শুধুই কি ক্রিকেট কূটনীতি?

Slider জাতীয়

63741_f2

ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির সুখ্যাতি রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে ভারতের ক্রিকেটারদের অনেকবারই অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম বল মাঠে গড়ানোর আগেই খেলা শুরু করে দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তা কেইবা ভাবতে পেরেছিলেন? অনেকটা আকস্মিকভাবেই গতকাল দক্ষিণ এশিয়ার চার সরকার প্রধানকে টেলিফোন করেন নরেন্দ্র মোদি। কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে। নরেন্দ্র মোদি নিজেই এক টুইটে জানিয়েছেন এ টেলিসংলাপের কথা। শুভকামনা জানিয়েছেন দেশ চারটির ক্রিকেট দলের প্রতি। ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার এ চারটি দেশ অংশ নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে আজ শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদি ফোন করেন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতি শুভ কামনা জানান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের সাফল্য কামনা করেন। তবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্রিকেটের বাইরে আর কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন নয়াদিল্লি ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন ক্রিকেটের বাইরে অন্যান্য বিষয়েও এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, যখন ভারত-পাকিস্তান, ভারত-শ্রীলঙ্কা অথবা ভারত-বাংলাদেশের নেতারা কথা বলেন তখন তারা অন্যান্য বিষয়ে আলাপের সুযোগও কাজে লাগান। তবে ক্রিকেটই ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপ মাঠে গড়াচ্ছে। এখন আকাশে-বাতাসে শুধুই ক্রিকেট। কূটনীতি ছাপিয়ে এখন ক্রিকেটই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে গত দেড় মাস ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিরোধী জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এ সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় একশ’ মানুষ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা এরই মধ্যে এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। ভারতের পক্ষ থেকে এর আগে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার তাদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ফোনালাপ বাংলাদেশে অনেকের মধ্যেই ঔৎসুক্য তৈরি করেছে। বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতিতে তা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন। যদিও এর আগে একাধিক সূত্রে জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশের চলমান সঙ্কটে ভারত প্রকাশ্য কোন পক্ষে অবস্থান নেবে না। তবে জয়ীদের সঙ্গে কাজ করতে ভারতের কোন সমস্যা না থাকার কথা বলা হয়েছিল।
রোববার খুব সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। এর আগে টুইট বার্তায় ক্রিকেট কিভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জীবনকে একসূত্রে গেঁথেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখেছেন, ক্রিকেট আমাদের এ অঞ্চলের মানুষকে একসূত্রে গাঁথে। বন্ধুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। আশা করি সার্ক অঞ্চলের খেলোয়াড়েরা অনুরাগ-উদ্দীপনা নিয়ে খেলবে আর এ অঞ্চলে সাফল্য, সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে। ৫টি সার্ক দেশ এবারের বিশ্বকাপে খেলছে। আর আমরা বিশ্বকাপ নিয়ে শিহরিত। আমি নিশ্চিত বিশ্বকাপে খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার জয়জয়কার হবে। আর ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য তা হবে আনন্দের খোরাক।
ক্রিকেট কখনও কখনও নিছক একটি খেলা নয়। জীবনের উত্থান-পতন, রাজনীতি, রাষ্ট্র মূর্ত হয়ে ওঠে ক্রিকেটে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে পাকিস্তান কখনও ভারতকে হারাতে পারেনি। এবার পারবে কি-না তা জানা যাবে রোববার। তবে মাঠের বাইরের খেলায় একধাপ এগিয়েই থাকলেন নরেন্দ্র মোদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *