টালমাটাল শোবিজ দুনিয়া

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


পুরো পৃথিবীটাই কেমন যেন বদলে গেছে। অদৃশ্য এক ভাইরাস থমকে দিয়েছে সবকিছু। করোনার প্রকোপে অন্যান্য সব খাতের মতো মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশ্ব শোবিজ অঙ্গনও। সিনেমা হল বন্ধ আর শুটিং স্থগিতের কারণে এরই মধ্যে এই অঙ্গনে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এসবের মধ্যেই বর্তমানে প্রকাশ্যে আসছে মাদক আর পর্নোগ্রাফির সঙ্গে তারকাদের সম্পৃক্ততা। কথিত মডেল পিয়াসা-মৌ থেকে শুরু করে জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি-শিল্পা শেঠিদের নামও এসেছে তালিকায়। সবমিলিয়ে টালমাটাল শোবিজ দুনিয়া।

গত ১ আগস্ট রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা এবং মোহাম্মদপুর থেকে মরিয়ম আক্তার মৌকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাত ১০টার পর পৃথক অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্যাদিসহ তাদের আটক করা হয়। দুজনকে গণমাধ্যমে মডেল হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ায় বিব্রত হয় অভিনয়শিল্পী সংঘ।

তারা দাবি করেন, মূল ধারার মডেলিং বা অভিনয়ের সঙ্গে এই দুজনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এমন ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং ব্যক্তিগতভাবে নাট্য অঙ্গনের মানুষদের নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। এ নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত একটি বিবৃতিতে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।

পিয়াসা-মৌকে গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় গত বুধবার ‘নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ’-এর ভিত্তিতে হালের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনিকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সেখান থেকে তাকে র‌্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

এর আগে বুধবার বিকালে র‌্যাবের একটি দল পরীমনির বাসায় অভিযান চালায়। এ সময় ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ফেসবুকে লাইভে আসেন পরীমনি। লাইভে তিনি বলেন, দিনদুপুরে কে বা কারা তার বাসায় আক্রমণ করেছে। পরী থানাপুলিশ, ডিবির কর্মকর্তা ও তার পরিচিতজনদের কাছে ফোন করে তাকে বাঁচানোর আহ্বান জানান। র‌্যাব সদস্যরা বারবার পরিচয় দিলেও ভেতর থেকে দরজা খুলছিলেন না।

পরে বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে দরজা খুলে দেওয়া হলে র?্যাব সদস্যরা ভেতরে ঢোকেন; শুরু হয় তল্লাশি। একপর্যায়ে পরীমনিকে আটক করা হয়। অভিযান শেষে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়- পরীমনির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণে ওয়াইন, আইস, এলএসডি ও মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বনানীতে পরীর বন্ধু প্রযোজক-অভিনেতা নজরুল রাজের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকেও আটক করা হয়। অভিযানে তার বাসা থেকে মাদক ও সিসা সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করে র‌্যাব। একই ভবনে তার অফিস থেকে পাওয়া যায় বিকৃত যৌনাচার সম্পর্কিত বিভিন্ন সিডি।

বলিউডে মাদককা- নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় গত বছর। অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতে মাদকযোগের সম্পৃক্ততার খবর প্রকাশ্যে আসার পরই তার প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করা হয়। টানা তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর মাদকের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো।

একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় রিয়ার ভাই শৌভিককেও। সেই ধারাবাহিকতায় একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপিকা পাড়–কোন, শ্রদ্ধা কাপুর, সারা আলি খান ও রাকুল প্রীত সিংকে। তবে বিটাউনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পর্নো কেলেঙ্কারি। পর্নো ছবি বানিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে শিল্পা শেঠির স্বামী ভারতীয় ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রাকে গত ১৯ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ।

স্বামীর এই ব্যবসায়ের সঙ্গে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী কোনোভাবে জড়িত কিনা, তা ক্রাইম ব্রাঞ্চ খতিয়ে দেখছে। সম্প্রতি শিল্পাকে তারা ছয় ঘণ্টার মতো জিজ্ঞাসাবাদ করে। এই দম্পতিকে পাশাপাশি বসিয়ে জেরা করা হয়। সেখান থেকে ক্রাইম ব্রাঞ্চ জানতে পারে যে, শিল্পা ‘ভিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর নির্দেশকের পদে নিযুক্ত ছিলেন।

রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ করেছেন বলিউড অভিনেত্রী শার্লিন চোপড়া। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজকে নিয়ে নানান তথ্য ফাঁস করেছেন। মুম্বাই পুলিশের অনুমান, পর্নোগ্রাফি মামলায় শার্লিন আরও অনেক তথ্য দিতে পারেন। তাই অভিনেত্রীকে সমন পাঠিয়েছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। একটি মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে।

রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, তার ছত্রছায়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও চলত পর্নোছবি তৈরির কাজ। মুম্বাই পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় গোপন অভিযানে নেমেছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাক্সফোর্স। সম্প্রতি নিউটাউন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মডেল-অভিনেত্রী নন্দিতা দত্তকে। তার জবানবন্দির ভিত্তিতে আটক করা হয় আরও বেশ কয়েকজনকে। এদের মধ্যে রয়েছেন উঠতি পরিচালক মৈনাক ঘোষও।

রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে মডেলদের দিয়ে জোর করে পর্নোছবি তৈরির মতো অভিযোগ যখন জোরালো হচ্ছে, তখন শুধু মুম্বাইতেই নয়, গোটা দেশে এর জাল ছড়িয়ে থাকারও তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, লকডাউনের কারণে এক শ্রেণির মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এদের কিছু অংশ এ ধরনের অনৈতিক পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন, যা সমাজের চরম অবক্ষয়ের বড় কারণ।

এদিকে গতকাল পান্থপথ থেকে চয়নিকা চৌধুরীকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে শোবিজে আলোচনার ঝড় বইছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *