খালেদার কার্যালয়ে খাবার নিতে ফের বাধা

Slider জাতীয়

63738_f5

অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের খাবারের ভ্যান দ্বিতীয় দফায় ফিরিয়ে দিলো পুলিশ। গতকাল কার্যালয়ের গেট থেকে খাবারের ভ্যানটি গুলশান থানায় নিয়ে যায় তারা। এতে গত তিনদিন ধরে যৎসামান্য শুকনো খাবার ও পানি খেয়ে কোনরকম সময় পার করছেন কার্যালয়ের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। গতকাল দুপুর ১টার দিকে কার্যালয়ে ভেতরে অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি ভ্যানযোগে খাবারের প্যাকেট আসে। খাবারগুলো কার্যালয়ে প্রবেশ করাতে চাইলে বাধা দেয় কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় দায়িত্বরত এসবি’র একজন সদস্য বলেন, উপরের নির্দেশ রয়েছে- খাবারের ভ্যান প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। এসময় গেটের ভেতর থেকে এর প্রতিবাদ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার। পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, জেলাখানায় থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী কয়েদিদের তিন বেলা খাবার দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের খাবার প্রবেশ করাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়। এর কোন সদুত্তর না দিয়ে একজন পুলিশ সদস্য খাবার ভ্যানটি গুলশান থানায় নিয়ে যায়। এর আগে দুপুরে কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের বাসা থেকে কিছু শুকনা খাবার একটি ব্যাগে করে নিয়ে আসেন তার গৃহকর্মী জহুরুল হক। তবে পুলিশ ওই খাবারের ব্যাগ তল্লাশি করে তাকে প্রবেশের অনুমতি দেয়। খালেদার কার্যালয়ে সেলিমা রহমানসহ ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী এবং কার্যালয়ের কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মী মিলিয়ে অর্ধশতাধিক লোক রয়েছেন। পুলিশের বাধার কারণে খাবার নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন তারা। কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ তিনদফা খাবারের ভ্যান ফিরিয়ে দিয়েছে। গত তিনদিন শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, খেজুর, বিস্কুট খেয়ে পার করছি। কার্যালয়ে যে পানির জার ছিল সেটাও ফুরিয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল থেকে হয়তো লাইনের পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। কার্যালয়ে খাবার প্রবেশ করতে না দেয়ার বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন। এদিকে কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার শুকনো খাবার ও ফলমূল খেয়ে রাত যাপন করলেও পরিস্থিতি দেখে এখন কার্যালয়ের ভেতরে রান্না শুরু করেছেন তারা। তবে এত মানুষের খাবার এক সঙ্গে রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় দুই-তিন দফায় রান্না করা হচ্ছে বলে জানান তারা। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা কর্মীরা ভেতরে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। কাজের পালা শেষ করে তারা বাইরে গিয়ে খাবার খেয়ে নিচ্ছেন। এর আগে গত বুধবার রাতে দুদফা খাবার নিয়ে একটি ভ্যান খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে এলে পুলিশ তা ফিরিয়ে দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার খাবারের কোন ভ্যান আসেনি কার্যালয়ে। ওদিকে খাবারের ভ্যান ফিরিয়ে দেয়ার দেয়ার ব্যাপারে গুলশান জোনের উপ-কমিশনার লুৎফুল কবির জানান, এ ধরনের কোন তথ্য তার জানা নেই। এ ব্যাপারে তিনি কোন অভিযোগও পাননি।
এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশে পুলিশি কড়াকড়ি আরোপ ছিল। গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী। রাত পৌনে ৮টায় ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে যান তিনি। এসময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষার পর চলে যান তিনি। ফিরে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের নাসরিন সিদ্দিকী বলেন, চলমান সঙ্কট নিরসনে দুই নেত্রীর সংলাপের দাবিতে আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অনশন করছেন। তাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। গত বুধবার রাত থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। এমনকি সাংবাদিকদেরও তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ৩রা জানুয়ারির পর থেকে প্রথমে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যারিকেডের কারণে এবং পরে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার জন্য তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি ছাড়াও তার ছোট ভাই সাঈদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দারের স্ত্রীরা মাঝে মধ্যে খাবার নিয়ে যান। এর আগে গত ৩০শে জানুয়ারি কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, টেলিফোন, কেবল টিভি, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় সরকার। ১৯ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎসংযোগ দেয়া হলেও অন্যগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের আশপাশে কয়েকটি বিদেশী দূতাবাসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বিকালে সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *