কারা এই আইএস-কে?

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


আইএস-কে, যার পুরো নাম ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স। তালেবান ও আল-কায়েদার মতো সংগঠনের ভিড়ে এই জিহাদি গোষ্ঠীটি এতদিন তেমন একটা পাত্তাই পাচ্ছিল না। তবে গত বৃহসপতিবার কাবুল বিমানবন্দরের ভয়াবহ হামলার পর এখন রাজনীতিক বা নিরাপত্তা কর্মকর্তাতো বটেই, বিশ্বজুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে এই আইএস-কে। আদর্শিক দিক থেকে তারা তালেবানের থেকেও বহুগুণ উগ্র। ইসলামের যে ব্যাখ্যা আইএস-কে প্রচার করছে সেই মত অনুযায়ী তারা তালেবানকে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করেছে। একইসঙ্গে তালেবান গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্রের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের হত্যাকে জায়েজ ঘোষণা করেছে আইএস-কে নেতারা।
এরই মধ্যে কাবুল বিমানবন্দরের হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শের অনুসারী এই জিহাদি গোষ্ঠীটি। আগে থেকেই এই হামলার বিষয়ে তথ্য ছিল পশ্চিমা গোয়েন্দাদের কাছে। তারপরও পুরো বিশ্বকে হতভম্ব করে দেয়ার মতো ভয়াবহ হামলা চালিয়ে নিজেদের শক্তির পরিচয় দিলো আইএস-কে।

ওই হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ নিহত হয়েছেন অন্তত ১১০ জন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আইএস-কে’র বিরুদ্ধে বদলা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু ইসলামিক স্টেটের নামধারী এই আইএস-কে আসলে কারা? আইএস বা ইসলামিক স্টেট হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি জিহাদি সংগঠন। এক সময় সংগঠনটি ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে আলাদা দেশের ঘোষণাও দিয়েছিল। তবে সে রাষ্ট্রের কোনো স্বীকৃতি ছিল না, পতনও ঘটে দ্রুতই। এখনো ইসলামিক স্টেট সক্রিয় রয়েছে তবে বিচ্ছিন্নভাবে। সেই ইসলামিক স্টেটের আদর্শের অনুসারী এই আইএস-কে। প্রাচীন খোরাসান এলাকায় সক্রিয় বলে নামের সঙ্গে অতিরিক্ত ‘কে’ জুড়ে দেয়া হয়েছে। এই খোরাসান এলাকাটি হচ্ছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের একাংশ নিয়ে গঠিত প্রাচীন একটি জনপদ।
বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে, আইএস-কে গোষ্ঠীর জন্ম ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। এর মূল ঘাঁটি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নানগারহারে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এই এলাকাটি মাদক ও মানুষ পাচারের জন্য কুখ্যাত। এর সদস্যরা মূলত আফগান ও পাকিস্তানি জিহাদি। আফগান তালেবান থেকে দলত্যাগী অনেকেই আইএস-কে?’তে যোগ দিয়েছে। তবে আফগানিস্তানের সাবেক সরকার এই জিহাদি গোষ্ঠীকে দমনে বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। সরকারের হাতে পর্যুদস্ত হওয়ার আগে এই সংগঠনের যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৩ হাজারেরও বেশি।
আদর্শগত দিক থেকে তালেবানের থেকেও কয়েকগুণ বেশি উগ্র এই আইএস-কে। এমনকি তারা আফগান তালেবানকে শত্রু বলে মনে করে। তাদের ইসলামী বিধানের তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মনে করে যে ‘মুরতাদ’ হিসেবে তালেবানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো ‘জায়েজ’। গত বছর ২৯শে ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের তালেবানের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয় আইএস-কে তার নিন্দা জানায় এবং বলে যে তারা আফগানিস্তানে তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে। এই গোষ্ঠী একইসঙ্গে তালেবানের আফগানিস্তান দখলকে নাকচ করে দিয়ে দাবি করে যে এক গোপন চুক্তির অংশ হিসেবে আমেরিকানরা আফগানিস্তানকে তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছে।
যদিও বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার জানিয়েছেন, তালেবানের সঙ্গে আইএস-কে’র এক ধরনের যোগাযোগ রয়েছে, বিশেষভাবে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। গবেষকদের উদ্ধৃত করে তিনি জানাচ্ছেন, আইএস-কে এবং হাক্কানি গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। আবার এই হাক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে রয়েছে তালেবানের সম্পর্ক। এর মধ্যে সাবেক সরকারের অভিযানের কারণে ২০১৯ সালে আইএস-কে সামরিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। পরের বছরই তাদের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে আফগান সরকার। যদিও সংগঠনটি এরপরে ক্রমশ আবারও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তালেবান যখন শান্তি আলোচনা করে যাচ্ছে তখনো একাধিক হামলা পরিচালনা করে আইএস-কে’র জিহাদিরা। গত বছরই আইএস-কে আফগানিস্তানে ২৪টি হামলা পরিচালনা করেছে। তাদের হামলার টার্গেট হয়েছে মেয়েদের স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি হাসপাতালের ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডও। এর জিহাদিরা গর্ভবতী নারীদেরও গুলি চালিয়েছে বলে বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে। ২০১৮ সালে একবার ইরানের মধ্যেও একটি হামলা চালায় তারা।
সাংগঠনিক দিক থেকে আইএস-কে শুরুতে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানকে নিয়ে গঠিত হলেও ২০১৯ সালের মে মাসে ইসলামিক স্টেট ‘পাকিস্তান প্রদেশ’ নামে স্বতন্ত্র একটি গোষ্ঠীর নাম ঘোষণা করে। আইএস-কে যাদের বিরুদ্ধে হামলা পরিচালনা করেছে তারা হলো আফগান সামরিক বাহিনী, আফগান রাজনীতিক, তালেবান, শিয়া মুসলমান ও শিখসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী, এবং সে দেশে কর্মরত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও আর ত্রাণ সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *