলে অনেক কষ্ট হয়। তার পক্ষে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার সিঙ্গেল কেবিন নিয়ে বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়। তাই ভোরে লঞ্চ টার্মিনালে এলেই দ্রুতই তিনি ডেকে বেডসিট বিছিয়ে সিট করেন। তিনি বলেন, বাড়িতে যেতে কষ্ট হলেও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে  ঈদ করার মজা আলাদা। এদিকে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী প্রায় সব লঞ্চের ছাদে যাত্রীদের দেখা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *