সড়কে বাড়ছে মানুষ, হাসপাতালে রোগী

Slider জাতীয়

ঢাকাঃ; করোনায় কাবু পুরো দেশ। কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পর এখন সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। ঈদ সামনে রেখে বিধিনিষেধ শিথিল করায় মানুষ ছুটছে যার যার গন্তব্যে। এই অবস্থায় সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে- এমনটা আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে ঈদের পর আবার আরও কঠোর লকডাউন দেয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখন সংক্রমণ বেড়ে গেলে সামনে লকডাউন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কিনা এটি একটি বড় প্রশ্ন। চলমান অবস্থায় সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই অবস্থা।

সামনে রোগী বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগী। অনেক হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য আসন খালি নেই।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীর ১৬টি সরকারি হাসপাতালে কোভিড জেনারেল ৫৭৫৫টি সিটের মধ্যে খালি আছে ১২১১টি। সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের ১৬৭৭৭টি করোনা রোগীদের জন্য শয্যা থাকলেও সেখানে খালি আছে ৫ হাজার ৩শ’ ৬১টি। অর্থাৎ দুই তৃতীয়ংশ রোগী হাসপাতলে ভর্তি রয়েছে। ঢাকার অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে সিট খালি নেই। কিছু সিট থাকলেও খালি নেই আইসিইউ। সংকটাপন্ন রোগীর জন্য আইসিইউ’র ব্যবস্থা নেই এমন শর্ত মেনেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে।
দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মুখে হঠাৎ কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়া ঈদের মুহূর্তে সংক্রমণ রেকর্ড ছড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা। তারা বলছেন, গত ঈদের সময় মানুষ ভিড় ঠেলে ঢাকা থেকে সারা দেশে গেছে। ফলাফল হিসেবে ঈদের পর থেকেই সংক্রমণ বেড়েছে। এতে সারা দেশ ছড়িয়েছে করোনা। এর মধ্যে কোরবানির মুহূর্তে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এদিকে গতকালও বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ দেখা গেছে রাজধানীর বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশনে ও সদরঘাটে। সকাল থেকেই ভিড় করেছেন যাত্রীরা। কাউন্টারগুলোয় টিকিটের খোঁজ করছেন কেউ কেউ। অনেকে বাসের টিকিট না পেয়ে বিকল্প পথে ভোগান্তি নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। তবে কোথাও কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।
শনিবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশ মুখ, সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী ও গণপরিবহনের চাপ বেড়েছে। তীব্র যানজট দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনের চাপ সামাল দিতে না পেরে শুক্রবার রাত থেকে কয়েক দফায় টোল আদায় বন্ধ রাখেন সেতু কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যানজট দেখা গেছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে দেখা গেছে তীব্র যানজট। ফেরিঘাটে আসার সঙ্গে সঙ্গে যে যেভাবে পারছেন স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যাতায়াত করছেন।
পারভেজ নামের এক যাত্রী বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও দেশে যেতাম না। সরকারই যাত্রীদেরকে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। সড়কে কতো ভোগান্তি, যারা যাওয়া আসা করে তারাই বোঝে। বেশি মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এতো মানুষের মধ্যে কে কখন করোনায় আক্রান্ত হয় কেউ জানে না। সবাই করোনা থেকে বাঁচতে চায়, আবার স্বাস্থ্যবিধিও মানেন না। তাহলে করোনা কমবে কীভাবে?
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি চরম উপেক্ষিত হচ্ছে ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোয়। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় ভোররাত থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় থাকবে সদরঘাটে। লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগে এসে অনেকই অপেক্ষা করছেন পন্টুনে। এতে পন্টুন কানায় কানায় পূর্ণ থাকছে সব সময়ই। লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না কেউ। ভেতরে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরা তো দূরের কথা, লঞ্চের প্রবেশ মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করতেও দেখা যায়নি। অন্যান্য ঈদের মতো এবারও যাত্রী বোঝাই করে সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশনা মানতে অনীহা দেখাচ্ছেন। এতে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে- এমনটাই বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালে মাইকে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সর্তকতা মূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। পল্টুনে সারি সারি লঞ্চ। স্টাফরা বিভিন্ন জায়গার নাম ধরে যাত্রী ডেকে তুলছেন। কয়েকজন হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তা ছিটানো হচ্ছে না। যাত্রীরা মাস্ক না পরেই উঠছেন লঞ্চে। ভিতরে ডেকে প্রায় গা ঘেঁষে বসে আছেন যাত্রী। কেউ বসে, কেউ বা শুয়ে থাকছেন। কোথাও নেই ফাঁকা জায়গা।
সোহেল নামের এক যাত্রী বলেন, লঞ্চে যত যাত্রী নেয়ার কথা তার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি যাত্রী উঠানো হয়েছে। তবুও ছাড়ে না। ডেকে ডেকে আরও যাত্রী উঠানো হচ্ছে। ভিতরে মানুষ গাদাগাদি করে বসছে। একজন আরেকজনের গায়ের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হবে কী করে। মাইকে স্বাস্থ্যবিধির কথা যারা বলছেন, তারা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে চলছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম লঞ্চ। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর লঞ্চে যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে যেখানে দৈনিক ৮০ থেকে ৮৫টি লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যেতো। যাত্রীদের চাপ এখন বেশি থাকায় সেখানে শতাধিক লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *