সংক্রমণ কমছে স্বাস্থ্যবিধিও উধাও

Slider সারাদেশ

দেশে করোনার সংক্রমণ কমছে। দৈনিক শনাক্তের হার এখন ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। মৃত্যুও ৪০-এর নিচে বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। সরকার সবকিছুই খুলে দিয়েছে। কিন্তু মানুষ চলমান করোনা মহামারির কথা ভুলে গেছে। অথচ উন্নত দুনিয়ায় করোনা কমলেও তাদের সেখানে স্বাস্থ্যবিধি ঠিকই ভালো মানা হচ্ছে। আমাদের দেশে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মানছে না জনগণ। আদতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের চরম গাফিলতি দেখা যাচ্ছে।

মাস্ক ব্যবহারের ওপর তেমন জোর দেয়া চোখে পড়ছে না। মানুষের ভিড়, গাদাগাদি ঠেকাতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে চলছে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, মানববন্ধন। এসব কর্মসূচিতে হাজারো মানুষের সমাগম হচ্ছে। মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। মাস্ক ব্যবহারেও রয়েছে যথেষ্ট অবহেলা। শুধু সভা-সমাবেশই নয়। মার্কেটে-যানবাহনে যেন মানুষ ভুলতে বসেছে স্বাস্থ্যবিধির কথা। দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ছুটিতে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারো করোনা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মাস্ক পরাসহ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেছেন, সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমাদের পজেটিভ রেট ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশ থেকে কোভিড চলে গেছে। আমরা খেয়াল করেছি, অনেকেই মাস্ক পরছেন কিন্তু সঠিকভাবে পরছেন না। নাকের নিচে পরছেন অথবা ঠিকভাবে পরছেন না। তিনি আরও বলেন, তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে, বর্তমানে লকডাউন নেই, বিধিনিষেধেরও অনেক কিছু নেই। আপনারা অনেকে অনেক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাচ্ছেন-যেখানেই যান না কেন এই স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলুন। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করুন। প্রত্যেকে সঠিকভাবে মাস্ক পরুন। তাহলেই অনেক সেফটি পেয়ে যাবেন। ডা. রোবেদ আমিন বলেন, দু’দিক থেকে যদি আমরা মাস্ক পরতে পারি, ওয়ান টু ওয়ান তাহলে কিন্তু ৯৬ ভাগ সম্ভাবনা থাকবে একজন থেকে আরেকজন না যাওয়ার। যদি একজন মাস্ক পরেন এবং আরেকজন খুলে রাখেন তাহলে কিন্তু সম্ভাবনা ধীরে ধীরে বেড়ে যাবে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এই ব্যাপারে বলেন, সবকিছু খুলে দেয়ার পর মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি খুব ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। মানুষ উদাসীনভাবে চলাফেরা করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মাস্ক পড়ে ঠিকই ক্লাস করছেন। কিন্তু বাইরে অভিভাবকরা স্বাস্থ্যবিধির কোনো রকম তোয়াক্কা করছে না। তারা জটলা বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন। করোনার মহামারিকালে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এই জনস্বাস্থ্যবিদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সবাইকে মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ ভাবছে এখন সংক্রমণ নাই, সংক্রমণ বাড়লে আবার মাস্ক পড়বো, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুবো। এই মনোভাব খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে আরও বলেন, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনিক মনিটরিং জোরদার বাড়াতে হবে। পাড়া-মহল্লায়ও বিষয়টি দেখতে হবে। ওয়ার্ড পর্যায়ে হাট-বাজারে প্রতিনিধিদের মনিটরিং জোরদার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। প্রশাসনিকভাবে ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা মনিটরে যাবেন। মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। অনেক সময় মানুষ লজ্জা পেয়ে সচেতন হন। সবাই মিলে সচেতন হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারো করোনা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। দেশ থেকে একেবারে করোনা দূর হয়ে যায়নি। পরপর চার সপ্তাহ করোনা ফ্রি হয়নি। তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে শৈথিল্যতার কোনো অবকাশ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *