জাহাঙ্গীর আলম একজন বোকা নেতা নয় কি!

Slider টপ নিউজ

সভ্যতার বিনাশ ঘটলে একটি নজীর স্থাপন হয়। শিষ্টাচারের বত্যয় ঘটলে বেয়াদব হয়। অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলে কখনো অপরাধী হতে হয়। আবার ন্যায় কথা বললেও মাঝে মাঝে জেলে যেতে হয়। আদি সভ্যতা আর এখনকার সভ্যতার মধ্যে বভচ্ছেদ ঘটে এটাই হয়েছে। সত্যের শির চির উন্নত তবে হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল। এটাই এখন সংস্কৃতি হয়ে যাচ্ছে। সভ্যতার বিকাশ যদি এই স্টাইলে ঘটে তবে গতস্য সূচনা নাস্তিই হবে। কারণ অতীত নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই। বর্তমানকে মেনেই চলতে হবে। অতীতে যা হতো না, এখন তা হয়। তাই অতীত কেন বর্তমানে নেই, সেটা ভাবার অর্থ হল, গতস্য সূচনা নাস্তি। তবে গতস্য সূচনা নাস্তি হলেও গতস্য থেকে চলন্ত পর্যন্ত অনুশোচনা করেই আগামী তৈরী করা ভালো। এতে আক্ষেপ থাকে না। হতাশা কমে, বাড়ে না। বর্তমানকে মেনে নিয়ে আগামী তৈরী করলে পরিকল্পনা ভালো ও ফলপ্রসূ হয়।

বাস্তবতা বলছে, মীর জাফরদের নজীর থাকার পরও মির্জাফরী কমছে না। সভ্যতার এই নজীর মাথায় নিয়েই মির্জাফরদের দখল বাড়ছে। সব জায়গায় মির্জাফরী। উপমহাদেশের এই নজীর বাস্তবে হয়ে মুশতাকদের জন্ম দিল। বাংলাদেশের জন্য মীর জাফরদের কথা ভুলে গিয়ে নতুনভাবে মুশতাকদের কথা স্বরণ করতে হয়। মুশতাকদের নেটওয়ার্ক দিন দিন বাড়ছে। ভাবতে আর অবাগ লাগে না যে, কোন ক্ষুদার্থ লোককে পেট ভরে খাইয়ে দিলে সেই লোক শক্তি সঞ্চয় করে যিনি খাইয়ে দিলেন তাকেই খুন করে ফেলে। আমার জীবনের বাস্তবতার একটি গল্পের সারাংশ হল, আমি একবার ঢাকার ভুতের গলি থেকে স্বপন নামে বরিশালের এক যুবককে ক্ষুধার জ্বালায় মৃত ও বাসা ভাড়া দিতে অপারগ হয়ে বন্দি অবস্থায় উদ্ধার করে নিজের বাসায় জায়গা দিয়েছিলাম। ব্যাচেলর জীবনে রাজধানী ঢাকার খিলগাও তিলপাপাড়ায় আমার ভাড়া বাসা থেকে ঈদের জন্য বাড়ি যাওয়ার আগে স্বপনকে বাসায় রেখে গিয়েছিলাম। ঈদ শেষে এসে দেখি আমার ফ্লোরে পড়ার সেন্ডেল ছাড়া আর কিছু নেই। ব্যাচেল জীবনে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বাসাটা ভালো করে সাজিয়ে ছিলাম। এসে দেখি স্বপন সাহেব স্বপ্নের মতই আমার তিলে তিলে গড়া সুখের নীড় লুট করে নিয়ে গেছে। তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে মুচকি হেসে মালিকবাগ চৌধুরী পাড়া থেকে কিছু আসবাবপত্র কিনে বাসায় রইলাম। এই গল্প আমার জীবনকে পরিশুদ্ধ করতে পারেনি। স্বপন সাহেবের থেকে যে শিক্ষা পেলাম সেই শিক্ষা আমাকে শিক্ষিত করতে পারেনি। আমার জীবনের বর্তমান পর্যন্ত অসংখ্য স্বপনময় শিক্ষা পেলেও লজ্জা নেই আমার। বার বার একই কাজ করি। স্বপনদের পুনর্বাসন করি আর স্বপনরা আমাকে একটি করে অধ্যায় পড়িয়ে যায়। লজ্জা পাই না কারণ আমি চাই জীবনের শেষ পর্যন্ত স্বপনদের দেয়া অধ্যায় গুলোকে এক সাথে করে একটি বই লিখব। যদি সময় পাই তবে ওই বই পড়ে আমার মত অনেকে স্বপনদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে বার বার শিক্ষা নিবে। কারণ মির্জাফর থেকে মুশতাক যুগে যুগে না আসলে আত্মঘাতীদের ভয়াবহ আক্রমন মানুষ ভুলে যাবে। জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হলে প্রতিটি জীবনে মির্জাফরদের একটি অংশ দিতে হবে। মির্জাফর, মুশতাক ও স্বপনদের আনাগোনা ইতিহাসে পুরাতন হয়ে গেলে ইতিহাস সমৃদ্ধই হবে না। কারণ বিশ্বাসঘাতক ছাড়া কোন ইতিহাস রচিত হয়নি অতীতে, বর্তমানে ও হবেও না আগামীতে। তাই মির্জাফররা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বাংলাদেশের এখনকার বাস্তবতা আরো আপডেটেড। পরিবারনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতি এখন নতুন সভ্যতার ইতিহাস গড়ছে প্রতিনিয়ত। আজ আমরা যাদের মন্দ বলছি কাল তাদেরকে বন্ধু বলছি। আজকের বন্ধু কালই শত্রু হয়ে যাচ্ছে আমাদের বর্তমান বাস্তবতায়। এমনি একটি বাস্তবতার ভিকটিম হচ্ছেন গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ২০০৯ সালে ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে জাহাঙ্গীর আলম জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রবেশ করেন। সেই সময় যারা তার বিরোধীতা করেছিলেন পরবর্তি সময় তাদের অনেকেই তার পক্ষে আসেন। আবার যারা পক্ষে ছিলেন তাদের অনেকেই শত্রু হয়ে যান। এই বাস্তবতায় ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির মেয়র নির্বাচনের সময় দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমকে অপহরণ হতে হয়। ২০১৩ সালের পর জাহাঙ্গীর আলমকে কেউ কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন পর্যন্ত করেনি। কারণ তার তখন কোন পদ ছিল না। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলম অনেকটাই রাজনীতি বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করেন। ২০১৫ সালে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটির মেয়র হওয়ার মধ্য দিয়ে আবার তার জনিপ্রিয়তা দেখা যায়। মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার কিছু দিনের মধ্যেই দেখা যায়, মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কোন বিরোধীতাকারী নেই। মানে কোন মির্জাফর বা মুশতাক নেই।

আওয়ামীলীগ, বিএনপি সহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-কর্মী এমনকি সাংবাদিকেরাও জাহাঙ্গীর আলমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আশাবাদী খবর হল, ২০১৩ সালে যাকে মেয়র করার জন্য জাহাঙ্গীর আলমকে অপহরণ করা হয়েছিল, সেই ব্যক্তিও জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। সবশেষ খবর হল, বিএনপি ও জামাতের কিছু সাংবাদিকও আওয়ামীলীগ হয়ে মেয়রের সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৫ আগষ্টের গরু জবাই করে জাতীয় শোক দিবস পালন করেছেন। এর আগে দশ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে ওরা সবাই মিলে বনভোজন করে শান্তির প্রতীক পায়রাও উড়িয়ে ছিলেন। সেই দিন ভেবেছিলাম বাঁচা গেলো। সব সাংবাদিক এক প্ল্যাট ফরমে এসেছে সুতরাং আর অনৈক্য থাকবে না। সেই থেকে আরো ভেবেছিলাম জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগরের সবেচেয় জনপ্রিয় নেতা, সেবক ও দেশপ্রেমিক।

কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেলো, হিতে বিপরীত। যারা জাহাঙ্গীর আলমের মেয়র হাউজ ও মেয়র ভবন থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা এমনকি কোটি কোটি টাকাও নিয়েছেন তাদের অনেকেই বিভৎস আন্দোলনও করছেন বা করাচ্ছেন। আবার সুবিধাভোগীদের কেউ কেউ সকাল দুপুর ও বিকেলে পালাক্রমে পক্ষ পরিবর্তনও করছেন। একবার এই কোল আবার সেই কোল আবার এই কোল। হায়রে খেলা। এই খেলার জন্য দায়ী জাহাঙ্গীর আলম। কারণ ইতিহাস থেকে তিনি শিক্ষা নেননি। মির্জাফর ও মুশতাকদের আক্রমনে বার বার ইতিহাস আহত হওয়ার পরও তিনি মনে রাখতে পারেননি কোন ইতিহাস। রিক্সাওয়ালাকে ট্রাক কিনে দেয়ায় সেই ট্রাকে মানুষ কিনে তার বাড়ির সামনে বিষোদগার করে তার গর্ভধারীনি মাকে আহত করার চেষ্টা করবে, এটাই ইতিহাসের নিষ্ঠুরতা। ফুটপাতের দোকানদারকে কোটি কোটি টাকার মালিক বানানোর সময় জাহাঙ্গীর আলম মনে রাখতে পারেননি পলাশী যুদ্ধের কাহিনী। ভবঘুরে ও বেকারের একাধিক উঁচু উঁচু দালন বাড়ি দেখে মানুষ যখন বলে জাহাঙ্গীর দিয়েছে তখন বুঝা যায় জাহাঙ্গীর আলম কত বোকা। কারণ কাজ ছাড়া টাকা পেয়ে এরা হিতে বিপরীত হবে এটাই ইতিহাস। জাহাঙ্গীর আলম টাকা দিয়ে ঘরজামাইকে যখন শশুর বাড়ির মালিক বানায়, ভাড়া থাকার মানুষদের যখন বহুতল ভবনের মালিক করে দেয় আর না খাটা ছিন্নমূল মানুষদের আলিশান বাড়ি বলে দেয় জাহাঙ্গীর আলম বোকা। তখন খেয়াল করতে পারেননি ইতিহাসের নির্মমতা কত কঠিন।

গাজীপুর জেলার ইতিহাসে জাহাঙ্গীর আলমের মত বোকা নেতার জন্ম হয়েছে বলে জানা নেই। কারণ জীবনের শুরু যেখানে ছাত্রলীগ, সেখানে পলাশীর যুদ্ধ ও ১৫ আগষ্টের পূর্বাপর প্রেক্ষাপট মনে না থাকার কি কারণ ছিল! আমরা যারা আমজনতা আমরা হয়ত ইতিহাস এতটা খেয়াল করি না। কিন্তু যারা রাজনৈতিক নেতা তারা যদি ইতিহাস পড়ে মুখস্ত করেও মনে রাখতে না পারেন, তবে সেটা সরলতা নয়, মূর্খতা নয় সেটা বোকামীর মধ্যে পড়ে। তাই ইতিহাস থেকে নেয়া শিক্ষার সাথে বোকামীর শিক্ষা যোগ না করলে জাহাঙ্গীর আলমের মত আগামী দিনে অনেক নেতাকেই এমন বরণ করতে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
তাং ১৩/১০/২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *