সরকার বলে গাছ লাগান, ফেনীতে চেয়ারম্যান-প্রকৌশলী বলেন ‘গাছ কাটুন’!

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে নানা সময়ে বলা হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনে কারণে-অকারণে যেন গাছ কাটা না হয়। বরং বেশি বেশি গাছ লাগাতে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে ফেনীর পরশুরামে গাছ কাটায় উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে জনপ্রতিনিধি ও নির্বাহী প্রকৌশলীর তরফ থেকে। একটি সড়কের প্রশস্তকরণ কাজের জন্য বিকল্প পাশে খালি জায়গা থাকা সত্ত্বেও এক পাশের সবগুলো গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেখানে। গাছগুলোর মালিককে দ্রুত গাছ কেটে নিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মনিপুর জোড়পুকুর সুলতানুল উলুম মাদ্রাসা-সংলগ্ন সড়কটি বড় করার কাজ হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। সড়কটি পরশুরাম থেকে সুবার বাজার, মনিপুর, রাজাপুর হয়ে ফুলগাজীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

এই এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতির জন্যও গাছগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো এখানে ছায়া দেয়। পথের মানুষ এখানে এসে ছায়ায় দাঁড়াতে পারে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিভিন্ন সময় বলেছেন গাছ যথাসম্ভব না কেটে রাস্তা নির্মাণ করতে, সেখানে তারা রাস্তার অন্যপাশে খালি জায়গা থাকা সত্ত্বেও এই সুন্দর গাছগুলো কেটে ফেলতে চাইছেন কেন?

এই সড়কের একটি অংশে রাস্তার পাশে বাড়ি মাওলানা হাসান মুহাম্মদ অলি উল্ল্যাহর। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রাস্তা যখন পাকা করা হয়, তখন আমাদের জায়গা বেশি করে নেওয়া হয়। আমার বাবা নিজ থেকেই রাস্তার জন্য সেই জায়গা দেন। তখন তিনি কোনো আপত্তি করেননি। কিন্তু এখন রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য আবার আমাদের জায়গা নিতে চাচ্ছে তারা।

তিনি বলেন, এখানে আমাদের বেশ পুরোনো কিছু গাছপালা আছে। এসব গাছ আমাদের বাড়ির জন্য একটা প্রাকৃতিক ছায়াঘেরা নিরাপত্তা দেওয়ালের মতো কাজ করছে। গাছগুলোর ছায়ায় একটু পেছনে আমার বাবার কবরও রয়েছে (মৌলভী বশিরুল্লাহ)। উনি আলেম মানুষ ছিলেন এবং এলাকায় বেশ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। গাছ কেটে ফেললে তার কবর এবং আমাদের বাড়ির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এছাড়া এই এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতির জন্যও গাছগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো এখানে ছায়া দেয়। পথের মানুষ এখানে এসে ছায়ায় দাঁড়াতে পারে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিভিন্ন সময় বলেছেন গাছ যথাসম্ভব না কেটে রাস্তা নির্মাণ করতে, সেখানে তারা রাস্তার অন্যপাশে খালি জায়গা থাকা সত্ত্বেও এই সুন্দর গাছগুলো কেটে ফেলতে চাইছেন কেন?

তিনি আরও বলেন, আমরা সড়ক উন্নয়নের বিরুদ্ধে নই। আমরা কেবল আবেদন করেছি যে, সড়কের এই অংশটুকুতে রাস্তার যে পাশে খালি জায়গা আছে সেদিকে বর্ধিত করা হোক। আমি এলজিইডির পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে যাই। কিন্তু তিনি আমার আবেদনপত্রই গ্রহণ করেননি। এটা কী ধরনের আচরণ হলো? দেশের যেকোনো নাগরিক যেকোনো বিষয়ে সেখানে আবেদন নিয়ে যেতেই পারেন। তিনি আবেদন মঞ্জুর না করতে পারেন কিন্তু আবেদনপত্রটা তো গ্রহণ করবেন! তিনি তা করেননি। উল্টো বলেছেন ‘উপরের নির্দেশ আছে, এখানে কিছু করার নেই। গাছ কেটেই রাস্তা নির্মাণ করতে হবে।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটি প্রথমবার নির্মাণের সময় মাওলানা হাসানদের বাড়ির জায়গার একটা অংশ ছেড়ে দিতে হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু তারা আগে জায়গা দিয়েছে এবং এখন গাছ কাটার বিষয় আছে আবার অন্যপাশেও খালি জায়গা আছে, কর্তৃপক্ষ চাইলে বিকল্প দিকে রাস্তা বাড়াতেই পারে। এটা বড় কোনো বিষয় নয়। এটা আসলে ইউপি চেয়ারম্যানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়।

জানতে চাইলে এ প্রকল্পের ঠিকাদার নূর নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমরা কাজ করছি। তিনি যেভাবে বলছেন সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।’

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টাে বলেন, ‘রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য দুইপাশে সমানভাবে প্রয়োজনীয় জায়গা নেওয়া হচ্ছে। এখানে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। কিছু গাছ কাটা পড়বেই।’

তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিকল্প জায়গা থাকার পরও গাছ কেটে রাস্তা বাড়াতে হবে কেন? বিশেষ করে যেখানে সরকারি নির্দেশনা আছে যেখানে সেখানে গাছ না কাটার ব্যাপারে? এর উত্তরে চেয়ারম্যান ভুট্টো বলেন, ‘এটা আমাদের এলজিইডি অফিস দেখছে।’

বিকল্প ব্যবস্থা থাকার পরও গাছ কাটার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডির পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. শাহ আলম ভূঁঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে এসেছি, সেখানে পুরাতন কোনো গাছ চোখে পড়েনি। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয়দের দাবি বিকল্প জায়গা আছে! আপনার কাছে এ বিষয়ে আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছিল— জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কেউ কোনো আবেদন নিয়ে আসেননি!’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে এইমাত্র বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে ফেনী জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে যদি গাছ কাটা একান্ত দরকার হয়ে পড়ে বা বিকল্প উপায় যদি না থাকে তাহলে কাটা যেতে পারে। সেই জায়গায় নতুন করে গাছ লাগাতে হবে। তারপরও এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ যদি আমার নজরে আসে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সৌজন্যে ঢাকা পোষ্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *