গাজীপুরঃ মৌসুমী যানজট রাস্তার পাশে একটু খালি জায়গা পেলেই ছোট বড় গরুর হাট। মহাসড়কের সাথে সম্পুরক সড়ক কিংবা আঞ্চলিক সড়কেও বসছে গরুর হাট। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত এ সকল গরুর হাটের প্রচারণা এখন তুঙ্গে। প্রচারণার তোরণ এত বেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যে, খোদ থানার সামনেই কোরবানির পশুর হাটের বিশাল তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে মানুষ বিপদে পড়ে না কোরবানির পশু কিনতে থানায় ঢুকছে বুঝা মুশকিল।
এমনও তথ্য রয়েছে যে, গতকাল থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু লোকজন থানায় গিয়ে কুরবানির পশুর বাজার খোঁজছে। এতে বিব্রত পুলিশ। কোরবানির বাজার ও থানা তোরনের কারনে একই স্থানে অবস্থান করছে মর্মে প্রচারনায় মনে হয় ।ঢাকা ময়মনসিংহ, ঢাকা টাঙ্গাইল, ঢাকা নরসিংদী ও ঢাকা কিশেরাগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গরুর হাট বসে গেছে। সালনা গাজীপুর সড়কও বসেছে পশুর হাট । একই ধরনের অবস্থা গাজীপুর মহানগর সহ পুরো জেলায়। এতে সৃষ্টি হয়েছে কৃত্তিম যানজট।
ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ। কোরবানির জন্য পশু কিনতে হবে। এজন্য এলাকার মানুষ যাচ্ছেন পশুর হাটে। কিন্তু তোরণ দেখে ভেতরে ঢোকার কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারছেন তারা আসলে থানায় এসেছেন, পশুর হাটে নয়। বিব্রতকর এমন পরিস্থিতি গাজীপুরের টঙ্গী মেঘনা এলাকায় পশুর হাটকে ঘিরে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে টঙ্গীর মেঘনা রোডে ১ কিলোমিটার সড়কজুড়ে বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত হাট এটি। এই হাটে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রবেশ পথে টানানো হয়েছে একাধিক তোরণ। এর মধ্যে একটি তোরণ টানানো হয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গী-কালিগঞ্জ সড়কের স্টেশন রোড এলাকায় অবস্থিত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পূর্ব থানা কমপ্লেক্স। মূল সড়ক থেকে ৩০ ফিট দূরেই থানা কমপ্লেক্সের অবস্থান। থানায় প্রবেশের পথেই বাঁশের তৈরি একটি বিশাল তোরণ টানানো হয়েছে। হাটের নির্ধারিত স্থানের বাইরে টানানো হয়েছে তোরণটি। তোরণের ব্যানারে লেখা রয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত গরু ছাগলের বিরাট হাট। তবে ব্যানারে হাটের ইজারাদারের কোনো নাম উল্লেখ নেই। আর এই তোরণের নিচ দিয়েই থানায় প্রবেশ করতে হয় থানা পুলিশ কর্মকর্তাদের গাড়ি ও আগত সেবা প্রত্যাশীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হাটের নির্ধারিত স্থানের বাইরে তোরণ টানানো হয়েছে। এই তোরণের নিচ দিয়ে প্রতিনিয়ত থানায় প্রবেশ করতে হচ্ছে। অনেকেই তোরণ দেখে ভুলপথে হাট ভেবে থানায় প্রবেশ করছে। পরক্ষণেই তারা ভুল বুঝতে পেরে রাস্তা পরিবর্তন করে হাটে প্রবেশ করছেন। হাটের তোরণটি ভুল জায়গায় বসানোর কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, থানার পাশ ঘেঁষেই হাটের স্থান নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন। কর্তৃপক্ষই তোরণ নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে আমাদের কী করার আছে। তবুও আমরা বিষয়টা নিয়ে হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি টঙ্গী) পিযুষ কুমার দে বলেন, এ বিষয়টি ওসিকে দেখভাল করতে নির্দেশ দিয়েছি।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাটের ইজারাদার নির্ধারণ করা হয়নি। এর ফলে হাট ইজারা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধুম্রজাল। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে ইজারাদার নির্ধারণ না হওয়ায় হাসিল আদায় নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাটের দায়িত্বে থাকা ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে আমরা হাট প্রস্তুত করেছি। মৌখিকভাবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে হাটের ইজারা দেয়া হয়েছে। তবে এখনও লিখিত কোনো কাগজ দেয়া হয়নি। শুক্রবার সকালে ইজারার কাগজ হাতে পাবো বলে আশাবাদী।
থানার সামনে হাটের তোরণ টানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছরই ওই জায়গায় হাটের তোরণ টানানো হয়। তাই এবছরও সেখানে তোরণ টানানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের টঙ্গী জোনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সোহরাব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, হাট ইজারার বিষয়টি মেয়র মহোদয় জানেন। আমি এ বিষয়ে জানি না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফোনে বার্তা পাঠিয়েও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধান বলছে, ঈদ যুগে বাড়িফেরা মানুষের ঢল অতিমাত্রা যানজট তৈরি করে। স্বাভাবিক সড়কেই গণপরিবহণ যানজট সৃষ্টি করে। এর সাথে ভাঙ্গাচুরা রাস্তা গণপরিবহনের এলোমেলো যাতয়াত সড়কে কুরবানির হাট সবমিলে ঈদ যানজট এখন বড় সমস্যা। এই সমস্যা রাজধানী ঢাকা আব্দুল্লাহপুর পয়েন্ট থেকে ৫৯টি রুটেই ।
এদিকে, অতিমারি করোনা সংক্রমন ও মৃত্যু যেভাবে বাড়ছে, জনসমাগম এভাবে বাড়তে থাকলে প্রশাসনের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঈদের আগে ভারী বর্ষনের সম্ভাবনাও আছে। যদি বৃষ্টিপাত হয় তবে সবমিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি ঘরমুখো মানুষ ও জনস্বাস্থ্যের প্রতিকূলে চলে যাবে।
নগরবাসী বলছেন, শিথিল হওয়া বিধি নিষেধের পুন:বিবেচনা না করলে ঈদকে ঘিরে বাংলাদেশে সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি আশঙ্কা বিদ্যমান।
(চলবে….)