অনার্স পরীক্ষার ফল নিয়ে বিক্ষোভ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ

Slider শিক্ষা

বাংলাদেশের গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। একইসাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে তালা দিয়ে রেখেন বিক্ষুব্ধরা। এতে বুধবার সকাল থেকেই অবরুদ্ধে হয়ে আছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিক্ষোভকারীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দেশের বিভিন্ন কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার যে ফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে বড় ধরনের গরমিল হয়েছে।

অনার্স পরীক্ষার এ ফল কোরবানি ঈদের আগের রাতে অর্থাৎ ২০ জুলাই প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যাতে পাসের হার ৭২ ভাগ।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেছেন, এ বিক্ষোভ অযৌক্তিক। কারণ পরীক্ষার খাতা দেখা বা নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। তিনি আরো বলেন, খাতা দেখেন শিক্ষকরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র সেই নম্বর নিয়ে ফল প্রকাশ করে। আর যেই ফল নিয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে সেই ফলে ৭২ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এরপরও কেউ আবেদন করলে তার খাতা পুন:নিরীক্ষণ অর্থাৎ শিক্ষক যে নম্বর দিয়েছেন, তা ঠিক মতো টেবুলেশন শিটে এসেছে কি-না তা চেক করা যেতে পারে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করে না। বরং এর অধিভুক্ত কলেজ, প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান ও ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। কলেজের অনুমোদন দেয়া, পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করা, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের মতো কাজগুলো এ প্রতিষ্ঠানের হাতে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করলেও পরীক্ষার খাতা দেখে নম্বর দিয়ে থাকেন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই। তবে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা মনে করেন- তাদের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্টে কোনো কোনো বিষয়ে বেশি করে ফেল দেখানো হয়েছে, যা অস্বাভাবিক। এ কারণেই এটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে নতুন করে পরীক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন তারা।

যদিও ভিসি বলেছেন, অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। তাদের পাস করানোর জন্য পরীক্ষা আয়োজনের কোনো নিয়ম বা সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। বরং তাদের উচিত ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে ওই বিষয়ে আবারো পরীক্ষা দেয়া।

গেটে তালা, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
রংপুর কারমাইকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের আল আজাদ শামসুদ্দিনও বিক্ষোভ করছেন অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে। তিনি বলছেন, তার বিভাগে ১৯৩ জনের মধ্যে ১১৫ জন অকৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ জনই ব্যাংক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ফেল করেছেন।

তিনি বলেনম, আমার কথাই ধরুন। ভাইবাসহ ১০টির মধ্যে একটিতে ফেল করলাম আর বাকি সব বিষয়ে আমার প্রথম শ্রেণী পাওয়ার নম্বর আছে। আবার দেখেন সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ভাইবা শেষ হওয়ার তারিখ ছিল ১৯ জুলাই। আর রেজাল্ট হলো ২০ জুলাই। সারাদেশের রেজাল্ট একদিনে সমন্বয় করে প্রকাশ করা সম্ভব? অর্থাৎ কোথাও না কোথাও একটা গরমিল হয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে তারা আগেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছিলেন। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত তারা পাননি।

রংপুর বদরগঞ্জ কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মুজাহিদুল হক বলছেন, অকৃতকার্য মোট ৬০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থী শুধু একটি মাত্র বিষয়ে ফেল করেছে, যা কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে না।

মুজাহিদুল হক বলেন, ম্যানেজমেন্টে আমাদের কলেজে ৫০ জনের বেশি ফেল করেছে। এটা হতেই পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটু নিরীক্ষা করলেও ভুলগুলো পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনছেন না।

ভিসি মশিউর রহমান বলছেন, বিষয়গুলো নিয়ে তারা শিক্ষকদের অনেকের সাথে কথা বলেছেন। শিক্ষকরা আমাদের জানিয়েছেন যে তারা খাতায় যা দেখেছেন তার ভিত্তিতেই নম্বর দিয়েছেন। আর তিনের দুই ভাগ পরীক্ষার্থীর কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই। তারা বরং খুশি যে এবার ঈদের আগেই তারা ফল পেয়েছেন।

ভিসি মশিউর রহমান বলেন, এখানে ব্যক্তিগত আক্রোশের কোনো সুযোগ নেই। আর প্রতিবছরই কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন, যারা পরে আবার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বা দফতর আটকিয়ে তো পাস করা যাবে না। খাতায় না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে পাস করাতে পারে না।

ওদিকে বিষয়গুলো নিয়ে কলেজ পর্যায়ের কোনো শিক্ষক মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন শিক্ষক বলেছেন, এখন তো কে কার খাতা দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। তারপরও দু-একজনের ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। কিন্তু গণহারে ভুল হওয়ার সুযোগ নেই।

যদিও শিক্ষার্থীরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার খাতা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্ব সহকারে না দেখার অভিযোগ আছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। তারা মনে করেন, এবারের রেজাল্টের ক্ষেত্রেও সেটি হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *